সারাদেশ

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১১৮

ডেস্ক রিপোর্ট: ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতের পরপরই সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও থানায় চালানো হয় হামলা। করা হয় লুটপাট, ছিনিয়ে নেয়া হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

এ ঘটনায় সারাদেশের থানা থেকে লুট হয় ৫ হাজার ৮১৮ টি অস্ত্র। লুন্ঠিত অস্ত্র ফিরিয়ে দিতে নির্ধারণ করে দেয়া হয় নির্দিষ্ট সময়সীমা। তবে সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছে ১ হাজার ৮৮৫টি অস্ত্র। একই সঙ্গে নিখোঁজের তালিকায় রয়েছে প্রায় ৩ লাখ বিভিন্ন বোরের গুলি।

এদিকে গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। এই সময়ের মধ্যে বৈধ অস্ত্রও জমা না দিলে সেগুলোও অবৈধ হবে বলে জানানো হয়।

তবে বৈধ এবং অবৈধ সকল ধরনের অস্ত্র জমা দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কি পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা পরেছে সঠিক সেই তথ্য দিতে পারছে না বাংলাদেশ পুলিশ হেড কোয়াটার্স। একই সঙ্গে অবৈধ সকল অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হলেও অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের সঠিক তথ্য জানা যায়নি।

এদিকে পুলিশ সদর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে থানা পুলিশের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে লুট হওয়া অস্ত্রের তালিকা তৈরি করতে সবাইকে নির্দেশনা দেয় পুলিশ। দেশের প্রায় চার শতাধিক থানায় হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুট হওয়ার কারণে বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ নথি বেহাত হয়ে যায়।

পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ি, গতকাল ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লুট হওয়া অস্ত্রের প্রস্তুতকৃত তালিকায় হারানো অস্ত্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৮১৮টি। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজার ৯৩৩টি। এখনও উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৮৮৫টি।

লুট হওয়া ও উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে-

৭.৬২ * ৩৯ মি.মি রাইফেল – (চায়না) = লুট হয়েছে ১১৩৫টি, উদ্ধার হয়েছে ৮৩৯টি, নিখোঁজ ২৯৬টি।

৭.৬২ * ৩৯ মি.মি রাইফেল – টি ০৮ (বিডি) = লুট হয়েছে ১০টি, উদ্ধার হয়েছে ৯টি, নিখোঁজ ১টি।

৭.৬২ * ৩৯ মি.মি এসএমজি -টি ৫৬ (চায়না) = লুট হয়েছে ২৫১টি, উদ্ধার হয়েছে ১৯১টি, নিখোঁজ ৬০টি।

৭.৬২ * ৩৯ মি.মি এলএমজি – টি ৫৬ (চায়না) = লুট হয়েছে ৩২টি, উদ্ধার হয়েছে ২১টি, নিখোঁজ ১১টি।

৭.৬২ * ২৫ মি.মি পিস্তল – টি ৫৪ (চায়না) = লুট হয়েছে ৪৪২টি, উদ্ধার হয়েছে ২৭০টি, নিখোঁজ ১৭২টি।

৯ * ১৯ মি.মি পিস্তল = লুট হয়েছে ১১১৮টি, উদ্ধার হয়েছে ৪৬১টি, নিখোঁজ ৬৫৩টি।

৯* ১৯ মি.মি এসএমজি /এসএমটি = লুট হয়েছে ৩৩টি, উদ্ধার হয়েছে ৩২টি, নিখোঁজ ১টি।

১২ বোর শটগান = লুট হয়েছে ২১৯১টি, উদ্ধার হয়েছে ১৬২৪টি, নিখোঁজ ৫৬৭টি।

৩৮ মি.মি গ্যাস গান- ( সিঙ্গেল শট) = লুট হয়েছে ৫৯৩টি, উদ্ধার হয়েছে ৪৭৬টি, নিখোঁজ ১১৭টি।

৩৮ মি.মি টিয়ার গ্যাস লাঞ্চার – ( সিক্স শট) = লুট হয়েছে ১৪টি, উদ্ধার হয়েছে ৯টি, নিখোঁজ ৫টি।

২৬ মি.মি সিগন্যাল পিস্তল = লুট হয়েছে ৩টি, উদ্ধার হয়েছে ১টি, নিখোঁজ ২টি।

লুট হওয়া ও উদ্ধার হওয়া গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে-

বিভিন্ন বোরের গুলি = লুট হয়েছে ৬০৭২৬২টি, উদ্ধার হয়েছে ৩১২৮৫৭টি, নিখোঁজ ২৯৪৪০৫টি।

বিভিন্ন ধরনের টিয়ারগ্যাস সেল= লুট হয়েছে ৩২০০৫টি, উদ্ধার হয়েছে ২৩১৯৪টি, নিখোঁজ ৮৮১১টি।

বিভিন্ন ধরনের টিয়ারগ্যাস গ্রেনেড = লুট হয়েছে ১৪৫৫টি, উদ্ধার হয়েছে ৭০৪টি, নিখোঁজ ৭৫১টি।

সাউন্ড গ্রেনেড = লুট হয়েছে ৪৬৯২টি, উদ্ধার হয়েছে ২১২৮টি, নিখোঁজ ২৫৬৪টি।

কালার স্মোক গ্রেনেড = লুট হয়েছে ২৯০টি, উদ্ধার হয়েছে ২১৩টি, নিখোঁজ ৭৭ টি

সেভেন/ মাল্টিপল ব্যাং স্টান গ্রেনেড = লুট হয়েছে ৫৫ টি, উদ্ধার হয়েছে ১৮টি, নিখোঁজ ৩৭ ।।

ফ্লাস ব্যাং/ ৬ ব্যাং গ্রেনেড = লুট হয়েছে ৮৯৩টি, উদ্ধার হয়েছে ৫৩৩টি, নিখোঁজ ৩৬০টি।

হ্যান্ড হেল্ড টিয়ার গ্যাস স্প্রে (ক্যানিস্টার)= লুট হয়েছে ১৭৭টি, উদ্ধার হয়েছে ৯৪টি নিখোঁজ ৮৩টি।

এদিকে যৌথ অভিযানে অবৈধ অস্ত্রের উদ্ধারের তথ্য জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এখনই সঠিক তথ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে আমরা সঠিক তথ্য জানাতে পারবো।

এর আগে গত ১৫ বছরে কি পরিমাণ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ বছরে কত অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সেটি আমাদের কাছে জানা নেই। কারণ অস্ত্রের লাইসেন্স দেয় জেলা প্রশাসন কার্যালয়। তবে যেহেতু আমাদেরও একটি ভূমিকা আছে তাই আমরা সঠিক সংখ্যা জানতে কাজ করছি।

এদিকে যে সকল অস্ত্র এখনো জমা হয়নি লুট হওয়া অস্ত্রসহ সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) অভিযানে নেমেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বাংলাদেশ আনসারের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী। যৌথবাহিনীর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণে এর আগে গেল মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতরে একটি সমন্বয় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *