বিনোদন

সিনেমা স্টাইলে প্রকাশ্যে সোনালী ব্যাংক লুট করে সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল

ডেস্ক রিপোর্টঃ বান্দরবানের রুমায় উপজেলা প্রশাসন কমপ্লেক্স ভবনে হামলা চালিয়ে সিনেমা স্টাইলে প্রকাশ্যে সোনালী ব্যাংক লুট করে নিয়ে গেছে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। এসময় তারা ব্যাংকের ম্যানেজার মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত ইউএনও) মো. দিদারুল আলম।

জানা গেছে, মাসের প্রথম দিকে উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য ওই ব্যাংকে প্রচুর টাকা জমা ছিল।

রাত ৯ টার দিকে দুবৃর্ত্তরা প্রথমে উপজেলা প্রশাসন কমপ্লেক্সের মসজিদে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। মসজিদের সকল মুসল্লীদের মোবাইল ফোন ও সাথে থাকা টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে তাদের জিম্মি করে। তারপর অস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক ছড়ায়।

তখন নামাজের জন্য অনেক কর্মকর্তারা সেখানে ছিলেন। নামাজ পড়তে যান সোনালী ব্যাংকের রুমা উপজেলা শাখার কর্মচারীরা। এ সময় আনসারের ৪ সদস্য ব্যাংকের পাহারায় ছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রায় ১০০ জন অস্ত্রধারী ব্যাংকে আক্রমণ করে। প্রথমে তারা ব্যাংকের পাহারায় থাকা আনসার সদস্যদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে বেঁধে রাখে। অস্ত্র হাতে ব্যাংক ম্যানেজারকে জিম্মি করে ব্যাংকে নিয়ে যায় এবং লকার খুলিয়ে তারা ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে লকার ভেঙে টাকা লুট করে।

ডাকাতরা ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল অস্ত্র লুট করে। তারা পুলিশের দুটি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, আটটি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি এবং আনসারের চারটি শর্টগান ও ৩৫ রাউন্ড গুলি লুট করেছে। ব্যাংকে প্রবেশ করে সন্ত্রাসীরা কম্পিউটার ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে।

ঘটনার সময় রুমা উপজেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল এবং সেই সাথে ওই সময়ে নামাজে ব্যস্ত ছিল ব্যাংকের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশ এবং কর্মচারীরা। ঠিক এই সময়ে উপজেলা সদরের ব্যাথেল পাড়া এলাকা থেকে প্রায় ১০০ জনের সশস্ত্র একটি সন্ত্রাসী দল উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশে সোনালী ব্যাংকে হানা দিয়ে অস্ত্র ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ওই এলাকায় যারা ছিল তাদেরকে মারধর করে সন্ত্রাসীরা। তাদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেই সন্ত্রাসীরা। রুমা উপজেলা বাজার থেকে উপজেলা কমপ্লেক্স এবং সোনালী ব্যাংকটি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি থাকায় সন্ত্রাসীরা এই সুযোগটি নিয়েছে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।

ব্যাংক থেকে টাকা লুট করার সময় অস্ত্রধারীদের ৪০ থেকে ৫০ জন বাইরে পাহারায় ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় তারা আনসারের ৪টি অস্ত্রও নিয়ে যায়। ব্যাংক লুট করতে অস্ত্রধারীরা প্রায় আধা ঘণ্টা সময় নেয় বলেও জানা গেছে।

রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শৈবং মারমা বলেন, সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা নামাজের যাওয়ার পর সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের টাকা লুট করে।

ব্যাংক থেকে কত টাকা লুট হতে পারে জানতে চাইলে সোনালি ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজার ওসমান গনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজই নতুন টাকার চালান এসেছিল। ঠিক কত টাকা লুট হয়েছে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। খোঁজ খবর নিয়ে এটি পরে জানানো হবে।’

ঘটনাটি কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ঘটিয়ে থাকতে পারে ধারণা করছে স্থানীয়রা। তবে এর আগে এই সংগঠনটি ব্যাংক ডাকাতি করবে বলে এরকম একটি কথা রটেছিল এলাকায়।

এ ঘটনার পর জেলাশহর এবং উপজেলায় ব্যাংকগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এটিএম বুথগুলোতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এদিকে শান্তি রক্ষা কমিটির সদস্যদের রাতে ডেকে কথা বলেছে গোয়েন্দা সংস্থা গুলো কর্মকর্তারা। এ ঘটনার সাথে কেএনএফ জড়িত কিনা এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে প্রশাসনে।

জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, লুটের টাকা কী পরিমাণ এটি এখনো পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায়নি, যেহেতু ব্যাংক ম্যানেজারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পুরো বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে কেএনএফ এর সাথে শান্তি কমিটির সাম্প্রতিক বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমঝোতা হলেও এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রুমার ব্যাথেল পাড়ায় সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত শান্তি কমিটির সাথে কেএনএফ-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংঘাতে না জড়ানো ও উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এ আলোচনার মধ্যেই এ ঘটনা নিয়ে প্রশাসনসহ স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত এ ঘটনা নিয়ে কেএনএফের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তে আমরা কাজ করছি। ব্যাংক থেকে ঠিক কত টাকা লুট হয়েছে তা ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আসলে বলা যাবে। ঘটনার পর থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ নিরাপত্তা জোরদার করে রেখেছে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) বান্দরবানের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রুমা উপজেলা পরিদর্শন করবেন বলে জানা গেছে।

এছাড়া বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কেএনএফ কর্তৃক সোনালী ব্যাংক ডাকাতি, সরকারি অস্ত্র লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা। ৩ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার সকাল ১১ টায় বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪ এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *