সারাদেশ

কাঁঠালিয়ায় স্কুল শিক্ষকের জমিতে কাঁটা তারের বেড়া

ডেস্ক রিপোর্ট: বিদায়ী আগস্টে সারাদেশে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে মোট ৪৯০টি দুর্ঘটনায় ৫৩৪ জন নিহত এবং ৯৮৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। 

সংগঠনটি জানায়, সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। ৪৬৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৭৬ জন। এসময়ে আহত হয়েছেন ৯৮৫ জন।

এছাড়াও রেলপথে ১০টি দুর্ঘটনায় আট জন নিহত, দুই জন আহত হয়েছে। নৌ পথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ৫০ জন নিহত, দুই জন আহত এবং ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন জাতীয়, স্থানীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। ১৯৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৬ জন নিহত, ২০১ জন আহত হয়েছেন। এটা মোট দুর্ঘটনার ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ, নিহতের ৪৩ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং আহতের ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম হয়েছে বরিশাল বিভাগে। ঢাকায় ১১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২১ জন নিহত ও ২৬১ জন আহত এবং বরিশালে ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত ও ৯৩ জন আহত হয়েছেন।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯০ জন চালক, ৭৫ জন পথচারী, ৩৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৪ জন শিক্ষার্থী, একজন শিক্ষক, ৬৬ জন নারী, ৪৯ জন শিশু, তিন জন সাংবাদিক, একজন আইনজীবী এবং ১২ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। তাদের মধ্যে নিহত হয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য, ৭৬ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৭৪ জন পথচারী, ৫৫ জন নারী, ৪৩ জন শিশু, ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ১৭ জন পরিবহন শ্রমিক, একজন শিক্ষক, একজন সাংবাদিক, একজন আইনজীবী এবং ১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এ সময় সড়ক দুর্ঘটনা সংঘঠিত ৭৪৫টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা গেছে, ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১ দশমিক ২০ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১০ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাস, ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

মোট দুর্ঘটনার ৪১ দশমিক ৫৪ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ৩৩ দশমিক ১৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২২ দশমিক ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বিবিধ কারণে, শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ ট্রেন যানববাহনে সংঘর্ষ এবং চাকায় ওড়না পেছিয়ে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ।

দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ মাসে সংঘঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২০ দশমিক ৭৭ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩৯ দশমিক ১৮ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরী ও ১ দশমিক ২৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে। 

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি উল্লেখ করেছে:

১. দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্র্যাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতি সুযোগে আইন লঙ্ঘন করে যানবাহনের অবাধ চলাচল।

২. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় এবং অতি বৃষ্টির কারণে সড়কের মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় এসব গর্তের কারণে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে।

৩. জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকের এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে।

৪. মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, যানবাহনের ত্রুটি, ট্র্যাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।

৫. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।

৬. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কিছু সুপারিশ করেছে সংগঠনটি:

১. জরুরি ভিত্তিতে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।

২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।

৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান।

৪. ধীরগতির যান ও দ্রুতগতির যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা।

৫. সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।

৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা।

৭. সড়ক পরিবহন আইন যথাযথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা।

৮. উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।

১০. মেয়াদোর্ত্তীন গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্র্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।

১১. বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *