সারাদেশ

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির বিশেষ বার্তা

ডেস্ক রিপোর্ট: লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটে সোহাগ পরিবহণের বাস কাউন্টার দখল নিয়ে বিএনপি দু’গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। দু’পক্ষই একে অপরকে চাঁদাবাজ ও দখলবাজ দাবি করে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিলসহ সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সদর থানা পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে চররমণি মোহন ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনুসের দুই অনুসারী মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটের সোহাগ পরিবহনের বাস কাউন্টার পরিচালনা করে আসছিল। সম্প্রতি জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন বেগম কৌশলে বাস মালিকের কাছ থেকে কাউন্টারটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন। তবে তিনি চুক্তিপত্র করেন তার এক আত্মীয়ের নামে। এ ঘটনায় ইউনুস ও নয়নের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি। এতে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ইউনুসের অনুসারীরা কাউন্টারে হামলা-ভাঙচুর ও উপস্থিত লোকদের মারধর করে। এর পরপরই নয়নের অনুসারীরা ঘটনাস্থল জড়ো হতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে ঘটনাটি নিয়ে একইদিন বিএনপির সিনিয়র নেতারা সমঝোতা বৈঠক করেন। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ঘটনার সুষ্ঠু কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) যুবদল নেতা ইউনুসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নৌ-ঘাট ও বাজার দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ এনে নয়নের অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। এতে ইউনুসকে বহিষ্কারসহ শাস্তির দাবি জানায় বিক্ষুব্ধরা।

অন্যদিকে ভুয়া অভিযোগ তুলে সম্মান ক্ষুণ্ন করার ঘটনায় শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মজুচৌধুরীরহাট এলাকায় ইউনুস সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তার বিপুল সংখ্যক অনুসারী উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মজুচৌধুরীর হাটের ৫ জন ব্যবসায়ী জানায়, এতোদিন বাস কাউন্টার আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল। সরকার পতনের পর কাউন্টার দখল নিয়ে বিএনপি নয়ন ও ইউনুস গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। তারা পৃথক পৃথক মহড়া দিচ্ছে বাজারে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নয়ন বেগম বলেন, ইউনুস বাস কাউন্টার দখলে ব্যর্থ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলেছে। সরকার পতনের পর থেকে সে বাজার ও নৌ-ঘাট দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে। তার কারণে দলের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

চররমণি মোহন ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, বাস কাউন্টার পরিচালনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্তরা নেই। তবুও আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছে। নয়ন শুধু সোহাগ পরিবহণের কাউন্টার নয়, অন্য একটি বাস কাউন্টার দখলের চেষ্টা করছে। এতে কাউন্টার পরিচালনাকারীদের সঙ্গে নয়নের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে নয়ন দু’জনকে পুলিশে তুলে দেয়। নয়নের কাছ থেকে কাউন্টারের দোকান মালিক টাকা এনেছে। তা তিনি গোপনে ভিডিও করে চাঁদাবাজির টাকা বলে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আমি বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি।

সোহাগ বাস কাউন্টারের দোকান মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, যুবদল নেতা ইউনুস আমার হয়ে নয়নের কাছ থেকে জামানতের টাকা আনতে যায়। পরে ইউনুস টাকাটি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে। ইউনুস চাঁদাবাজি করেনি।

জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক সৈয়দ রশিদুল হাসান লিংকন বলেন, ঘটনাটি নিয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ এ নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। এটি দলীয়ভাবে মীমাংসা করার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি সাবেরা আনোয়ার বলেন, একটা পক্ষ মজুচৌধুরীরহাট এলাকায় লঞ্চঘাট, মাছঘাট, বাস কাউন্টার দখল ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। আমাদের দলীয় নেত্রী নয়ন এসবে বাধা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ওই পক্ষ উদ্দেশ্যমূলক অপবাদ দিচ্ছে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, একটি পক্ষ মামলা করেছে। দু’জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এখন ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে গ্রেফতারকৃতদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *