সারাদেশ

ধনিয়ায় বাবাও শিশু সন্তানসহ ৬ জন গুলিবিদ্ধ

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনজন হারানোর কষ্ট আমার চেয়ে আর কে জানে। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল। আমি এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। যা ঘটেছে তা কাম্য ছিল না। যাদের উসকানিতে সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে তা বের করা হবে।

বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, যা ঘটেছে তা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। এটা কোনোভাবে কাম্য ছিল না। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারের জন্য জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে করা হবে। তাদের যে সহযোগিতা দরকার, তা আমি করবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মহল কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। যাদের উসকানিতে সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছে, তা বের করা হবে।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কোনো সংযোগ নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীরা আন্দোলেনের মধ্যে ঢুকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। যারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের ন্যায় বিচার করা হবে। সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন সরকার প্রধান।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার বিশ্বাস, ছাত্রসমাজ উচ্চ আদালত থেকে ন্যায় বিচারই পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না। আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতকারীদের সুযোগ করে দেবে না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আপিলে আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে আদালত তা শোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ অত্যন্ত বেদনা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের আত্মসামাজিক উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা করে জনগণকে উন্নত জীবনযাত্রা দিতে শুরু করেছি। অনেক সাফল্য অর্জন করেছি। বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে একটা মর্যাদার আসনে আসীন করতে সক্ষম হয়েছি। তারপর আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখন স্বস্তি-শান্তিতে ফিরে, তখন তাদের মাঝে এমন কোনো ঘটনা ঘটে যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে একটা পরিপত্র জারি করে সরকার। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে উচ্চ আদালত ২০১৮ সালের জারি করা সরকারি পরিপত্র বাতিল করে দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। আদালত শুনানির দিন ধার্য করেন। এ সময় ছাত্ররা কোটা বাতিলের দাবি নিয়ে আবারও আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহশীলতার পরিদর্শন করেছে।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ সহযোগিতা করেছে। রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি প্রদানের ইচ্ছাপোষণ করে সেক্ষেত্রে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়। নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলোতে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।

এর আগে বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কে এম সাখাওয়াত মুন জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রসঙ্গত, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন গতকাল মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বেশ সহিংস রূপ নেয়। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সারা দেশের স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *