সারাদেশ

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে সারা দেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত

ডেস্ক রিপোর্ট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি টাকারও বেশি। নিহত হন চারজন। আগুনের ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয় কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনে একে ‘নাশকতা’ বলে উল্লেখ করে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে এই নাশকতার পেছনের কোন কারণ উদ্‌ঘাটন করতে পারেনি তারা।  

তদন্ত কমিটি বলছে, তাদের যতটুকু কাজ ঠিক ততটুকু সম্পন্ন করা হয়েছে। তবে কমিটির দেওয়া দায়িত্বে দুর্ঘটনার কারণ কী ছিল? দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কারো গাফিলতি ছিল কিনা? এসকল তথ্যসহ আরও বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হলেও প্রতিবেদনে শুধুমাত্র ‘নাশকতা’ বলেই দায় সেরেছেন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটি।

এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে রেল সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে নাম-পরিচয় না প্রকাশের শর্তে তারা বার্তা২৪.কমকে জানান, রেলে যে আগুনের ঘটনা ঘটেছে এটা কোন যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। নির্বাচনকে সামনে রেখে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করতেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই নাশকতার ভেতরের বিভিন্ন কারণ খুঁজতেই কমিটি করা হয়েছিল। আর এই কমিটি তদন্ত শেষে এটা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বলেই উল্লেখ করল। এটা সবাই জানে এগুলো নাশকতা, তাহলে তদন্ত কমিটি কী আপডেট দিতে পারল?

অভিযোগের সূত্র ধরে তদন্ত কমিটির সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান ভিন্ন কথা। মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস আগুনের ঘটনা তদন্ত কমিটির যে প্রতিবেদন দাখিল করে সেখানে শুধুমাত্র উল্লেখ করা হয়েছে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর কথা। তাহলে কি এর বেশি আর কোন তথ্য উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে উপপরিচালক (প্রকৌশল) ও তদন্ত কমিটির সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, যাকে যতটুকু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ততটুকুই করা হয়েছে। ট্রেনে নাশকতা কে করেছে বা কেন করেছে সেটাতো আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা বা পুলিশ বের করবে। আমাদের কাজটা মূলত রেল রিলেটেড (সংশ্লিষ্ট)। আমাদের তদন্তে দেখা হয়েছে রেলের কোন গাফিলতি ছিল কিনা? সব কিছু পাঞ্চুয়াল ছিল কিনা?

এদিকে তদন্ত পদ্ধতিতে বলা হয়, সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন; প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি/সাক্ষ্য গ্রহণ, দুর্ঘটনাজনিত ট্রেনের তথ্যাদি ও ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ সংগ্রহসহ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান। এছাড়াও বিচার্য বিষয়সমূহ উল্লেখ করে বলা হয়, ট্রেনের দুর্ঘটনার কারণ কী ছিল? ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রতিরোধে কারো গাফিলতি ছিল কিনা? এমন তথ্য জানতে চাওয়া হয়। তবে প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের কথা বলা হলেও তদন্ত শেষে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার দৃশ্যমান কোন কারণ জানাতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তারা।  

প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিক বিচার বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে নাশকতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ধ্বংসের নিমিত্ত অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা আগুন দেয়, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিনষ্ট করে এবং জানমালের ক্ষতিসাধন করে।

এদিকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পর্যালোচনা করে জানানো হয়, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের ২৩৪১ নম্বর কোচের ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার।

এছাড়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে ৩টি বগিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বৈদ্যুতিক মালামালের ক্ষয়ক্ষতি ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ২০৯ টাকা। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ দাড়ায় ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৪৯ হাজার ২০৯ টাকা।  

এরআগে গত ১৯ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি। রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশন পার হয়ে আসার পর পরই ট্রেনটির বগিতে আগুন দেখা যায়। এরপর তেজগাঁও স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছাতেই ভয়াবহ রূপ নেয় এই আগুন। তৎক্ষণাৎ স্থানীয় সাধারণ মানুষ এবং ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে পুড়ে যাওয়া একটি বগি থেকে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পরে ঘটনার তথ্য উদ্‌ঘাটন করতে রেল কর্তৃপক্ষ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *