সারাদেশ

ছোট হয়ে আসছে শীতকাল, গ্রীষ্মে রেকর্ড তাপপ্রবাহের আভাস

ডেস্ক রিপোর্ট: মানুব সৃষ্ট কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর জলবায়ুও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানেরও পরিবর্তন ঘটছে। যেমন- বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে যাচ্ছে। অতি খরা, অনাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছোট হয়ে এসেছে শীতকাল।

রাজধানীতে আগের মতো হাড় কাঁপানো শীতের আর দেখা পাওয়া যায় না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিলেও তার স্থায়িত্ব দীর্ঘ হচ্ছে না। অনুভূত শীতের চেয়ে কুয়াশার পরিমাণও কমেছে। প্রসঙ্গতই, শীত কমলে তাড়াতাড়ি আসবে খরতাপ। অন্য সময়ের চেয়ে এবার তাই রেকর্ড তাপ প্রবাহের আভাস প্রকৃতিতে।

এ বছর শীতও এসেছে নির্দিষ্ট সময়ের পরে। আগে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শীত পড়তে শুরু করত, ডিসেম্বরে শৈত্যপ্রবাহ। অথচ এবার ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দেখা মিলে শীতের, বছরের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ আসে জানুয়ারির মাঝামাঝিতে। গত বছর থেকে ‘এল নিনো’র (সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উষ্ণ থাকে) প্রভাবে তাপমাত্রার এই বৈচিত্র্য দেখা যায়। তার ধারাবাহিকতায় এ বছরও তাপপ্রবাহ বা হিট ওয়েবের সংখ্যা ও স্থায়িত্ব; দুটিই বাড়বে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

গ্রীষ্মে রেকর্ড তাপপ্রবাহের আভাস আবহাওয়াবিদরা বলছেন- জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ফসিল ফুয়েলের অপব্যবহার, দূষণ, গাছপালা নিধনের ফলে প্রকৃতির দুর্যোগ সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে আবহাওয়ার ধরনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা যায়, সাধারণত গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহ হতো মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে। গত কয়েক বছর ধরে জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকছে একই তাপপ্রবাহ। গ্রীষ্মের তাপমাত্রা বর্ষা ও শরতে এসেও অনুভূত হচ্ছে। ২০২৩ সালের জুন মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ তাপমাত্রা টানা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে ছিল। এবার সে রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে। একই এল নিনোর প্রভাব ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত থাকবে। এতে করে তাপপ্রবাহের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে।

কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বার্তা২৪.কমকে বলেন, শীতকাল ছোট হয়ে আসায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে দৈনন্দিন জীবনে। যেমন শীতকালীন শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা দরকার। শীতকালের ব্যাপ্তি কমে আসলে শীতকালীন শাক-সবজির মধ্যে বিভিন্ন খনিজ পদার্থের তারতম্য সৃষ্টি হবে। যার কারণে উৎপাদিত অনেক শাক-সবজির স্বাদ কমে যাবে।

তিনি বলেন, শীতকালের সময় কমে আসলে চাষাবাদের জন্য কৃত্রিম সেচের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। যেহেতু দিন-রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসছে ও একই সাথে শীতকালের ব্যাপ্তিও কমে আসছে। শীতকালের সময় কমে আসলে জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। ফলে মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহার ও পরিবারের বাজেটের ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে। অনেক কৃষি ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাবে যেমন- গম। গম উৎপাদনের জন্য অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা আবহাওয়া দরকার।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, এবার শীত কম পড়েছে এবং সামনে গরমও বেশি পড়বে। বাংলাদেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবে এই তাপদাহের সাথে পরিচিত না। তবে এবার শীতের পরিমাণ কম পড়লেও গত ৫০ বছরের গড়ে খুব ব্যতিক্রম না। শৈত্যপ্রবাহ আসে উত্তর মেরু থেকে। সেখান থেকে তা সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রশান্ত মহাসাগরে স্রোতের তারতম্যের কারণে এল নিনো হয়, আগেও এটা হয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে এর অনুভূতি বেশি মনে হয়।

তিনি বলেন, এবার শীত কম পড়ার ভালো দিকও আছে। আমাদের হিমবাহগুলো পুষ্ট ও গভীর হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে আমরা যেভাবে হিমবাহ গলে যাওয়ার খবর পেয়েছিলাম এবার সেটা কম ঘটেছে। এতে করে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কাটবে। হিমালয়, আল্পস, রকি মাউন্টেইনে এবার তুষারপাতে ভালো বরফ জমেছে।

উষ্ণায়ন রোধের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের নগরায়ণে পরিবেশকে গুরুত্ব দিতে হবে। পর্যাপ্ত গাছপালা রেখে নগরায়ণ করতে হবে। উপমহাদেশে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, ভারতের চণ্ডীগড়; চমৎকার শহর। এসব শহরের নগরায়ণ থেকে ধারণা নিয়ে আমাদেরও পরিকল্পিতভাবে নগরায়ণ করতে হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *