সারাদেশ

নড়াইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রের মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট: টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত থেকে:

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এবার মর্টার শেল ও গুলির বিকট শব্দ শোনা গেছে টেকনাফ সীমান্ত থেকে। ভারি গোলাবারুদের বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন সীমান্তবাসী।

বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দে অনেকে নির্ঘুম রাত কাটান। এছাড়া টেকনাফের সাবারাংয়ের নয়াপাড়া এলাকায় গোলার শব্দ আওয়াজ ভারি শব্দ বলে জানা গেছে। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনেও গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে মানুষ।

শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলার বিকট শব্দের বিষয়টি স্বীকার করে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সলাম বলেন, ‘সীমান্তে রাতে খুব বেশি গুলির শব্দ শুনা গেছে। এখানে নাফনদ থাকায় আমরা গোলার শব্দ শুনলেও ঠিক ওপারে কোন এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে সেটা বলা মুশকিল। কিন্তু এত বেশি শব্দের বিকট আওয়াজ ছিল, অনেকে রাতে ঘুমাতে পারেনি।’

রাত ১২টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহপরীর দ্বীপ প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে মানুষের দেখা মেলে। এসময় তাদের মাঝে মিয়ানমারের বিকট গোলার শব্দের কথা বলাবলি করতে শুনা গেছে। এ নিয়ে অনেকে আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা শাহীন আলম বলেন, ‘গোলার বিকট শব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছি। মিয়ানমারের গোলার এত বিকট শব্দে কোনোভাবে ঘুমানো যাচ্ছে না। মাঝে মধ্য খুব ভয়ে ছিলাম। যদি গোলা এপারে এসে পড়ে, সীমান্তের বসবাসকারীদের কী হবে?

সীমান্তে দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘হঠাৎ করে ফের মিয়ানমারের গোলার বিকট শব্দে এপারের মানুষজনের মাঝে আতঙ্ক বাড়ছে। আমরা জেনেছি, ওপারে যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে, ফলে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে তাই সীমান্তরক্ষীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

স্থানীয়রা লোকজন জানায়, ‘বুধবার দুপুরে নাফনদের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে মিয়ানমারের জলসীমানায় সেদেশের যুদ্ধ জাহাজ এসেছে। জাহাজটি রাতেও মৌলভি পাড়ার সীমান্তের ওপারে দেখা গেছে। এরপর রাত থেকে শুরু হওয়া মর্টার শেলের বিকট গোলার শব্দ থামেনি। পুরো রাতজুড়ে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলার শব্দ পাওয়া গেছে।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা স্থানীয় সাংবাদিক জসিম মাহামুদ নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, মিয়ানমারে বিস্ফোরণে কাঁপছে শাহ পরীর দ্বীপ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সংঘাত হওয়ার পর থেমে এমন বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়নি। আজকের আওয়াজগুলো খুবই মারাত্মক, কোনোভাবে রাতে ঘুমানো যায়নি।’

বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে ব্যাপক গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দ্বীপে জেটিঘাটের বাসিন্দা নাছির উদ্দিন। এই দোকানদার বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপার থেকে খুব বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ করে আবার এ সীমান্তে গোলার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি এ গোলার শব্দ এপারে মাটি কাঁপছে।’

শাহপরীর দ্বীপের বসবাসকারী গাড়িচালক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘মিয়ানমারের গোলার শব্দেয় দ্বীপের সীমান্তজুড়ে কাঁপছে। আধাঘণ্টা পরপর ওপারের শব্দ এপারে পাওয়া যাচ্ছে। আজকের গোলার শব্দ শাহপরীর দ্বীপ বাজারে পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। এতে সীমান্তের বসবাসকারী শিশু-নারীরা ভয়ভীতির মধ্য আছেন।’

সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকেও গোলার বিকট শব্দ শুনেছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। ৮ দিন ধরে এই দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দা বন্দি মাঝ সাগরে।

দ্বীপের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, সারারাত গোলাগুলির বিকট আওয়াজ শুনা গেছে। আমাদের ঘুম হারাম বলা যায়। এমনিতেও নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে ৮দিন। এখানে অনেক খাদ্য সংকট দেখা যাচ্ছে। আমাদের বাঁচাতে সরকারের সহযোগিতা চাই।

এদিকে, মিয়ানমার মংডু, বুথিডং ও রাথিডংয়ের কয়েকটি গ্রামে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে। টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার নাফ নদীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা দিনরাত নাফনদী ও সীমান্ত সড়কে টহল বৃদ্ধি করেছে। সেটি চলমান এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সব সময় প্রস্তুত বিজিবি ও কোস্টগার্ড।

এ বিষয়ে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদারের পাশাপাশি সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *