সারাদেশ

রংপুরে রঙিন ফুলকপির পরীক্ষামূলক চাষেই মিলেছে সাফল্য

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবহার হার কমছে। ফলে বেড়েছে জন্মহার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রকাশনার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। এ বছর দেশের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারী-পুরুষের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ছিলো ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ ২০২১ সালেই তা ছি ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ২০২০ সালে দেশের জন্মহার ছিলো ১৮ দশমিক ১ শতাংশ যা ২০২২ সালে ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৮ শতাংশে। জন্মহারের এই উর্ধ্বহার এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহারের নিম্নহারকে উদ্বেগের মনে করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। করোনা মহামারির সময়ে লকডাউনের কারণে ঘরে থাকা এবং যৌন সম্পর্কের হার বেড়ে যাওয়াকে কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। কেউ কেউ মনে করছেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির দাম বেড়ে যাওয়াও, এর ব্যবহার কমে যাওয়ার একটি কারণ। যা জন্মহার বাড়িয়েছে।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহারে অনীহা শহরের তুলনায় গ্রামে কমছে বেশি হারে। ১০ বিভাগীয় জেলার মধ্য সবচেয়ে কমেছে রংপুরে। দেশের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারী-পুরুষের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার ২০১৮ সালে ছিল ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ। ফলে গত পাঁচ বছরে প্রথম তিন বছর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়লেও পরের দুই বছর তা কমে গেছে। গত এক বছরে দেশের গ্রামাঞ্চলে এই হার কমেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

২০১৮ সালে দেশের গ্রামীণ এলাকায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার ছিলো ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ। একই সময়ে শহরেও এর ব্যবহার ছিল ৬২ দশমিক চার শতাংশ। সারাদেশের গড় ছিল ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ। পরবর্তী তিন বছরে ২০২১ সালে এই পদ্ধতির ব্যবহার গড়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এবং শহরের তুলনায় এগিয়ে যায় দেশের গ্রামাঞ্চল। যা ছিলো আশা জাগানিয়া। সে সময় গ্রামে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবহার ছিল ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর শহরের ছিলও ৬৫ শতাংশ। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই ২০২২ সালে এসময় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমে যায় ২ দশমিক ৩ শতাংশ। গ্রামে এর ব্যবহার নেমে আসে ৬২ দশমিক ৯ শতাংশে। আর শহরে তা কমে হয় ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ। মাত্র এক বছরে শহরে ০ দশমিক ৭ শতাংশ কমলেও গ্রামে করে যায় ২.৮ শতাংশ।

বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায় রংপুরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি। যে হার ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম খুলনায় ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ নারী-পুরুষ জন্মনিয়্ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার করেন।

জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবহার কমে যাওয়ার অনিবার্য ফল হিসেবে দেশে জন্মহারও বেড়ে গেছে। বিবিএসের জরিপ দেখাচ্ছে, ২০২০ সালে দেশের জন্মহার ১৮ দশমিক ১ শতাংশ যা ২০২২ সালে ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এক্ষেত্রেও দেখা যায় শহরের তুলনায় গ্রামের জন্মহার বেড়েছে। ২০২২ সালে শহর এলাকায় শিশু জন্মহার ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর গ্রামীণ এলাকা এই হার ছিলও ২০ দশমিক ৮ শতাংশ।

বিবিএসের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, দেশে ২০ থেকে ২৪ বছরের প্রতি হাজার প্রজননক্ষম নারীর বিপরীতে ২০২০ সালে জন্ম নেয় ১২৬ শিশু। এই সংখ্যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৭ জনে। ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীমার প্রতি হাজার নারীর ক্ষেত্রে ২০২০ সালে শিশু জন্ম নেয় ১০৯জন যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮ জনে। অন্যদিকে প্রতিহাজার প্রজননক্ষম ৩০ থেকে ৩৪ বছরের নারীরা ২০২০ সালে জন্ম দিয়েছেন ৬৩টি শিশু। যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ জনে।

সর্বশেষ প্রকাশনায় বিবিএস বলছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে মানুষ সনাতন পদ্ধতি ছেড়ে আধুনিক পদ্ধতি বেশি নিচ্ছেন। তবে সেখানেও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবহারের হার কমেছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

জন্মনিয়ন্ত্রণের সেবাগুলো হলো: খাওয়ার বড়ি, কনডম, দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতির ইনজেকশন, ইন্ট্রা–ইউটেরিন ডিভাইস (আইডি) বা কপার টি, ইমপ্ল্যান্ট, স্থায়ী পদ্ধতি ও জরুরি বড়ি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে জরুরি বড়ি নেওয়ার হার ব্যাপকহারে বেড়েছে। তাছাড়া দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির সাথে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সেটা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) যেসময়ে তার শুমারি করে ওই সময়কাল ছিলও বৈশ্বিক করোনাকাল। লকডাউনের কারণে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি একেবারে স্থবির হয়ে গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে করোনার ওই সময়ে লকডাউন থাকায় জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবা নেওয়ার হার আরও কমে যায়। তাতেই এই অতিরিক্ত গর্ভধারণ হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির আশংকা করছেন তারা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সাধারণ ছুটির সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সংগ্রহ করতে না পারায়, এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে করোনার ওই সময়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার কমে যাওয়ায় দেশে জন্মহার বৃদ্ধি ছিলও উদ্বেগজনক।

তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহারের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপশন সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রোগ্রামের সহকারী পরিচালক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বার্তা২৪ কে বলেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার আসলে ওই ভাবে কমেনি। পরিবার পরিকল্পনা এখন বাংলাদেশ রোল মডেল। বিভিন্ন সময় একাধিক পুরস্কারও পেয়েছি আমরা।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এই সহকারী পরিচালক আরও বলেন,পরিবার পরিকল্পনা সবার নিজস্ব পছন্দ, এখানে কাউকে কোন কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়না। যার যেটা পছন্দ সে সেটা নিবে। কেউ কনডম ব্যবহার করে সস্তুষ্ট কেউ আবার বড়ি নিয়ে। কেউ হয়তো ইনজেকশন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে যে যেটা পছন্দ করছে তাকে সেটা দেওয়া হচ্ছে। প্রচার তো আছে গ্রামের যে কমিউনিটি ক্লিনিক, এনজিও, আমাদের বিভিন্ন সংস্থা থেকে মানুষ সেবা পায়। যে যেভাবে চাচ্ছে ওইভাবে সেবা পাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীর বার্তা২৪ কে বলেন, শিক্ষিত ও সচেতন গোষ্ঠীর মধ্য স্বপ্রণোদিতভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু আমাদের প্রধান লক্ষ্য প্রান্তিক জনগণের জন্মের হার অনেক বেশি। তাদের মধ্য জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সম্প্রসারিত করার উদ্যোগে ও স্বল্প মূল্য বা বিনামূল্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি দেওয়া জরুরি। জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহারের পদ্ধতি কমে যাওয়া হচ্ছে দেশের জনগণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। আমাদের এই ৫৪ থেকে ৫৫ হাজারের বর্গমাইলের দেশে যে জনসংখ্যা রয়েছে তা পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল দেশ। যদি আরও জনসংখ্যা বাড়ে তাহলে এই চাপ দেশের জন্য সম্ভব না। দেশকে ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য অন্তত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সূদৃড়ভাবে প্রয়োগ করতে হবে, এটি প্রয়োগ করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, মানুষ তো প্রথমে ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করবে। অর্থ কম ব্যয় করতে চাইবে। আমাদের প্রস্তাব থাকবে সরকারের অনেক অপ্রয়োজনীয় খাতে বরাদ্দ ও ভূর্তিকি রয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করে দ্রুত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সুলভমূল্য বা বিনামূল্যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করতে করা।

এই পদ্ধতি ব্যবহার কমে যাওয়ার পিছনে কোন ঘাটতি আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা বেশ কয়েক বছর লক্ষ্য করেছি, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রচার ও মানুষকে মোটিভেট করার কার্যক্রম ধীরে ধীরে কমে আসছে। যা করোনাকালে পুরো থমকে যায়। এই উদ্যোগকে নতুন উদ্দ্যমে প্রচার শুরু করা প্রয়োজন। শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের মাঝে এই প্রচারের প্রয়োজন না থাকলেও এটি প্রান্তিক মানুষ যারা শিক্ষার বাইরে ও দারিদ্রসীমার নিছে মানুষদের জন্য প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন। এই বিষয় নিয়ে নতুন করে জোয়ার শুরু করা প্রয়োজন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *