আন্তর্জাতিক

কাউকে কাঁদতে দেখলে সত্যিই কী রাগ কমে?

ডেস্ক রিপোর্ট: সমাজে প্রচলিত আছে- নারীর কান্না পুরুষের দুর্বলতা। নারীর চোখে পানি দেখলে নাকি মন গলে গিয়ে বশ মানে পুরুষ। শুধু গল্প উপন্যাসে নয়, বাস্তবেও মিলেছে এর সত্যতা। তাও যে সে নয়, এবার বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত হলো তা-ই।  

ইসরায়েলের উইজম্যান ইন্সটিটিউট অফ সাইন্স-এর কয়েকজন অভিজ্ঞ গবেষক এই নিয়ে গবেষণা করেন। তাদের গবেষণায় পাওয়া গেছে- মানুষের চোখের পানি এক ধরনের রাসায়নিক সংকেত প্রেরণ করে যা মস্তিষ্কের ক্রোধ সৃষ্টিকারী অঞ্চলের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন শ্যানি অ্যাগ্রন, যিনি বর্তমানে পিএইচডি করছেন। তিনি বলেন, পরীক্ষায় দেখা গেছে শুধু নারীদের ক্ষেত্রেই এই বিশেষত্ব আছে এমনটা নয়। সবার চোখের পানির প্রভাব একই রকম।  

এর আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ‘নারী ইঁদুর’- এর কান্না পুরুষদের সংঘর্ষ কমাতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও আলফা ইঁদুরের থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পুরুষ ইঁদুররা তাদের নিজেদের চোখের পানি ব্যবহার করে।

গবেষকদের মতে, কান্নার ঘ্রাণ টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ কমায়। ফলে আক্রমণাত্মক আচরণের প্রবণতা কমে আসে। এতে তারা ধারণা করেন, মানুষের ক্ষেত্রে হয়তো এমনটা ঘটতে পারে। তাই গবেষণা করার অনুপ্রেরণা পান তারা।

তারা পরীক্ষার জন্য ৬ জন নারীর চোখের পানি সংগ্রহ করেন। তারপর কিছু পুরুষদেরে একটি অ্যাগ্রেসিভ কম্পিউটার গেইম খেলতে দেওয়া হয়। তাদের কারও সামনে চোখের পানি এবং কারও সামনে স্যালাইন রাখা হয়। গেইমে তারা টাকা সংগ্রহ করবে এবং তাদের টাকা প্রতিপক্ষ চুরি করার চেস্টা করবে। খেলোয়াড় চাইলে প্রতিপক্ষের টাকা কমিয়ে ফেলতে পারবে। যদিও ওই টাকা সে নিজের ঝুলিতে আনতে পারবে না। কান্নার গন্ধ নাকে যাওয়া পুরুষদের মধ্যে প্রতিশোধ প্রবণতা ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ কম ছিল।

এই ফলাফল ইঁদুরের সাথে অনেকটা সাদৃশ্যপূর্ণ । তবে ইঁদুরের মতো মানুষের নাকের গন্ধহীন পদার্থের সংকেত বোঝার ক্ষমতা নেই। গবেষকরা লক্ষ্য করেন, যে ৪ জনের কাছাকাছি কান্নার পানি রাখা হয়েছিল; তাদের মস্তিষ্কে ৬২টি ঘ্রাণের ধরণে পরিবর্তন আসে।

তারা আরও গভীর পরীক্ষা করেন এমআরআই মেশিনের সাহায্যে। দেখা যায়, ঘ্রাণের পর এটি মস্তিষ্কের আক্রমণ-প্রবণ অংশেও প্রভাব ফেলেছে। কারণ ব্রেণের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স ও অ্যান্টেরিয়র ইনসুলার সক্রিয়তা কম ছিল।

লিভারপুলে অবস্থিত জন মোরস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ডা. মিন্না লেয়নস এই গবেষণার ব্যাপারে মন্তব্য করেন। তার মতে, এটি বেশ উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার। তবে এ থেকে যেকোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া উচিত নয়। বাস্তব জগতে এর প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। সাংসারিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব কতটা হবে তা আগে থেকেই বলা যায় না। কান্নার সামাজিক প্রভাব বিভিন্ন রকম হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রেই হয়তো কান্না আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি কমাতে পারবে।  

তথ্যসূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *