সারাদেশ

‘স্বাস্থ্যসেবায় অর্জন দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে’

ডেস্ক রিপোর্ট: মেহেরপুরের গাংনী থানাপাড়ার মোখলেছুর রহমান একটি কোম্পানির সেলস ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। তার বন্ধু সার্কেলের বেশ কয়েকজন মিলে প্রায় ২ লাখ টাকা তুলে একটি গরু কিনেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতিতে বেসরকারি চাকরিজীবীদের মানিয়ে চলা বেশ কষ্টকর। তাই গ্রুপ ভিত্তিক গরু কিনে ঈদের মাংসের চাহিদা মেটাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে সাশ্রয়ী দামে ৬৫০ টাকার মধ্যে প্রতি কেজি তারা মাংস পাবেন। আবার নিজেদের পছন্দের গরু কেনার কারণে মাংস হবে নিরাপদ।

মোখলেছুর রহমান বলেন, সবাই কসাইদের কাছে জিম্মি। মেহেরপুর জেলা প্রশাসন ৬৮০ টাকা প্রতি কেজি গরুর মাংসের দর নির্ধারণ করেছে। কিন্তু কসাইরা বিক্রি করছে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এতে কসাই আর গরুর মাংস বর্জনের দিকে যাচ্ছিলেন অনেকে। তবে গ্রুপ ভিত্তিক গরু কিনে মাংস ভাগ করে নেওয়ার বিষয়টি কসাইদের দৌরাত্ম কমাতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন তিনি।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) মেহেরপুর জেলার সবচেয়ে বড় পশু হাট বামন্দী-নিশিপুর গোহাটে কথা হয় মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে। তার মত অনেকে একইভাবে গরু কিনতে ভিড় করেন এ হাটে।

বামন্দী-নিশিপুর পশুহাটে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভিন্ন গ্রাম থেকে গ্রুপ ভিত্তিক গরু কিনতে ভিড় করেছেন অনেকে। যা হাটের প্রচলিত দৃশ্যই পাল্টে দিয়েছে। স্থানীয় ও বাইরের গরু ব্যাপারীদের চেয়ে গ্রুপ ভিত্তিক গরু কেনার দৃশ্যই চোখে পড়ে অনেক বেশি। গ্রুপের সামর্থ্য অনুযায়ী ৯০ কেজি থেকে শুরু করে ৬/৭ মণ পর্যন্ত মাংস হতে পারে এমন গরু কেনা চলছে।

জানা গেছে, বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থাপনার বাইরের একই ধারণা প্রসার লাভ করেছে মূলত সোস্যাল মিডিয়ায় গরুর মাংস কিংবা কসাই বর্জনের ঘোষণা থেকে। গরু পালনকারীদের রক্ষায় গরুর মাংস বর্জন না করে কসাই বর্জনের দিকে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। যাদের সংখ্যা যে অনেক তা বামন্দী-নিশিপুর গোহাটের চিত্রই বলে দিচ্ছে। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মধ্য দিয়ে কসাই সিন্ডিকেটের ওপরে একটা বড় ধরনের ধাক্কা যাবে বলে মনে করছেন হাট ইজারাদার সংশ্লিষ্টরা।

বামন্দী-নিশিপুর গোহাটে গরু কিনতে আসা কুষ্টিয়া সদরপুরের রাজ্জাক ও মাসুদ রানা জানান, কসাইদের কাছ থেকে তারা মাংস কেনেন না তিন বছর ধরে। প্রতিটি উৎসবে কসাইরা বেপরোয়াভাবে দাম হাঁকে। বাধ্য হয়ে ৩০ জনের একটি গ্রুপ গঠন করেছেন। সাপ্তাহিক চাঁদা তুলে গরু কিনতে আসেন। দেখে শুনে বুঝে পছন্দের পশুটি কিনেছেন। এতে অনেক সাশ্রয় বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে সব ধরনের পশুর দাম একটু বেশি বলে জানালেন তারা।

গরু বিক্রেতা গাড়াবাড়িয়ার আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি তার নিজের বাড়ির গরু এনেছেন হাটে। কয়েকহাট আগে গরুর যা দাম ছিল এখন তার চেয়ে অনেক কম। আমদানি বেশি হওয়ায় দর পতন বলে জানালেন তিনি। তবে কসাই সিন্ডিকেট ভাঙতে যে গ্রুপ গঠন করা হয়েছে এটাকে সাধুবাদ জানান এই গরু বিক্রেতা।

একই কথা জানালেন গরু ব্যবসায়ী কামারখালির আনোয়ার ও সহড়াবাড়িয়ার আশরাফুল।

গরু পালনকারী কয়েকজন জানান, স্থানীয় ব্যাপারীরা গ্রাম থেকে গরু কিনে হাটে তোলে। এতে গরুর দাম বেড়ে যায়। গ্রুপ ভিত্তিক গরু কেনার ঘটনায় তাই পশু পালনকারীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। হাটে গরু তুলে সরাসরি গ্রুপ সদস্যদের সঙ্গে বিক্রি করতে পারায় মধ্যস্বত্ব ভোগী ব্যাপারীদের দৌরাত্ম থাকছে না। ফলে গরু পালনকারী ভালো দাম পাচ্ছেন আবার ক্রেতারাও প্রচলিত দরের চেয়ে কম দামেই কিনতে পারছেন।

জেলার ঐতিহ্যবাহী বামন্দী পশু হাটের ইজারদার সিরাজুল ইসলাম জানান, ঈদের আগেই জমে উঠেছে পশুহাট। বেচা বিক্রিও বেশ ভাল। এবার জনগণ অনেকটা সচেতন। বিভিন্ন গ্রাম মহল্লা থেকে লোকজন আসছেন দলবদ্ধ ভাবে। এরা গ্রুপ করে গরু কিনছেন। পশু পালনকারীরাও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। কসাইদের হাতে জিম্মি না হয়ে নিজেরাই গরু কিনে মাংসের ব্যবস্থা করার বিষয়টি সাধুবাদ জানান এই হাট মালিক।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *