৫০০ এনআইডি নম্বর দিয়ে টিকেট কালোবাজারি করতেন বুকিং সহকারী
ডেস্ক রিপোর্ট: ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ খ্যাত বডি বিল্ডার ফারুক হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের স্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) কে.এন.রায় নিয়তি লিখিত একটি প্রতিবাদ গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন। তবে লিখিত বক্তব্যে কোনো কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছিল না।
গণমাধ্যমে মৃত ফারুক হোসেনের স্ত্রী ইমা আক্তার হ্যাপি বলেছেন, কায়েতটুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) ইমদাদুল হকসহ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য মিলে তার স্বামী ফারুক হোসেনকে মিথ্যা মাদক মামলায় ধরে নিয়ে যায়। পরে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তার নিকট টাকা দাবি করে। ফারুক টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে ফাঁড়িতে বসিয়ে রাখে।
তিনি আরও বলেন, তার স্বামীর আটকের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ফাঁড়িতে গেলে পুলিশ প্রথমে তার কাছে এক লাখ ও পরে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু ইমা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য এসআই ইমদাদসহ পুলিশের হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেন। তার স্বামীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা দিতে না পারায় তার বিনিময়ে এসআই ইমদাদুলসহ ফাঁড়ির পুলিশরা তাকে কুপ্রস্তাব দেয়। তাদের কুপ্রস্তাবে রাজি হলে ফারুককে তারা ছেড়ে দিবে বলেও জানায়।
গণমাধ্যমে নিহতের স্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ডিএমপি বলছে, ঘটনার প্রকৃত সত্য হচ্ছে গত জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখ বংশাল থানার নাজিমউদ্দিন রোডে নিয়মিত চেকপোস্টে তল্লাশির সময় ফারুক হোসেনকে ২৫০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাকে কায়েতটুলী ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও বলা হয়েছে, ফাঁড়ির সামনের আগামাছি লেনের ৫০/১ বাড়িতে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, জানুয়ারির ১২ তারিখ রাত ৯টা ২২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের এসআই ইমদাদুল পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বের হন। অপরদিকে আসামির স্ত্রী ইমা আক্তার ফাঁড়িতে প্রবেশ করেন রাত ৯টা ৫০ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের সময়। আসামির স্ত্রী ইমা আক্তার ফাঁড়ি থেকে বের হন রাত ১০টা ২৫ মিনিট ১০ সেকেন্ডের সময়। পুনরায় এসআই ইমদাদুল হক ফাঁড়িতে প্রবেশ করেন রাত ১০টা ২৮ মিনিটে। সুতারং এসআই ইমদাদুল হকের সঙ্গে আসামির স্ত্রীর কোন প্রকার দেখা হয়নি। এছাড়া ইমা আক্তার মোবাইল ফোনের কল লিস্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসআই ইমদাদুল হকের সঙ্গে ইমার ফোনেও কোন ধরনের যোগাযোগ হয়নি। সুতরাং কোন পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে আসামিকে নির্যাতন কিংবা তার কাছ থেকে টাকা দাবি করা এবং কুপ্রস্তাব দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি।
গণমাধ্যম ইমার বক্তব্যে দাবি করেছেন, তার স্বামী ফারুক হোসেনকে বংশাল থানা হাজতে নেওয়ার পরেও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। অথচ ঘটনার প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ১২ জানুয়ারি কায়েতটুলী ফাঁড়ি থেকে ফারুককে সুস্থ শরীরে বংশাল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
থানা হাজতে প্রবেশ ও পরের দিন আদালতের উদ্দেশে রওনা দেওয়া পর্যন্ত সময়ের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করে আসামির সঙ্গে কোন পুলিশ সদস্যের নির্যাতনের চিত্র পাওয়া যায়নি। আসামিকে হাজতখানার মধ্যে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আচরণ করতে দেখা গেছে। পরবর্তীতে ১৩ জানুয়ারি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের হাজতখানায় পাঠানো করা হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত আসামির জামিন না মঞ্জুর করে কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানেও আসামি ফারুকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তার শরীরে কোন প্রকার আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। আঘাতের চিহ্ন থাকলে যথাযথ কারণ ছাড়া ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ ও কেন্দ্রীয় কারাগার কখনও আসামি গ্রহণ করে না। ফলে এই থেকে প্রমাণিত আসামি ফারুককে কায়েতটুলী ফাঁড়ি থেকে বংশাল থানায় এবং বংশাল থানা থেকে আদালতে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পাঠানো হয়।
গণমাধ্যমে ইমা আক্তার আরও দাবি করেন ফাঁড়ি থেকে ঘটনার দিন রাতে বংশাল থানায় তিনি তার দুই বছরের শিশু সন্তানসহ গিয়ে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিস) মো. মইনুল ইসলামের হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করেন। অথচ বংশাল থানার অফিসার ওসি মইনুল ১২ তারিখ বিকেলে থেকে রাত পর্যন্ত পারিবারিক অনুষ্ঠানে শেরেবাংলা নগর থানার কাফরুল এলাকায় অবস্থান করছিলেন।
ডিএমপি আরও জানিয়েছে, ১৩ জানুয়ারি কারাগারে পাঠানো পর ১৪ জানুয়ারি ফারুক কারাগারে অসুস্থ বোধ করলে প্রথমে তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরবর্তীতে ১৫ জানুয়ারি রাত ১২টা ৫০ মিনিটে কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার সৈয়দ হাসান আলী বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। কারা হাসপাতালের চিকিৎসক ও সহকারী সার্জন ডাক্তার তানভির স্বাক্ষরিত এক প্রেসক্রিপশনে অসামির অসুস্থতার কারণ সম্পর্কে মাদকাসক্তি ও ব্লাড প্রেসার লো (৮০/৫০) থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। পরবর্তী ঢাকা জেলার সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পায়রা চৌধুরী মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করেন এবং তাতে মৃতের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেন।
এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার ফাহমিদা নার্গিস ময়নাতদন্ত সম্পূর্ণ করেন এবং মৃতদেহের ভিসেরা পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করেন। ফাহামিদা নার্গিস স্বাক্ষরিত প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মৃতদেহের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও রোগ অথবা জখমের বিস্তারিত বিবরণ কলামে উল্লেখ করেন ‘ফাইব্রোটিক পরিবর্তনের উপস্থিতিসহ হার্ট বড় পাওয়া গেছে’ পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ভিসেরা পরীক্ষা শেষে প্রদান করা হবে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।