সারাদেশ

সর্বাত্মক কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের

ডেস্ক রিপোর্ট: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্যই কোটা সংস্কার আন্দোলন: অধ্যাপক সোহেল আহমেদ

সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মামলা দায়েরের প্রতিবাদে এবং কোটা সংস্কারের একদফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতি সমাবেশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে ‘গত ১০ দিন থেকে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, গায়ের ঘাম পানি করে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, তা মূলত রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্যই করছে’- এমন মন্তব্য করেছেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ।

এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ বলেন, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের কাছে রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা ন্যায় বিচার ও সমতা বিধানের প্রত্যাশা করি৷

অধ্যাপক সোহেল আহমেদ আরো বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদেরও সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা এই বাংলাদেশকে পেয়েছি।

রোববার (১৪ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণ থেকে একটি মিছিল শুরু হয়ে প্রধান ফটক (ডেইরি গেট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি সমাবেশের মাধ্যমে পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি শেষ হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ছবি- বার্তা২৪.কম

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাইয়ের ওপর হামলা কেন, বিচার চাই বিচার চাই’, ‘পুলিশ/হামলা/মামলা করে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না-যাবে না’, ‘৭১-এর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘১৮-এর হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লোগেছে’, ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’,’মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘১৮-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি কোটা সংস্কারপন্থি স্লোগান দেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে যে বৈষম্য তৈরি করার পাঁয়তারা করছেন, তা বন্ধ করুন। মেধাভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি করার জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। আমরা শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছি৷

‘এই আন্দোলন শুধু কোটা সংস্কারের আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন দেশকে রক্ষা করার আন্দোলন’ মন্তব্য করে সমাবেশে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান এই যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বলতে চাই, শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন প্রশংসার দাবিদার।

অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দেখে আমার মনে হচ্ছে, আপনারা সেই ’৫২’র ভাষা আন্দোলনকারী শহীদদের উত্তরসূরী। একটা দেশে কোটা কখন প্রয়োজন হয়, যখন এক শ্রেণির লোক সমাজে পিছিয়ে থাকে। মেইনস্ট্রিমে তারা কিছু বলতে পারেন না, তখন তাদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য কোটা প্রয়োজন হয়। কোটার মাধ্যমে এই দেশকে মেধাশূন্য করে ফেলা হচ্ছে৷ এই আন্দোলন শুধু কোটা সংস্কারের আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন দেশকে রক্ষা করার আন্দোলন। কারণ, মেধা ছাড়া একটা দেশ কখনো উন্নত হতে পারে না। মেধাবীরা ছাড়া আপনি কোনোভাবেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারবেন না৷

বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, কোটা সংস্কার করুন, মেধাবীদের সুযোগ দিন। আমরা দেখেছি, আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।

শনিবার (১৩ জুলাই) শাহবাগে মামলা করা হয়েছে৷ আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি স্বৈরাচার বাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। হামলা-মামলা করেছে কিন্তু তাদের রুখতে পারেনি। ১৯৬৯ সালেও একই ঘটনা ঘটেছে৷ শিক্ষার্থীরা যখনই কোনো যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যায়নি৷
কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না, যদি আপনারা এর বিরুদ্ধে কোনো পাঁয়তারা চালানোর চেষ্টা করেন তবে আন্দোলন আরো বেগবান হয়ে উঠবে৷

প্রসঙ্গত, ৭ জুলাই থেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ৫ শতাংশে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংস্কারের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা৷

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *