সারাদেশ

চট্টগ্রামে হত্যা মামলার ১২ আসামিই খালাস

ডেস্ক রিপোর্ট: চট্টগ্রামে হত্যা মামলার ১২ আসামিই খালাস

নিহত ইউসুফ আলীর স্ত্রী

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়াতে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুন হওয়া প্রবাসী ইউসুফ আলী হত্যা মামলার ১২ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে যথেষ্ট গাফিলতি ও পক্ষপাতের পরিচয় দিয়েছেন। এ ধরনের কর্মকর্তা পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ হালিম উল্লাহ চৌধুরীর আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।

খালাস পাওয়া ১২ আসামি হলেন- আজগর আলী (৫২), টিপু (২৮), মামুন (৩৩), আলী আকবর (৪৩), মাহবুবুল আলম (৩৩), সাগর খান (২২), মোমিন (২০), আলমগীর (৪০), আয়ুব আলী খান (৫৪), মোহসিনুল হক (৫৫), আবু তালেব (৩৮), আবু বক্কর (৫১) ও নেজাম উদ্দিন নাজু (১৭)। এদের মধ্যে নাজু ছাড়া ১১ জন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর রাঙ্গুনিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজানগর ইউনিয়নে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আবু তৈয়ব তালুকদার ও আজগর আলী। নির্বাচনে আজগর আলী পরাজিত হয়ে আবু তৈয়বের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। কয়েক দফা তার উপর হামলাও চালান।

২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাণীরহাট থেকে বাড়ি ফেরার পথে আবু তৈয়বের ভাই প্রবাসী মোহাম্মদ ইউসুফ আলীকে কুপিয়ে জখম করে আজগর আলীর অনুসারীরা। ওই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইউসুফের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আজগর আলীসহ ১২ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। রাঙ্গুনিয়া থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) খান নুরুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অশোক কুমার দাশ বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষে ১৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। বুধবার (২৯ মে) যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এর পর রায়ে আদালত ১২ আসামির সবাইকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। মাননীয় আদালত পুলিশের আলামত জব্দ ও তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি উল্লেখ করে সবাইকে খালাস দিয়েছেন। আমরা ১৬ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছিলাম। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা সবাই নিহতের পরিবারের।

তিনি আরও বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে যথেষ্ট গাফেলতি ও পক্ষপাতের পরিচয় দিয়েছেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা রাাঙ্গুনিয়া থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) খান নুরুল ইসলামকে দায়ি করেছেন। এই ধরনের পুলিশ কর্মকর্তা পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক উল্লেখ করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

‘কিছু প্রত্যক্ষদর্শী থাকলেও তারা সাক্ষী হননি ভয়ে। কেউ আবার দেশের বাইরে চলে গেছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমি বলব, যারা খালাস পেয়েছেন, তারাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব’ বলে যোগ করেন ট্রাইব্যুনালের এই পাবলিক প্রসিকিউটর।

রায়ের পর আদালতের বাইরে মামলার বাদি ও প্রবাসি ইউসুফের স্ত্রী শাহিনুর আক্তার বলেন, আমি ন্যায়বিচার পাইনি। যারা আসামি এরাই আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমরা আইনকে অনেক সম্মান করি। আজকে আমি একটু ও ন্যায়বিচার পাইনি। আমার স্বামীর হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আমার তিন সন্তানকে এতিম করে দেয়া হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী উজ্জ্বল সরকার বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে যথেষ্ট গাফেলতি ও পক্ষপাতের পরিচয় দিয়েছেন। যে জব্দ তালিকা আদালতে উপস্থাপন করেছেন, এর সঙ্গে সাক্ষ্যে উনার বক্তব্যের কোনো মিল ছিল না। ঘটনাস্থলে হাজির হওয়া এবং জব্দ তালিকা তৈরির সময়ে গরমিল পাওয়া যায়। আমরা আদালতে সেটা চ্যালেঞ্জ করেছি যে, তিনি একটি বানোয়াট জব্দ তালিকা দিয়েছেন। আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে পুলিশ বিভাগের কলঙ্ক বলেছেন। আদালতের কাছে আরও প্রতীয়মান হয়েছে যে, তদন্ত কর্মকর্তা বাদিপক্ষের মাধ্যমে বায়াসড হয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন।

মায়ানমারের কাউকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি: বার্তা২৪.কম

রোহিঙ্গা কিংবা মায়ানমারের অন্য কোন মানুষকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

তিনি বলেন, ক্যাম্পে অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে বিজিবি, এপিবিএন এবং সেনাবাহিনীও কাজ করছে। আমাদের মূল বিষয়টি হলো খুনখারাবি ও রক্তপাত বন্ধ করা, কোন দুর্ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাত সাড়ে ৮টায় কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউজে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

এসময় জাতীয় সংসদের হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, দেশি বিদেশি কোন সংস্থা যেন রোহিঙ্গাদের প্রলুব্ধ করতে না পারে সে বিষয়ে কড়া নির্দেশ দেয়া হয়েছে প্রশাসনকে। নতুন করে যেন কোন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে বিজিবিকে কড়া নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান, এপিবিএনের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেন, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম সহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

;

খুলনা-বেনাপোল-মোংলায় ট্রেন চলবে শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের ৭ মাস পরে শনিবার (১ জুন) থেকে খুলনা-মোংলা রেললাইনে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে। নতুন এই রুটে বেতনা এক্সপ্রেসটি মোংলা কমিউটার নামে চলাচল শুরু করবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাতে রেলওয়ে পশ্চিম বিভাগের (রাজশাহী) ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, এই ট্রেনটির রুট হবে খুলনা থেকে বেনাপোল, বেনাপোল থেকে মোংলা, আবার মোংলা থেকে বেনাপোল। এরপর বেনাপোল থেকে খুলনা। এই রুটের দূরত্ব ১শ’ ৩৮ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার।

২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী খুলনা-মোংলা রুটে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর দীর্ঘদিন পর নানা জটিলতা কাটিয়ে মোংলা বন্দর থেকে বেনাপোল স্থল বন্দর পর্যন্ত এই ট্রেনটি চলাচল শুরু হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (পশ্চিম) রাজশাহীর দপ্তরাদেশ নং-৫৪.০১.৮১০০.১৫৪.০৩.০২৯.১৪-০৫১ স্মারকে খুলনা-বেনাপোল-মোংলা রুটে কমিউটার ট্রেন পরিচালনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মহাপরিচালকের কার্যালয়ের পত্র নং- ৫৪.০১.২৬০০.০০৮.১৮.০১৪.১৬ (অংশ-২)-১৩০; তারিখঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ মোতাবেক ৯৬ ও ৯৫ নং বেতনা কমিউটার এর রুট আংশিক পরিবর্তন করত।

খুলনা-বেনাপোল-মোংলা-বেনাপোল-খুলনা রুটে নতুন কমিউটার ট্রেন ১ জুন ২০২৪ তারিখ হতে চলাচল করবে। বেনাপোল থেকে ট্রেন ছাড়ার পর নাভারণ, ঝিকরগাছা, যশোর জংশন, রূপদিয়া, সিঙ্গিয়া, চেঙগুটিয়া, নওয়াপাড়া, বেজেরডাঙ্গা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদনগর, কাটাখালি, চুলকাটি বাজার, ভাগা ও দিগরাজ স্টেশনে যাত্রাবিরতির পর মোংলায় পৌঁছাবে। খুলনা স্টেশন থেকে প্রতিদিন দুপুরে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে বেতনা এক্সপ্রেস ছেড়ে যেত। কিন্তু দুপুরে খুলনা স্টেশন থেকে আর ট্রেনটি চলবে না। ওই সময়ে খুলনা স্টেশন থেকে বেনাপোলগামি যাত্রীদের আড়ংঘাটা অথবা মোহাম্মদ নগর স্টেশন থেকে উঠতে হবে।

আবার সকালে বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি দুপুরে আর খুলনা স্টেশনে আসবে না। খুলনার যাত্রীদেরকে আড়ংঘাটা অথবা মোহাম্মদ নগর স্টেশনে নামতে হবে। এতে খুলনা শহরে আসতে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার অন্য যানবাহনে উঠতে হবে যাত্রীদেরকে।

খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান জানান, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেল লাইন ট্রেন চলাচলের জন্য পুরোপুরি উপযোগী রয়েছে। ৮টি স্টেশনে আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জামও পৌঁছে গেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১০ সালে। প্রকল্পের আওতায় মূল লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। আর রূপসা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেলসেতু। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন, রেলসেতু নির্মাণসহ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭শ’ ২১ কোটি টাকা। ২০২১ সালে আবারও সময় ও ব্যয় দুটিই বাড়ানো হয়। তখন ব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ২শ’ ৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয় কিন্তু সেই মেয়াদ শেষ হয় ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে দ্রুত কম খরচে মালামাল নিতে পারবেন। গতিশীল হবে মোংলার সঙ্গে যাতায়াত সুবিধা। নতুন এই রুটে ‘মোংলা কমিউটার’ নামে ট্রেন চলাচল করবে। খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত চলাচল করে বেতনা এক্সপ্রেস নামে একটি লোকাল ট্রেন। সেই ট্রেনটি ফেরার পথে খুলনার ফুলতলা জংশন থেকে মোংলার দিকে যাত্রা করবে, তখন ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ট্রেনটি ‘মোংলা কমিউটার’ নাম ধারণ করে চলবে। ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন মঙ্গলবার। খুলনা থেকে ভোর সোয় ৬টায় ছেড়ে বেনাপোলে পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়। বেনাপোল থেকে ছেড়ে মোংলা পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। ফুলতলা থেকে যাওয়ার পথে মোংলা কমিউটার মোহাম্মদনগর, কাটাখালী, চুলকাটি বাজার রেলস্টেশনে যাত্রা বিরতি দেবে। মোংলা থেকে বেলা ১টায় ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছাবে সাড়ে ৪টায়।

রেলওয়ে পশ্চিম বিভাগের (রাজশাহী) ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, আপাততঃ খুলনা বেনাপোল রুটের বেতনা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ‘মোংলা কমিউটার’ নামে চলাচল করবে। বেনাপোল বন্দর থেকে মোংলায় রেল চলাচল আগামী ১ জুন থেকে চালু হচ্ছে । এর ফলে উপকৃত হবে যাত্রীরা। ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি এই রেলপথ উদ্বোধন করেন। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালানো হয়। এরপর কয়েকদফা পাথর বোঝাই করে লাইনের নানাদিক পরিক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু স্থায়ী জনবল নিয়োগসহ নানা জটিলতায় যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালু করা যায়নি।

;

দরিদ্র-বান্ধব এবং জলবায়ু-সহনশীল নগর উন্নয়নে গুরুত্বারোপ

ছবি: সংগৃহীত

শহরের সহিষ্ণুতা ও দরিদ্র-বান্ধব উন্নয়নে মেয়রদের নিয়ে ‘মেয়রস’ নলেজ এক্সচেঞ্জ ওয়ার্কশপ অন এলআইইউপিসিপি গুড প্রাকটিস’ শীর্ষক এক কর্মশালায় অনুষ্ঠিত হয়। দরিদ্র-বান্ধব এবং জলবায়ু-সহনশীল নগর উন্নয়নের নানা চর্চা ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নেয়া হয়।

বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের লাইভলিহুডস ইমপ্রুভমেন্ট অফ আরবান পুওর কমিউনিটি (এলআইইউপিসিপি) প্রকল্পের আয়োজনে বুধবার (২৯ মে) ঢাকার একটি হোটেলে এই কর্মশালায় অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় যুক্তরাজ্যের ফরেন ডিপার্টমন্ট, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এবং ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি)-এর সাথে অংশীদারিত্ব এলআইইউপিসিপি প্রকল্পের এই কর্মশালায় ১৯টি শহর ও শহরে এলআইইউপিসিপি প্রকল্পের প্রভাবে দরিদ্র-বান্ধব এবং জলবায়ু-সহনশীল নগর উন্নয়নের নানা ভালো চর্চা ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নেয়া হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালযয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার এবং উন্নয়ন পরিচালক ম্যাট ক্যানেল। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জনাব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দয়ারত্নে তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘সরকার আমাদের শহুরে সহিষ্ণুতা কর্মসূচির সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছে। এখানকার নারীরা কত দারুণভাবে তাঁদের শহর ও শহরের বাসিন্দাদের নানা সমস্যার সমাধান করছ এটি তারই প্রামাণ।’

‘অধিবাসীদের ক্ষমতায়নের ভালো অনুশীলন এবং জলবায়ু-সহনশীল পরিকাঠামোর জন্য স্থানীয়ভাবে পরিচালিত পদ্ধতি’ শীর্ষক অধিবেশনের সভাপতিত্বে ঢাকা উত্তরের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় পদক্ষেপই জাতীয় সাফল্যের চাবিকাঠি, এবং সুবিধাবঞ্চিত অধিবাসীদের নেতৃত্বে উন্নয়ন প্রক্রিয়াটি দরিদ্র-বান্ধব নগর উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।’

চাঁদপুরের মেয়র মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এলইউআইপিসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা শহর পর্যায়ের কমিটিতে নারীদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে শহুরে দরিদ্র পরিবারের কাছে পৌঁছেছি।’

চাঁদপুর টাউন ফেডারেশনের চেয়ারপার্সন নাজমা আলম মনে করেন, ‘আমাদের কণ্ঠস্বর শোনানো সহজ ছিল না। এমন একটি জায়গা তৈরি করার জন্য যা আমাদেরকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে– এলইউআইপিসিপি প্রকল্প এবং পৌরসভাকে ধন্যবাদ ‘।

প্রধান অতিথি মোঃ তাজুল ইসলাম, এমপি বলেন, “২০৪১ সালের মধ্যে আমরা একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে চাই এবং এই উন্নয়নযাত্রা কাউকে পিছু ছাড়বে না। আগামী দিনগুলিতে এই কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাগুলো প্রয়োগ করার জন্য আমারা উন্মুখ হয়ে আছি।’

স্টেফান লিলার বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এবং যুক্তরাজ্যের সাথে আমাদের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব প্রায় দুই দশকব্যাপী, যা শহুরে দারিদ্র্য হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনের একটি শক্তিশালী মডেল প্রদর্শন করে। আমাদের এই প্রয়াস স্থানীয় সরকারগুলির বৃহত্তর নগর উন্নয়ন কৌশলগুলির সাথে একত্রিত হয়েছে তা নিশ্চিত করে, এই কর্মসূচিটি অধিবাসী স্তরে সহিষ্ণুতা জোরদার করতে চলেছে৷’

এলইউআইপিসিপি প্রকল্প থেকে শেখার বিষয়ে মন্তব্য করে ম্যাট ক্যানেল বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার, যুক্তরাজ্য সরকার এবং ইউএনডিপির মধ্যে অংশীদারিত্ব দেখে আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশের ৪০ লক্ষ দরিদ্র শহুরে মানুষের জীবনযাত্রা এবং জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি হয়েছে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম এলআইইউপিসি প্রকল্পকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাজ্য সরকার এবং ইউএনডিপি-কে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন ‘আগামী বছরগুলিতে আমরা এই অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য অত্যন্ত আগ্রহী।’

সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভার মেয়র, উন্নয়ন সহযোগী, সরকারি নানা সংস্থা, এনজিও, আইএনজিও এবং দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক অংশীদারদের সমন্বয়ে প্রায় ১২০ জন অংশগ্রহণকারী কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

এলআইইউপিসি প্রকল্প দরিদ্র-বান্ধব জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট নগর উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া, প্রকল্পটি শহরের প্রায় ৪০ লাখ দরিদ্র অধিবাসীর কাছে পৌঁছেছে এবং ইতোমধ্যে অধিবাসীদের ক্ষমতায়ন, সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন, অভিযোজিত জীবিকা, উন্নত আর্থ-সামাজিক অবস্থা, জলবায়ু-সহনশীল অবকাঠামো এবং দরিদ্র-সমর্থক পরিকল্পনা এবং পৌর শাসনে বেশ কিছু ভালো উদাহরণ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে।

;

সিলেটে প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা, আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান

ছবি: বার্তা২৪.কম

সিলেটে প্রতিনিয়ত বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি এলাকা। পাহাড়ি ঢল ও নদ নদীর পানি বাড়ায় সিলেটের সীমান্তবর্তী ৫টি উপজেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় দুটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে। বন্যা প্লাবিত এলাকার জন সাধারণদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার কর্মকর্তারা।

প্লাবিত উপজেলা কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, শুকনো খাবার ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার(৩০মে) সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুরমা নদী কানাইঘাট উপজেলা সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসীদ পয়েন্টে বিপদসীমার ২১৩ সেন্টিমিটার এবং শেওলা পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, সারি গোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এ সময় পানি প্রবাহিত হয়।

এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সিলেট জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দুর্গত মানুষের খোঁজ নিতে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান উপজেলাগুলোতে পরিদর্শন করেছেন। সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫টি উপজেলার মানুষের জন্য ২০০ বস্তা করে মোট ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্লাবিত এলাকা ছাড়াও আশপাশের উপজেলাগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে আতঙ্কিত না হয়ে কেউ প্লাবিত হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য বা উপজেলা প্রশাসকে জানানোর জন্য।

গোয়াইনঘাট উপজেলার ৫৬টি, জৈন্তাপুরে ৪৮টি, কোম্পানীগঞ্জে ৩৫টি ও জকিগঞ্জে ৫৮টি, কানাইঘাট ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রগুলোতে ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে, নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। ইতোমধ্যে বুধবারী বাজার ইউনিয়ন ও বাঘা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যায় উপজেলার ৭৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পূর্বাভাস থাকায় আমরা আগেই ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। কাল রাতেই ১৬৭টি পরিবার আশ্রয় নেয়, সকাল থেকে যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে শালিক রুমাইয়া জানান, উপজেলার ৩০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৪৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৭০০ লোক আশ্রয় নিয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের এই সংকটময় সময়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় এই পরিস্থিতি মোকেবেলা করতে হবে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এখনো কোনো লোক আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেনি। তারা তাদের আত্মীয় স্বজনদের বাসা-বাড়িতে উঠেছেন। উপজেলার ১৪৮টি গ্রামের মধ্যে ৭৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মানুষ আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসনিম জানান, উপজেলার অবস্থা খুবই খারাপ। পানি হু-হু করে প্রবেশ করেছে। অন্ততপক্ষে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে ১০-১২টি পরিবার।

কানাইঘাট উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা নাসরীন জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে পানি কিছুটা কমেছে। আমাদের ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬টি কেন্দ্রে মানুষ উঠেছে। প্রায় ১২০০-১৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন জানান, আমাদের এখানে দুটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম কিছুটা প্লাবিত হয়েছে। ৫৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, ইতোমধ্যেই গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট, জকিগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে।

ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। বন্যা-কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *