সারাদেশ

ধীরগতির ইন্টারনেটে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফ্রিল্যান্সার ও অনলাইন ব্যবসায়ীরা

ডেস্ক রিপোর্ট: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বন্ধ ছিল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। এখনও বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট সেবার কার্যক্রম। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে সবধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় সারা দেশের ন্যায় ফেনীতেও প্রভাব পড়ে দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততায়। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বন্ধ হয়ে যায় ফ্রিল্যান্সারদের কার্যক্রম। ক্ষতির মুখে পড়েছে অনলাইন ভিত্তিক পরিচালনা করা বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম।

দীর্ঘ এক সপ্তাহ আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায় ফ্রিল্যান্সারদের। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক ভিত্তিক পরিচালনা করা বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এতে বেকার সময় কাটাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তাসহ অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বর্তমানে চালু হওয়া শুধু ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিয়ে অসন্তুষ্ট একাধিক ফ্রিল্যান্সাররা। তারা বলছেন, অনেক ফ্রিল্যান্সারের গ্রাহক চলে গেছেন, তাতে অনেক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফ্রিল্যান্সাররা। কেননা, এ খাতের পুরোটা ইন্টারনেট নির্ভর। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও তা ফ্রিল্যান্সারদের তেমন কাজে আসছে না বলে জানান তারা। ফাইল নামানো, ফাইল আদান-প্রদান, গ্রাহক বা বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ ও অনলাইন সভা করতে নানা সমস্যায় পড়েছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক ফ্রিল্যান্সার।

এ বিষয়ে কথা হয় ফ্রিল্যান্সার এহসান আহমেদ এর সাথে। যিনি বিগত ৫ বছর যাবত গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করছেন। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় নিজের ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৬ দিন ইন্টারনেট বিহীন থাকাতে আমার অনেক ক্লাইন্ট এর সাথে চুক্তি বাতিল করতে হয়েছে। অনলাইনে না থাকাতে মার্কেটপ্লেস নোটিশ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ কয়েকদিনে অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করতে পারতাম কিন্তু পারিনি। আমার কাজ থেকে আমি অনেক পিছিয়ে গেছি যা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। দেশে অনেক ফ্রিল্যান্সার আছে। অনেকের বড় ক্লাইন্ট চলে গেছে, অর্ডারগুলো বাতিল হয়ে গেছে। কারও কারও সপ্তাহে লাখ টাকাও লোকসান হয়েছে। এখনও স্বাভাবিক ভাবে কাজ করতে পারছিনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ, সহজে কাজ করা যাচ্ছেনা। ধীরগতির কারণে ফাইল সহজে পাঠানো যাচ্ছেনা।’ আগের মত যাতে ইন্টারনেট সচল করে দেয়া হয় সে আহ্বান জানান তিনি।

ইয়াসিন আরাফাত নামে ফেনীর আরেকজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘আমাদের সবগুলো দেশের বাইরের ক্লাইন্ট। নেট না থাকার কারণে অনেক কাজ স্থগিত ছিল, অনেক কাজের জমা দেয়ার তারিখ ছিল কিন্তু দিতে পারিনি। নিয়মিত অনেক ক্লাইন্ট চলে গেছে। জমা কাজের যাচাই বাছাই করতে পারিনি। যার ফলে কাজ চলে গেছে। এমতবস্থায় নতুন করে ক্লাইন্ট যোগাড় করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ব্যাক্তিগতভাবে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। অনেক বড় ফ্রিল্যান্সার আছে যারা অনেক বড় প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করে। এমন নেটওয়ার্ক না থাকলে বাইরের ক্লাইন্টরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এখনও ইন্টারনেট ধীরগতি। ফাইল জমা দিতে পারছিনা। নেটওয়ার্ক এর বেহাল অবস্থার কারণে বাইরের দেশের গ্রাহকরা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সারা দেশে এর প্রভাব পড়েছে। ক্রেতারা এখনও বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের ভরসা করতে পারছেনা। এ অবস্থার পরিত্রাণ পেতে আরও ৬ থেকে ৭ মাস সময় ও লাগতে পারে।’

এ বিষয়ে ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দাতা প্রতিষ্ঠান মাল্টিসফট আইটির সিইও কাজী আবিদুর রহমান বলেন, ‘ইন্টারনেট না থাকায় চলমান কাজ বন্ধ ছিল।আইডি র‍্যাং কমে গেছে। ফ্রিল্যান্সারদের আয় বন্ধ হয়ে পড়েছে। যারা নির্ধারিত স্যালারি তে কাজ করে তাদের ক্ষতি বেশি হয়েছে। ঘণ্টাপ্রতি যারা আয় করে তারা ২০ থেকে ৩০ ডলার আয় করতে পারত। অনেকে ৬০ থেকে ৮০ ডলার আয় করতে পার। এমনভাবে প্রতিদিন ১২০ ডলার ও আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখনও ইন্টারনেট ধীরগতি, কোন ফাইল পাঠানো যাচ্ছেনা। ফাইলের সাইজ কমিয়ে পাঠানোর চেষ্টা করছি তাও পারছিনা।’

তিনি বলেন, ‘বাইরের দেশের মানুষের সময়ের মূল্য আছে। এ সময়ে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা এ সময়ে ভারত পাকিস্তান থেকে পিছিয়ে গেছি। এতে করে নিয়মিত গ্রাহকরা হারিয়ে গেছে। অনেকে ফেসবুক পেইজ ম্যানেজমেন্ট করে। বাংলাদেশ এ সব বন্ধ। ফলে আয় কমে গেছে। ডিজিটাল মার্কেটিং, ফেসবুক ভিত্তিক ই কমার্স, আমাজন এপিলেড সব বন্ধ হয়ে গেছে।’

ফ্রিল্যান্সারদের পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধ থাকাতে অনেকের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে আছে। যারা ফেসবুক পেইজ ভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনা করে তাদের আয় নেই বললেই চলে।

এ বিষয়ে একাধিক নারী উদ্যোক্তা জানান, ‘অনলাইনের যারা নিয়মিত গ্রাহক তাদের কারও সাথে যোগাযোগ নেই। অনেকের অর্ডার রয়েছে কিন্তু সেগুলো ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এতে করে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে।’

ইসরাত জাহান সোমা নামে একজন বলেন, ‘অনেকদিন কোন গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ নেই। আমাদের ব্যবসা ফেসবুক ভিত্তিক। পেইজে পোস্ট করার মাধ্যমে ক্রেতা আসে কিন্তু এখন সব কিছু বন্ধ হওয়াতে কোন ক্রেতা নাই। ১ সপ্তাহ যাবত কারও ই কোন আয় নেই। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসায় ধ্বস নামবে।’

ফজিলাতুন নূর নামে একজন বলেন, ‘ফেসবুক ভিত্তিক যারা ব্যবসা করে তাদের কোন আয় ই নেই। আমি গত এক সপ্তাহে কোন টাকা উপার্জন করতে পারিনি। এমন অবস্থা সারা দেশে। নারী উদ্যোক্তারা নিজেরা সাবলম্বী হচ্ছিল অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে এখন সেটিও বন্ধ। এ অবস্থার পরিত্রাণ করে দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ চালু করার দাবি জানান তিনি।’

এমন অবস্থার পরিত্রাণ চেয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, সকল কার্যক্রম এখন অনলাইনে পরিচালিত হয়। শুধুমাত্র ব্রডব্যান্ড সেবা চালু আছে, কিন্তু গ্রামে ব্রডব্যান্ড সেবা কম। মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু না হলে অনলাইন খাতে ফ্রিল্যান্সার ও ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *