সারাদেশ

মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ জুরাইনবাসী

ডেস্ক রিপোর্ট: মশা থেকে বাঁচার জন্য কয়েল জ্বালাই তারপরও কোনো লাভ হয় না, যেদিকে যাই সেদিকেই মশা। এরকম আক্ষেপ নিয়ে নিজেদের অবস্থার কথা জানালেন জুরাইনের আলমবাগ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মো. মাহফুজ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় মশা সবসময় থাকে। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে মশার উপদ্রব হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। আবার বৃষ্টির কারণে রাস্তায় জমে আছে ময়লা পানি। এই ময়লা পানিতেও জন্ম নিচ্ছে মশা। কয়েল জ্বালিয়ে কোনো কুল পাইনা। তারপরও মশা এসে কামড়ায়।’

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জুরাইনের আলমবাগ, কমিশনার রোড়, রেলগেট, মুরাদনগর এলাকাসহ আরও অন্যান্য এলাকায় ঘুরে মানুষের সাথে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।

দেশজুড়ে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুহারও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাড়তে থাকবে এডিস মশার উৎপাত। রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জুরাইন। এ এলাকায় মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে মানুষ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশার উপদ্রব বেশি এমন চিহ্নিত কয়েকটি জায়গার মধ্যে জুরাইন অন্যতম।

খালের জমা পানিতে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ জুরাইনবাসী/ ছবি: বার্তা২৪.কম সরেজমিনে দেখা যায়, আলমবাগ রোড়ের বেহাল অবস্থা। রাস্তায় জমে আছে ময়লা পানি। সেখান থেকে আসছে দুর্গন্ধ। ময়লাপানিতে উড়ছে মশা। মুরাদনগরের একটি রোড়েরও একই অবস্থা।

সাধারণ মানুষের সাথে কথা বললে তারা জানায়, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় ময়লা পানি জমে গেছে। ফলে মশার উপদ্রব আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। এই এলাকাসহ জুরাইননের প্রত্যেকটা জায়গায় মশার উপদ্রব সারাক্ষণ থাকে। তবে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কোনো ফগিং করা হয়নি। আলমবাগ এলাকার এক শিল্পপতি নিজ উদ্যোগে প্রায় মাস খানেক আগে ফগিং করার ব্যবস্থা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন এখানকার স্থানীয় মানুষেরা। এরপর থেকে কোনো ফগিং করা হয়নি।

জুরাইন কমিশনার রোড় এলাকার ইফাত নামে একজন দোকানদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিল্ডিংয়ের পাশের চিপাচাপায় মশা বেশি থাকে। প্রত্যেকটা ঘরে ঘরে মশা৷ গত একমাসের ভেতরে কোনো ফগিং করা হয়নি। কয়েল জ্বালালে মশার উৎপাত একটু কমে। এরপর আবার মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। এ মাসের শুরু থেকে হঠাৎ করে মশা বেড়ে গেছে।

আলমবাগের বাসিন্দা মো. কাদের বলেন, শেখ হাসিনা সরকার থাকাকালীন সময়ে সপ্তাহে তিনদিন সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফগিং করা হতো। ঐ সময়ও মশা ছিল। কিন্তু, এখন আর কেউ ফগিং করতে আসে না। আমাদের আলমবাগের খারাপ অবস্থা।

পূর্ব জুরাইন এলাকার চেয়ারম্যান বাড়ি মোড়ের সবুজ নামের এক এলাকাবাসী বলেন, সারাদিন মশা থাকলেও সন্ধ্যায় মশার উৎপাত অতিরিক্ত বেড়ে যায়। এমনকি বিল্ডিংয়ের ছয়তলায়ও মশা দেখা যায়। কয়েল জ্বালিয়ে কোনো লাভ হয় না। মশারি ছাড়া রাতে ঘুমানো যায় না। এলাকার রাস্তাগুলোর মধ্যে সবসময় পানি জমে থাকে। হালকা বৃষ্টি হলেই ড্রেনের পানি রাস্তায় উঠে আসে। এই পানিগুলো প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে থাকে। এই পঁচা আবর্জনাযুক্ত পানির কারণে মশা বেশি হয়। জুরাইনে কিছু খাল আছে যেগুলো ময়লা আবর্জনায় ভরা থাকে। এই খালগুলো থেকেও মশা জন্ম নেয়। জুরাইনে থাকা ড্রেনগুলো কখনো পরিষ্কার করা হয় না।

হালকা বৃষ্টিতে রাস্তার বেহাল দশা। ছবি: বার্তা২৪.কম নিয়মিত ও বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে সফলভাবে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএসসিসি থেকে জানানো হয়েছে, এডিস মশার লার্ভা বিনষ্ট এবং জীবন্ত ও উড়ন্ত মশা নিধনের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিতভাবে লার্ভিসাইডিং ও এডাল্টিসাইডিং করা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের ঠিকানা অনুযায়ী মশক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়। কিন্তু, এই বিশেষ কর্মসূচির কোনো প্রভাব এখনো পর্যন্ত পড়েনি জুরাইন এলাকায়।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৬৭৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১২ জন। অপর দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৪২৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন মাত্র ৩ জন। হিসাব অনুযায়ী উত্তর সিটি করপোরেশনের তুলনায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর হার অনেক বেশি।

কীটতত্ত্ববিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি অনেক আগে থেকেই সতর্ক করেছি যে সেপ্টেম্বর মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। কিন্তু সিটি করপোরেশন এটার কোনো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। এখন মানুষ মরছে, এটার দায়ভার তাহলে কে নিবে!

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। তবে এ কর্মসূচির পাশাপাশি আরও তিনটা পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সেগুলো হলো- যেসব বাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী রয়েছে সেখানে অন্তত ৪০০ গজ জায়গায় ফগিং করে মশা মেরে ফেলতে হবে। মশা-মাছির প্রজনন স্থল ধ্বংসে লার্ভিসাইডিং করতে হবে। যে সকল জায়গাতে মশা জন্মায়, এবং জন্মাতে পারে সে স্থানে ফগিং করে প্রজনন স্থল ধ্বংস করতে হবে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমাদের নিয়মিত ও বিশেষ কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

তবে জুরাইন এলাকায় এখনো পর্যন্ত কোনো ফগিং করা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অতি শিগগিরই জুরাইন এলাকায় মশা নিধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *