আন্তর্জাতিক

অনুমতি ছাড়াই আন্দোলনে নিহত সাজ্জাতের মৃত্যুতে ছাত্রদল নেতার মামলা

ডেস্ক রিপোর্ট: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী সাজ্জাত হোসেন সজলের মৃত্যুতে পরিবারের অনুমতি ছাড়াই মামলা দায়ের করেছেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার এক ছাত্রদল নেতা। তবে, এই মামলার খবরে হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

পরিবারের দাবি, মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা। লিখিত তো নয়ই, মামলার জন্য মৌখিকভাবেও কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। ব্যক্তিগত এমন মামলায় ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কাও করছেন পরিবারটি।

এর আগে, গত ২৮ আগস্ট নিহত সজলের পরিবারের অনুমতি ছাড়াই ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মো. মিজানুর রহমান মৃদুল বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মৃদুল সাঘাটা উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সাজ্জাত হোসেন সজল। তিনি আশুলিয়ার সিটি ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসসি) প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

মামলা প্রসঙ্গে নিহত সাজ্জাত হোসেন সজলের মা শাহিনা বেগমের অভিযোগ, মামলা দায়েরের বিষয়ে তাদেরকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। নেওয়া হয়নি কোনো অনুমতি। এমনকি মামলার পরেও তাদেরকে বিষয়টি জানানো হয়নি।

শাহিনা বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার ছেলে কোনো দলের রাজনীতি করতো না। মামলার বাদি আমাদের কেউ নয়, আত্মীয়ও হয় না । তারপরও কেন ওই ছেলে (মৃদুল) অনুমতি ছাড়া মামলা করলো তা আমার বুঝে আসে না! ওই ছেলে (মৃদুল) বিএনপি দলের নাম করে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়িতে আসছিলো। আমাদেরকে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে ছবি তুলেছিলো এবং সজলের কাগজপত্র (মৃত্যু সার্টিফিকেট, আইডি কার্ড, ছবি) চেয়েছিলো। কিন্তু আমরা দেয়নি। ওই সময় মৃদুলের কথা-বার্তায় মামলার বিষয়টি বুঝতে পেরে আমরা তাকে জানিয়েছিলাম আমরা ব্যক্তিগত বা কোনো দলের হয়ে মামলা করবো না।

এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাজ্জাতের শহীদী সম্মান নষ্ট করার জন্য এসব করা হচ্ছে। আমি আমার ছেলের মৃত্যুকে কোনো দলের কাছে বিক্রি করতে চাই না। আমার ছেলের মৃত্যু নিয়ে কেউ ব্যবসা করবে, অপরাজনীতি করবে তা হতে পারে না। আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করতো না। দেশের মানুষের জন্য আমার ছেলে জীবন দিয়ে শহীদ হয়েছে। আমি একজন শহীদের মা হিসেবে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি চাই।

এক প্রশ্নের জবাবে শাহিনা বেগম বলেন, মামলা করলে আমরা করবো। সেখানে কোনো দলের নেতা কেন মামলা করবে? আমরা অবশ্যই মামলা করবো, তবে সেটি ব্যক্তিগত নয়। আমরা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করে সারাদেশের শহীদদের বিচার চাইবো।

মো. মিজানুর রহমান মৃদুল মামলায় নামীয় ২০ জন আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ জনকে। আসামিদের মধ্যে রয়েছে ফনিক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এজিএম নাসিরসহ চারজন শিল্পপতির নাম। গাইবান্ধার তিনজন সংসদ সদস্য, সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোনারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাসিরুল আলম স্বপন, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সেক্রেটারি আল মামুনেরও নাম রয়েছে মামলায়। এছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তৎকালীন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাঘাটার সমন্বয়ক শুভ বলেন, অনুমতি না নিয়ে মামলা করার বিষয়টি তিনি ঠিক করেননি। ছাত্র আন্দোলনে সজল শহীদ হয়েছেন দেশের মানুষের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করার জন্য। নিরাপরাধ মানুষ মামলা দিয়ে হয়রানি করতে নয়। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি তিনি সময় নিয়েছেন।

এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোহাম্মদ আলী হাজী বলেন, সেরকম কোনো সিদ্ধান্তে মামলাটি হয়নি। আমাকে মৃদুল ঢাকায় গিয়ে হঠাৎ ফোন করে মামলা করার বিষয়টি বলে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছেলে-পেলে কাউকে মানে না, নিজেরাই অতি উৎসাহী হয়ে এসব কাজ করে থাকে। কাকে আসামি করেছে, কাকে আসামি করেনি বা কেন করেনি বিষয়টি আমার জানা নেই। মৃদুলই বলতে পারবে।

গাইবান্ধা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান তারেক বলেন, ওই মামলার বিষয়ে আমাদেরকে জানানো হয়নি। জেলার দলীয় কোনো সিদ্ধান্তে মামলাটি হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনুমতি না নিয়ে এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলাটি হয়ে থাকলে আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে বিষয়টি জানাবো। তারা অবশ্যই সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন্নবী টিটুল মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, মামলার বিষয়টি আমি জানি না। অবগত বলতে আমি মামলা হওয়ার পর জেনেছি।

অনুমতি না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূল জিনিস হলো যে কোনো লোক হত্যা হলে তার বিচার চাওয়া তো অধিকার। বাণিজ্যের বিষয়টি এখানে আলোচ্য বিষয় নয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদি মিজানুর রহমান মোবাইল ফোনে বলেন, আমাকে তারা কাগজপত্র সবই দিয়েছে। এখন যদি অস্বীকার করে কি আর করার আছে? আমি চেয়েছিলাম প্রকৃত দোষীরা শাস্তি হোক।

চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে মামলা প্রশ্নে তিনি বলেন, লোভ-লালসা আমার নেই। অনেক কষ্টে ক্যারিয়ার গড়েছি। আমি কিভাবে তাদেরকে (শিল্পপতিদের) চিনবো। আমি অজোপাড়া গাঁয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের উকিলের কাছে আরেক উকিল এসে মামলাটি কুক্ষিগত করতে কিছু নাম ঢুকিয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *