সারাদেশ

জাতীয় সংগীত ও সংবিধান পরিবর্তন চান আযমী

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ও সংবিধান পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। দীর্ঘ আট বছর পর গত ৭ আগস্ট গুপ্ত বন্দিশালা আয়নাঘরের অন্তরাল থেকে মুক্তি পান তিনি। এরপর এই প্রথম সাংবাদিকদের নিজের অভিজ্ঞতা ও নানা ইচ্ছার কথা তুলে ধরেন সেনাবাহিনীর সাবেক এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।

এসময় তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তন করা, নতুন সংবিধান প্রণয়নসহ সহ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সঠিক সংখ্যা জরিপের মাধ্যমে নির্ধারণের দাবি জানান।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন আব্দুল্লাহিল আমান আযমী।

আমান আযমী বলেন, ‘১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গ-রদ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। এই জাতীয় সংগীত দুই বাংলা এক করার জন্য। আমরা কি দুই বাংলা এক হতে চাচ্ছি? আমরা কি স্বাধীন বাংলাদেশ রাখতে চাই, নাকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গীভূত রাজ্য হতে চাই?

‘আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছি, স্বাধীন বাংলাদেশ থাকতে চাই। এই জাতীয় সংগীত আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের পরিপন্থি। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি আমাদের নতুন জাতীয় সংগীত তৈরি করা হোক।’

বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, “১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেড নিয়েছিল পাকিস্তানের সংবিধানের অধীনেই পাকিস্তান রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য, স্বাধীন সংবিধান রচনা করে নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি- আলহামদুলিল্লাহ।

‘কিন্তু তারা জনগণের কাছ থেকে নতুন সংবিধান প্রণয়ণের কোনো ম্যান্ডেড নেয়নি। সুতরাং এই সংবিধান আমার দৃষ্টিতে বৈধ নয়। নতুন করে একটা কমিটি করে নতুন সংবিধান তৈরি করা হোক, এটা বাতিল করা হোক।’

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার থাকা অবস্থায় ২০০৯ সালে বরখাস্ত হন আমান আযমী। ২০১৫ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের তথ্যকে ‘কাল্পনিক’ বলে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচিত হয়েছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আবারও একই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব সাহেব ৩ লাখ বলতে গিয়ে ৩ মিলিয়ন বলেছেন এবং এটাই ৩০ লাখ হয়ে গেছে। কোনো জরিপ ছাড়া ৩০ লাখ শহীদ বলে বলে তারা মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।’

‘আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আপনারা জরিপ করে বের করেন, একচুয়ালি ৩০ লাখ হোক আর ৩ কোটি হোক। আমার জানামতে, এটা ২ লাখ ৮৬ হাজার। তারা ৩ লাখকে ৩০ লাখ বানিয়ে ফেলেছে। এখনো সময় আছে, জাতিকে সত্য ইতিহাস জানতে দিন। আমাদের নতুন প্রজন্মকে মিথ্যার উপরে আপনারা গড়ে তুলতে দেবেন না। সত্যিকার একটা জরিপ করে আপনারা ব্যবস্থা করেন।’

আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, ২০১৬ সালের ২২ অগাস্ট তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরের বছরগুলোতে আটকে রেখে চালানো হয় নির্যাতন। দুটি কারণে আমাকে তারা গুম করে রেখেছিল। আমার পৈত্রিক পরিচয় এবং আমি ভারতবিরোধী। আমি আমার মায়ের সঙ্গে খেতে বসেছিলাম, এ সময় সরকারের গুণ্ডাবাহিনী- আমি গুণ্ডাবাহিনী বলছি এজন্য যে মামলা ছাড়া, ওয়ারেন্ট ছাড়া উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হল গুণ্ডাদের কাজ। এই কাজ যেই করেছে তারা সরকারের গুণ্ডাবাহিনী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গুম থাকাকালীন মৃত্যুর আতঙ্কে ঘুমাতে পারেননি জানিয়ে আমান আযমী বলেন, ‘আমাকে যে ঘরে রাখা হয়েছিলো, ‘সারারাত পায়ের আওয়াজ শুনলেই মনে হত আমাকে বুঝি তারা ক্রসফায়ারে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাহাজ্জুদ পড়ে দোয়া করেছি, আল্লাহ এ নামাজ যদি আমার শেষ নামাজ হয়। জালেমদের হাতে যদি আমার মৃত্যু হয়, আমাকে শহীদের মর্যাদা দিও। আর আমার লাশ যেন কুকুর-বিড়াল না খায়। আমার লাশ আমার সন্তানদের কাছে পৌঁছে দিও।’

আট বছর পৃথিবীর আলো দেখেননি জানিয়ে আযমী বলেন, ‘আমি গেল আট বছর সেখানে বন্দি থাকা অবস্থায় আকাশ দেখিনি, সূর্য দেখিনি। মাঝে মাঝে তারা চোখ এমনভাবে বাঁধতো, মনে হত আমার চোখের মনি ফেটে যাবে। হাতকড়া পরা থাকতে থাকতে হাতে ঘা হয়ে যেত। আট বছর আমি এক অন্ধকার ঘরে ছিলাম, পৃথিবীর কিছুই আমি দেখতে পাইনি এ সময়।’

গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের দুই দিন পর বাড়ি ফিরেন আমান আযমী। তিনি বলেন, ‘ফিরে এসে আমি জানতে পেরেছি, তারা আমার স্ত্রীর সাথেও চরম দুর্ব্যবহার করেছে। তাকেও তারা উঠিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। আমার বাসার যুবতী কাজের মেয়ে, তার গায়েও তারা হাত উঠিয়েছে। আমার বাসায় যে আমাদের দেখাশুনা করে, আমাদের ম্যানেজার- তাকে ফেলে তার বুকের ওপর লাফিয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *