সারাদেশ

‘অসময়ে’ হারিয়ে গেল প্রিয়তমা, খোঁজে ভ্যানে শহর চষছেন সবুজ

ডেস্ক রিপোর্ট: কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, রায়ের বাজার, শনির আখড়া এলাকায় দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ডেমরা থানা ছাত্রদল আহ্বায়ক মাসুদ রানা, ইরফান, আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, সৌরভ মিয়া ও তারেক।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত অনেকবারই গণতান্ত্রিক সরকারকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা বা দেশকে অকার্যকর করার চেষ্টা বা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা বারবার ব্যর্থ হয়েছে সম্মুকযোদ্ধা হিসেবে কাজ করা পুলিশের কারণে। এজন্য তারা এবার পুলিশকেই টার্গেট করেছে।

হারুন বলেন, উদ্দেশ্য ছিল একটাই পুলিশকে ডিমরালাইজড করা। পুলিশকে ডিমরালাইজড করতে পারলে তারা হয়তো মনে করেছিল আন্দোলন সাকসেস হবে। ‍পুলিশ দুর্বল হলে পিছিয়ে যাবে। পুলিশ সদস্যদের শুধু পিটিয়ে মেরেছে বা হত্যাই নয়, বাসা বাড়িতে গিয়ে তল্লাশী করে পুলিশ সদস্যকে খোঁজা হয়েছে। এখন আমরাও বাসা-বাড়িতে বাড়িতে জামায়াত-শিবির বিএনপি চক্রকে খুঁজছি। যেখানেই পাবো গ্রেফতার করে নিয়ে আসবো।

ডিবি পুলিশ বলছে, ডেমরা থানা ছাত্রদল আহ্বায়ক মাসুদ রানার নেতৃত্বে পুলিশ হত্রার নীল নকশা বাস্তবায়ন করা হয়। একেকজনের ছিল একেক দায়িত্ব। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতার ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানার নেতৃত্বে, ইরফান, আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, সৌরভ মিয়া ও তারেকসহ ২৫-৩০ জনের একটি দল গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য যাত্রাবাড়ী থানাধীন রায়েরবাগে অবস্থান করে। এছাড়াও মাসুদ রানার উপস্থিতি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় ইরফান ও বক্কর আরো কয়েকটি দল নিয়ে এসে তার সাথে যোগ দেয়। মাসুদ রানার নেতৃত্বে তারা রায়েরবাগ-শনির আখড়া এলাকায় অগ্নিসংযোগ এবং মসজিদের মাইকে গুজব ছড়ানো, থানা আক্রমণ এবং পুলিশ হত্যায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।

রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় তারা এক মোটরসাইকেল আরোহীকে তাড়া করে। তাদের তাড়া খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী রাস্তার পাশে পরে গেলে মাসুদ রানা ও তার সহযোগীরা সেই ব্যক্তির ব্যাগ তল্লাশি করে পুলিশের পোশাক ও আইডি কার্ড দেখতে পায়। তখন তারা পুলিশ পুলিশ বলে চিৎকার করে। তাদের চিৎকারে আশপাশের অনেকে সেখানে জড়ো হয়ে যায়। তাদের হাতে থাকা হকিস্টিক, বাঁশ, লাঠি ইত্যাদি দিয়ে ওই পুলিশ সদস্যকে মারতে থাকে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। তার মৃতদেহ নিয়ে তারা উল্লাসে মেতে উঠে। তার চালিত মোটরসাইকেলটিতেও তারা অগ্নি সংযোগ করে। আন্দোলনে যাওয়ার জন্য তাদেরকে কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য তারেক অর্থ সহায়তা দিত এবং তার নির্দেশে তারা অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের কাজ করেছে।

পরের দিন ২০ জুলাই সকালেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। ওই এলাকায় মোটরসাইকেলে করে সাদা পোশাকে একজন ব্যক্তিকে আসতে দেখে দুষ্কৃতিকারীরা ধাওয়া করে, তাকে ধরে ফেলে এবং পুলিশ সদস্য বুঝতে পেরে তাদের হাতে থাকা হকিস্টিক, বাঁশ, লাঠি ইত্যাদি দিয়ে এলোপাথারি মারতে থাকে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। তার মোটরসাইকেলটিও একইভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

নিহত দুই সদস্য হলেন, এএসআই মোহাম্মদ মুক্তাদির (৫০) ও নায়েক/গিয়াস উদ্দিন (৫৮)। এই দুই পুলিশ সদস্য হত্যায় গ্রেফতার ৬ জনের ভূমিকা সম্পর্কে হারুন বলেন, মাসুদ রানা রায়েরবাগ শনির আখড়া এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করে। ইরফান ও মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যদের হত্যা ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। আবু বক্কর পুলিশ সদস্যকে মারপিট করে এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। রবিউল ইসলাম হকিস্টিক দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগে সহায়তা করে। সৌরভ মিয়া বাঁশের লাঠি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে। তারেক লাঠি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মারপিট করে এবং মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগে সহায়তা করে।

হারুন বলেন, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি করেছে তারা। উদ্দেশ্য ছিল একটাই পুলিশকে ডিমরালাইজড করা। পুলিশকে ডিমরালাইজড করতে পারলে তারা হয়তো মনে করেছিল আন্দোলন সাকসেস হবে। ‍পুলিশ দুর্বল হলে পিছিয়ে যাবে। তখন তারা এই রাষ্ট্রকে অকার্যকর ও সরকারকে পতন ঘটাতে পারবে মনে করেছিল। আমরা দেশের জন্য মানুষের জন্য পুলিশ সদস্যরা নানা সময়ে আত্মহুতি দিয়েছি। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। এই কোটার আন্দোলনের মধ্যে আমাদের মাঝ থেকে তিন পুলিশ সদস্যকে হারিয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশের মনোবল মোটেও ভাঙেনি।

হারুন বলেন, যারা পুলিশকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, স্বপ্নের মেট্রোরেলসহ সরকারি স্থাপনায় নাশকতা চালিয়েছে। যারা এসবের নেতৃত্ব দিয়েছে, অর্থ আদানপ্রদান করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তারা যেখানেই থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *