আন্তর্জাতিক

বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে জিরো ওয়েস্ট নীতি গ্রহণ জরুরি

ডেস্ক রিপোর্ট:  

বর্তমান সরকার বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার ঘোষণা দিয়েছে আর এই ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য জিরো ওয়েস্ট নীতি গ্রহণ করার বিকল্প নেই বলে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব জিরো ওয়েস্ট’র মানববন্ধনে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের সহযোগিতায় কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ), নারী মৈত্রী ও সীপ এর যৌথ উদ্যোগে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব জিরো ওয়েস্ট’ উপলক্ষে মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একটি রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি নির্দেশিত হয় সে রাষ্ট্রের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেমন তা দিয়ে। বর্জ্যের সঠিক ও টেকসই ব্যবস্থাপনা একটি রাষ্ট্রের সার্বিক পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি, পরিকল্পনা ইত্যাদি নানা দিক তুলে ধরে এবং রাষ্ট্র হিসেবে দেশটি কতোটা মানবিক এবং কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে কিংবা তার সম্পদের কতোটা সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছে তা নির্দেশ করে। আর এজন্য বাংলাদেশে এই মুহূর্তে প্রয়োজন জিরো ওয়েস্ট নীতি গ্রহণ করা।

বক্তারা বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে প্রতিবছর ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। তাছাড়া এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাংলাদেশের ২০১৯ সালের মোট জিডিপি’র ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনইপি) এক প্রতিবেদন অনুসারে কঠিন বর্জ্য অব্যবস্থাপনার জন্য প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ২৫২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ২ দশমিক ১-২ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে যা ২০৫০ সালে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন টনে উন্নীত হবে এবং প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন মানুষ কঠিন বর্জ্যরে টেকসই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সুতরাং জরুরী পদক্ষেপ এখনই না নিলে এর ভয়াবহতা সহজেই অনুমেয়।

মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্জ্যরে সঠিক ব্যবস্থাপনা কিংবা জিরো ওয়েস্ট পলিসি গ্রহণের গুরুত্বের বিষয়টি এখন সর্বজনবিদিত। তাছাড়া সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশে বসবাস করার অধিকার একটি মানবাধিকার যা বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১’ সহ বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণীত হয়েছে যেখানে টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বসহ সার্বিক বিষয়াবলি নিয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কঠিন বর্জ্যরে টেকসই ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ এর বিভিন্ন অভীষ্টের সাথে সরাসরি যুক্ত, সরকারে বিভিন্ন আইন ও উন্নয়ন নীতিমালার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকারাবদ্ধ অতিব জরুরি একটি বিষয় যা রাষ্ট্রের পরিবেশ, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিকল্পনা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বেকারত্ব দূরীকরণসহ ইত্যাদি নানা বিষয়ের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।

গত বছর থেকে ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনইপি) এবং ইউএন হিউম্যান সেটেলম্যান্ট প্রোগ্রাম কর্তৃক দিবসটি প্রথম উদযাপিত হলেও বাংলাদেশে এই প্রথম কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের সহযোগিতায় কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ) এর নেতৃত্বে এবং নারী মৈত্রী, সীপ ও ঢাকা কলিং প্রকল্পের অংশগ্রহণে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব জিরো ওয়েস্ট’ দিবসটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে উদযাপন করা হয়।

এই লক্ষ্যে বেশ কিছু দাবি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান পরিবশবাদী সংগঠনকারীরা-

১. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সকল নীতিমালার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল অঙ্গীকার সমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারকে জিরো ওয়েস্ট নীতি গ্রহণ করতে হবে।

২. মাটি-পানি-বায়ুদূষণ রোধে প্লাস্টিকের ব্যবহার, বিশেষত সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে এবং প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের উৎপাদন ও বাজার তৈরিতে প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতে হবে।

৩. টেকসই ভোগ ও উৎপাদন পদ্ধতিকে একটি পরিকল্পিত ঘূর্ণায়মান (সার্কুলার) ব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে এবং উৎপাদনকারীর সম্প্রসারিত দায়িত্ব (ইপিআর) সম্পর্কিত একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করতে হবে।

৪. প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট ও পয়ঃনিষ্কাশনের টেকসই ও সাশ্রয়ী ব্যবস্থা করতে হবে এবং বর্জ্য কর্মীদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা, স্বাস্থ্য বীমা, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫. শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে দূষিত শহরগুলোতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘন্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে এবং ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৭. যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা, বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ এবং বর্জ্য দিয়ে অবৈধভাবে খাল-বিল, জলাশয়, নি¤œভূমি ইত্যাদি ভরাট বন্ধ করতে হবে।

৮. সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, ডেসাসহ অন্যান্য সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

৯. বর্জ্য অব্যবস্থাপনার অভিযোগ জানানোর জন্য একটি অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে, অভিযোগ বক্স স্থাপন করতে হবে, টোল ফ্রি হটলাইন নাম্বার প্রদান করতে হবে, মোবাইল এ্যাপস গঠন করতে হবে, এবং দাখিলকৃত অভিযোগের ফলাফল দেখার জন্য অনলাইন ব্যবস্থা প্রণয়ণ ও সমন্বয় করতে হবে।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (বাপা)’র যুগ্ম-সম্পাদক জনাব আমিনুর রসুলের সভাপতিত্বে ও মাহবুল হকের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ মুশতাক হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ড. কামরুজ্জমান মজুমদার, লিডো’র নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হোসেন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলন (পরিজা)’র সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, ইনসাইটসের সিইও নিগার রহমান।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *