সারাদেশ

বয়কটের নামে বিএনপি বাজার ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে: কাদের

ডেস্ক রিপোর্ট: এক সময়ের জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়া-লোহাগাড়া নিজের দশ বছরে শাসনামালে টুঙ্গিপাড়ার মতো হয়ে গিয়েছিলো বলে মন্তব্য করেছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে হেরে যাওয়া নদভী বলছেন, ‘আমি ২০১৪ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে এখানে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের প্রোগ্রাম করা যেত না। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর এত এত অনুষ্ঠান হয়েছে সাতকানিয়া টুঙ্গিপাড়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবারের নির্বাচনের পর এখন আর সেই সাতকানিয়া-লোহাগাড়া নেই। এখানে এখন আর আওয়ামী লীগ নেই। সবাই জামায়াত হয়ে গিয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নৌকার পক্ষে কাজ করা নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে জামায়াত-শিবিরের দুর্গ থেকে আওয়ামী লীগের দুর্গে পরিণত করেছিলাম। কিন্তু এখন সেই সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় স্বাধীনতার প্রতীক নৌকাকে পরাজিত করার জন্য জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আঁতাত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব নির্বাচন করেন। যেভাবেই হোক তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর থেকে এমপির প্রত্যক্ষ মদদে নৌকার পক্ষে কাজ করার অপরাধে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও মামলা করছে।’

জামায়াতের সঙ্গে এমপি সমাঝোতা করছেন অভিযোগ তোলেন আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে এখন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় নৌকা নেই, নৌকা নেই মানে আওয়ামী লীগ নেই। স্বতন্ত্র আছে, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, স্বতন্ত্রও নেই, জামায়াত আছে। এখন জামায়াতের এমন কোনো ক্যাডার বাকি নাই, যারা মাঠে নেই। আর শোনা যাচ্ছে জামায়াতের সঙ্গে তারা সমাঝোতাও করেছেন। সেই সমাঝোতা হলো উপজেলা চেয়ারম্যান জামায়াতকে দিয়ে দেবে। কেননা জাতীয় নির্বাচনের সময় নাকি কথা দিয়েছে, আমরা এমপি নেব, তোমরা (জামায়াত) উপজেলা চেয়ারম্যান।’

বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মোতালেবকে জামায়াতের এমপি সম্বোধন করে নদভী বলেন, ‘নির্বাচনের পর থেকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় জামায়াত তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। শিবির কয়েক হাজার মানুষ নিয়ে মিছিল করেছে। মনে হচ্ছে তারা এখান থেকে ইসলামী স্টেটের কাজ শুরু করেছে। তাহলে স্বতন্ত্র এমপি সাহেব সরকারের এমপি, নাকি জামায়াতের এমপি-আমি জানি না।’

অবশ্য এমপির চেয়ে নদভীর ক্ষোভের তীর বেশি ছিল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ডা. আ.ম.ম মিনহাজুর রহমানের দিকে। মিনহাজুর জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএম মোতালেবের প্রধান নির্বাচনী স্বমন্বয়কারী ছিলেন।

মিনহাজুরকে ‘সন্ত্রাসী গডফাদার’ উল্লেখ করে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আজকের এই অরাজকতার মূল নায়ক হচ্ছে একজন সন্ত্রাসী গডফাদার। তার কাজ হলো কেউ এমপি হলে তার কাঁধে ভর করে সুযোগ-সুবিধা আদায় করা, অন্যের জমি দখল করা, টিআর, কাবিখা নিয়ে সেগুলোর অর্থ লুটে খাওয়া। ২০১৪ সালে আমি যখন এমপি নির্বাচিত হই তখন তিনি আমার কাছে আসেন। তখন আমার সঙ্গে ছিলেন। একবার আমি একটি প্রকল্প উদ্বোধন করতে গেলে তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে সেখানে চলে এসেছিলো। অস্ত্রশস্ত্র তো লুকিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু তা না লম্বা লম্বা অস্ত্র তারা প্রকাশ্যে দেখাচ্ছিল। এরপর থেকে তাকে আমার কাছে ঘেঁষতে দেইনি।’

সরকারি কোনো প্রকল্পের এক টাকার অনিয়ম প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি করা ছেড়ে দেবেন বলে ঘোষণা দিয়ে নদভী বলেন, ‘কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে সরকারি কোনো প্রকল্পের এক টাকার অনিয়ম আমার হাত দিয়ে হয়েছে, আমি রাজনীতি করা ছেড়ে দেব।’

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুহাম্মদ ইদ্রিসসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *