জয়পুরহাট

জয়পুরহাটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ইমাম-মুয়াজ্জিনরা

ডেস্ক রিপোর্ট:

মসজিদে ইমামের নেতৃত্বে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করে থাকেন। অপরদিকে মুয়াজ্জিনরা আজান দিয়ে মানুষকে নামাজে আসার আহ্বান জানান। তারা নিজেরা ইসলাম ধর্ম বিষয়ক জ্ঞান রপ্ত করেন। আবার নামাজ পড়ানোর পাশাপাশি সেগুলো মানুষের মাঝে প্রচারও করেন। সমাজে তাদের আলাদা মর্যাদা রয়েছে। তবে সমাজে ইসলামের অধিক জ্ঞানসম্পন্ন ও ভালো মর্যাদা থাকার পরও চাপা কষ্টে চলতে হয় তাদের।

কেননা সমাজের অন্য চাকরিজীবীদের মতো তেমন বেতন পান না মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনরা। তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেতনে মসজিদের দায়িত্ব পালন করেন তারা। আর সেই টাকায় চালাতে হয় সংসার, মেটাতে হয় পরিবারের সকল সদস্যদের চাহিদা। এতে টানাপোড়েন আর হিমশিম খেতে হলেও ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যান তারা।

হাফেজ মো. রবিউল ইসলাম। তিনি একাধারে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং মাদরাসার শিক্ষক। এই তিনটি পদে চাকরি করে বেতন পান ১০ হাজার টাকা। আর এই টাকা দিয়েই পাঁচ সদস্যের সংসার চালাতে হয় তাকে। এর মধ্যে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার ব্যয়, চাল-ডাল, সবজি, মাছ-মাংসসহ খাদ্যপণ্য কেনা, এমনকি সকলের পোশাকও দিতে হয় তাকে। আর এভাবেই চলছে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার শালাইপুর বাজার মসজিদ ও নুরানি হাফেজিয়া মাদরাসায় ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং শিক্ষক পদে চাকরি করা হাফেজ মো. রবিউল ইসলামের সংসার। তিনি পাঁচবিবি উপজেলার গোহারা গ্রামের বাসিন্দা। কখনও মসজিদ-মাদরাসায় থাকেন আবার কখনও বাড়ি থেকেই যাতায়াত করেন।

হাফেজ মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এখানে আছি। মাদরাসা ও মসজিদের তিনটি দায়িত্ব পালন করছি। সব মিলিয়ে আমার বেতন ১০ হাজার টাকা। এই অল্প বেতনে সংসার চালানো খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ সদস্যের সংসারে আমিই একমাত্র উপার্জন করি। সকলের পোশাক, কেউ অসুস্থ হলে ওষুধ আমাকেই কিনতে হয়। আবার এদিকে বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি। বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করি। ডিম আর মাছ একটু খাওয়া পড়ে কিন্তু গোস্ত খুবই কম কেনা হয়। কাউকে কিছু বলতেও পারি না। ভাতা যদি একটু বেশি হত তাহলে খুবই ভালো হত। আমাদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মাদরাসার শিক্ষকদের করুণ দশা চলছে।

জয়পুরহাট জেলায় দুই হাজার ৪০০টির মতো মসজিদ রয়েছে। আর প্রায় ৬৫০ জন শিক্ষক ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ এর আওতায় আছেন। গত বছর প্রায় ৮০ জন ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে অনুদান পেয়েছেন। আর জেলার পাঁচ উপজেলার ছয়জনকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে। মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা গড়ে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত মাসিক বেতন পান। এই বেতনে কষ্টে চললেও কাউকে মনের কথা বলতে পারেন না তারা।

অপরদিকে মাসে ৩ হাজার ২০০ টাকা বেতন পান কালাই পৌরসভার মূলগ্রাম পরশুল্লা আকন্দ জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. সুজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, এই টাকা দিয়ে বর্তমানে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। সেজন্য দিনমজুরের কাজ করি। সেই কাজও করতে হয় অর্ধবেলা পর্যন্ত। কেননা মসজিদের আজান দিতে হয়। আজান দিতে একটু দেরি হলে মুসল্লিরা দুটো কথা শুনিয়ে দেয়। আমার সংসারে বাবা, মা, দুই ছেলে, স্ত্রীসহ ছয়জন সদস্য রয়েছে। সকলের দায়িত্ব আমার কাঁধে। মসজিদ থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে চালের টাকাই হয় না। আবার সবজির বাজারও আছে। আগের দিনে ২০০ টাকা নিয়ে গেলে বাজার ভালোভাবে করা যেত। কিন্তু বর্তমানে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা নিয়ে গেলে সবজির বাজারও হয় না। আমাদের মতো লোকের জীবনযাপন করা অত্যন্ত কষ্টদায়ক। মাছ-গোস্তও তেমন কিনতে পারি না। পরিবারের সদস্যরা গরুর গোস্ত খেতে চাইলে এনেও দিতে পারি না। সবারই ভালো খেতে, ভালো থাকতে মন চায়। কিন্তু সাধ্য না থাকলে কোথা থেকে এনে দেব?

হাফেজ মো. রবিউল ইসলাম ও মো. সুজাউল ইসলামই নয়, তাদের মতো টানাপোড়ন আর করুণ দশায় চলছে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সংসার।

ভূতগাড়ি জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আব্দুল হামিদ বলেন, আমি মাসে পাঁচ হাজার টাকা হাদিয়া পাই। সংসারে তিনজন আছি। এই টাকা দিয়ে দশ দিনের খরচ চলে। গরুর গোস্ত অনেকেই কিনে, আর আমি তাকিয়ে দেখি। ভেতরে কষ্ট লাগে। মাছের বাজারে যাই, অনেকে মাছ কেনে, আমারও মন চাই। কিন্তু পকেটে টাকা না থাকলে কি আর কেনা হবে? বাড়িতে আমার ছোট বাচ্চা আছে, বাড়িতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু চায়। তেমন কিছু দিতে পারি না। কারণ পাঁচ হাজার টাকায় আমারই হয় না। বাজারে গিয়ে কি কিনব? মাছ কিনব, না পেঁয়াজ কিনব, না ঝাল কিনব? বিভিন্ন কাজে ইমাম, মুয়াজ্জিনদের প্রয়োজন হয়। এজন্য আপনারাও আমাদের দিকে একটু দেখবেন, এতে আল্লাহ্ খুশি হবে, আমরাও খুশি হব।

হোপেরহাট ডিইউ দাখিল মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্র আবু বক্কর সিদ্দিক। সে ছোটতারা গ্রামের বায়তূন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে। মাদরাসায় পড়াশোনার কারণে সে হোপেরহাট লিল্লাহ হাফেজিয়া মাদরাসায় থাকে। আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্বে আছি। আমি সাড়ে তিন হাজার টাকা মাসে পাই। আমি ছাত্র হওয়ায় এই টাকা দিয়ে আমার কোনোরকম চলে। তবে এই টাকা দিয়ে মুয়াজ্জিন বা ইমামতি করা সম্ভব হবে না। কারণ বিয়ে করলে স্ত্রীর খরচ, বাবা-মায়ের খরচ আবার সন্তান হলে তাদের খরচ। তখন এই রকম টাকা দিয়ে এরকম দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে যাবে।

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের যে সুদমুক্ত ঋণ আছে, তা খুবই সীমিত। বলা যায় এক শতাংশ। ইমাম-মুয়াজ্জিন আল্লাহর ইবাদতের কারণে অন্য পেশায় যেতেও পারে না। তাদের পরিশ্রম বেশি কিন্তু সে তুলনায় উপযুক্ত সম্মানী সমাজ থেকেও দেওয়া হয় না। রাষ্ট্র থেকেও দেওয়া হয় না।

মুয়াজ্জিন ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মাসে চার হাজার টাকা হাদিয়া (বেতন) পান ওমর ফরুক। তিনি পাঁচবিবি উপজেলার বড়পুকুরিয়া বায়তুল মামূর জামে মসজিদের এই দুই পদে আছেন। ওমর ফারুক বলেন, মসজিদের বেতনের টাকা দিয়ে আমার সংসার চলে না। তাই পাশাপাশি আমি একটি প্রাইভেট স্কুলে চাকরি করি। এই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে মাসে সাড়ে ৮ হাজার টাকা পাই। এ ছাড়া সংসারের কিছু কাজও করি। এসব মিলে যা টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। এতে আমার জন্য খুবই কষ্টকর। বর্তমানে বাজারের বিভিন্ন কিছুর দাম উর্দ্ধগতি। নাভিশ্বাসের মতো অবস্থা। আমাদের বেতন যদি সামাজিকভাবে বা অন্য পেশার সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদের দিকে বিবেচনা করা হলে কষ্ট একটু হলেও মোচন হবে।

নামাবাঁশখুর জামে মসজিদের খতিব আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান। স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা ও তিনিসহ তার পরিবারের সদস্য মোট পাঁচজন। খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তিনি মাসে তিন হাজার টাকা পান। কিন্তু সেই টাকায় তার সংসারই চলে না। তবে তিনি সংসারের চাহিদা মেটানোর জন্য পাশাপাশি একটি ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভের দায়িত্ব পালন করেন।

এই খতিব বলেন, আমাকে যে সম্মানী দেওয়া হয়, তা দিয়ে আমার এক সপ্তাহের বাজারই চলে না। তাছাড়া পরিবারের সকল সদস্যদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আছে। সেজন্য আমাকে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে হয়েছে। একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করি এবং কৃষিকাজ করি। সেখান থেকে যে পরিমাণ টাকা আসে তা দিয়ে সংসারের খরচ চলে। বর্তমানে বলতে গেলে ইমামদের করুণ দশা চলছে। আমাদের সরকার অন্যান্য খাতকে অনেক মূল্যায়ন করছে। কিন্তু আমরা মূল্যায়ন পাচ্ছি না। যারা অন্য কোনো পেশার সঙ্গে জড়ায় না, তাদের জীবনযাত্রা খুবই দুর্বিষহ। ইমাম, মুয়াজ্জিনদের জন্য অতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এই খতিব।

দুই ছেলে ও স্ত্রীসহ চার সদস্যের সংসার বাবুল হোসেনের। তার দুই ছেলেকে পড়াশোনা করাতে মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। আবার সংসারের জন্য আলাদা খরচও আছে। কিন্তু তিনি কুসুম্বা জামে মসজিদের মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করে মাসে মাত্র দুই হাজার টাকা পান। এই দিয়ে তার কিছুই হয় না। এজন্য মুয়াজ্জিনের বেতন নয় কৃষির উপর নির্ভরশীল হয়েছেন বাবুল হোসেন। তিনি বলেন, মসজিদ থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয়। এর জন্য আমাকে জমি চাষ ও বাড়িতে দোকান করে চলতে হয়। গ্রামের মসজিদ হওয়ার কারণে এই দায়িত্ব পালন করছি।

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের চাওয়া

মসজিদের খেদমত করার সুযোগ পাওয়ায় আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া জানিয়ে পাঁচবিবির পানিয়ান দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করা শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার এই দেশের মানুষের জন্য বিধবা, বয়স্ক ভাতা থেকে শুরু করে অনেক কিছু করেছে। কিন্তু আমাদের যে মর্যাদা বা চাওয়া-পাওয়া এর খোঁজ-খবর সেভাবে নেওয়া হয় না। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু সুনজর দিত, যে তারা অল্প বেতনে কীভাবে চলে? আজকে বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বগতি। ভালো খাবার অনেক সময় খেতে পারি না। আমাদের খুব কষ্ট হয়। এজন্য সরকার যদি আমাদের প্রতি ভূমিকা রাখত, দেশে বিভিন্ন ভাতা চালু আছে। সেরকম ইমাম-মুয়াজ্জিনের জন্য যদি ভাতা চালু করত, তাহলে আমাদের চলা অনেকটা সহজ হত।

তিনি আরও বলেন, এখনকার সময় ৫ হাজার টাকা দিয়ে কীভাবে চলব? গরুর গোস্ত ৭২০ টাকা কেজি। কীভাবে কিনব? আমার পরিবারে ছয়জন সদস্য। তাদের সবকিছুই আমাকে দেখতে হয়। তারা তো সব কিছু বোঝে না। তাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। আমার পেশায় হলো ইমাম-মুয়াজ্জিন। অন্য কোনো কাজ সেরকমভাবে করা সম্ভবও নয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেছেন নাওডোবা গ্রামের আব্দুল মালেক। সেসময় তিনি খাবারের বিনিময়ে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর সামান্য কিছু টাকা পেতেন। বয়স বেশি হওয়ায় তিন বছর আগে এই দায়িত্ব থেকে সরে এসে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। আর মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার সময় বেতন পেয়েছিলেন ৩০০ টাকা। তিনি বলেন, আল্লাহ্পাক বলেছেন আমি মানুষ এবং জ্বিনকে পাঠিয়েছি শুধু আমার দাসত্ব এবং গোলামি করার জন্য। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বর্তমান আলেম সমাজ গুরুত্বহীন। এ দেশে সব দায়িত্বের মধ্যে কঠিন দায়িত্ব মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করা। সেই মুয়াজ্জিনকে কমিটি থেকে যে বিল-বেতন দেওয়া হয়, তা সংকীর্ণ। এই বিল বেতন দিয়ে তার সংসার চালানো খুবই কঠিন। সমাজের সচেতন যারা আছেন, তারা যদি আমাদের মূল্যায়ন করতেন তাহলে অবশ্যই মুয়াজ্জিনদের সংসার সচ্ছল হত।

পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়া হয়। আমরাও সরকারের কাছে বিভিন্নভাবে আবেদন জানাচ্ছি যে, ন্যূনতম হলেও কিছু ভাতা ব্যবস্থা করা যায় কি না বলেছেন

মো. আনিসুজ্জামান সিকদার, পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিভাগীয় কার্যালয়, রাজশাহী।

জয়পুরহাট জেলা শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আল আমিন বলেন, একজন ইমামের পরিধি অনেক বড়। কিন্তু যে বেতন আছে তা দিয়ে কি একজন ইমামের হবে? এক্ষেত্রে সকল ইমামেরই সমস্যা। আমাদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট। তবুও আল্লাহপাক সহজ করে দেন। মানুষের চলার পথে সবকিছুতেই ইমাম-মুয়াজ্জিনের প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমাদের জীবনযাপনের বিষয়টি কষ্টকর, সেগুলো আমরা প্রকাশ করতে পারি না।

জেলায় ২ হাজার ৪০০টির অধিক মসজিদ

এ জেলায় ২ হাজার ৪০০টি মসজিদ রয়েছে বলে জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর  ৬৯৯টি, পাঁচবিবি উপজেলায় ৫৮১টি, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৩৪৬টি, কালাই উপজেলায় ৩৮৮টি ও আক্কেলপুর উপজেলায় ৩৮৬টি। পৌরসভা ভিত্তিক হিসেবে জয়পুরহাট পৌরসভায় মসজিদ রয়েছে ৯৫টি, পাঁচবিবি পৌরসভায় ৪৮টি, ক্ষেতলাল পৌরসভায় ৫৮টি, কালাই পৌরসভায় ৪০টি এবং আক্কেলপুর পৌরসভায় ৫৪টি।

এ ছাড়া ইউনিয়ন হিসেবে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল ইউনিয়নে মসজিদ রয়েছে ৫৯টি, ভাদসায় ৯০টি, জামালপুরে ৬২টি, মোহাম্মদাবাদে ৫১টি, আমদইয়ে ৫৫টি, ধলাহারে ৬০টি, চকবরকতে ৪৮টি, দোগাছীতে ৯৯টি ও বম্বু ইউনিয়নে ৮০টি। পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নে ৪৪টি, আয়মারসুলপুরে ১০২টি, বাগজানায় ৫৪টি, আটাপুরে ৬১টি, ধরঞ্জীতে ৭৬টি, কুসুম্বাতে ৭৮টি, আওলাইয়ে ৬৫টি ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নে ৫৩টি। ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নে ৭২টি, আলমপুরে ৭৯টি, বড়াইলে ৫০টি, মামুদপুরে ৫৭টি ও তুলসীগঞ্জা ইউনিয়নে ৩০টি। কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নে ৮৮টি, আহম্মেদাবাদ-এ ৫৫টি, জিন্দারপুরে ৭৫টি, মাত্রাইয়ে ৬৪টি ও উদয়পুর ইউনিয়নে ৬৬টি। আর আক্কেলপুর উপজেলার সোনামুখী ইউনিয়নে ৫৭টি, রুকিন্দীপুরে ৬৭টি, তিলকপুরে ৭৩টি, রায়কালীতে ৭৪টি ও গোপীনাথপুর ইউনিয়নে ৬১টি মসজিদ রয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু মসজিদ নির্মাণাধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

এ জেলায় প্রায় ৬৫০ জন শিক্ষক ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ এর আওতায় আছেন। তাছাড়া গত বছর প্রায় ৮০ জন ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে অনুদান পেয়েছেন। আর জেলার পাঁচ উপজেলার ছয়জনকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া আছে।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

কালাই পৌরসভার মূলগ্রাম পরশুল্লা আকন্দ জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আলহাজ মাহফুজার রহমান বলেন, মসজিদের মুসল্লিদের কাছ থেকে কিছু টাকা করে আদায় করে আমরা মুয়াজ্জিনকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দিই। আর ইমামকে দিই ১৫০০ টাকা। আমার মসজিদের মুসল্লিদের অধিকাংশ গবির। বেতন চাইলে অনেকে দিতে চায় না। তারা বলে ভ্যান চালিয়ে দিনই যাচ্ছে না, আর বেতনের টাকা কেমন করে দেব? বেতনের কারণে অনেক সময় তারা নামাজও পড়তে আসেন না।

জয়পুরহাট জেলা ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, মসজিদ খোলা থেকে বন্ধ করা পর্যন্ত একজন মুয়াজ্জিনকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আবার নামাজ পড়ানোর জন্য ইমামদের মসজিদে আসতে হয়। তারা বাইরে কোথাও যেতেও পারে না। আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েও থাকতে পারে না। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোথাও যেতেও পারে না। এত পরিশ্রম করার পর তারা যে পারিশ্রমিক পান তা উল্লেখ করার মতো না।

তিনি আরও বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের যে সুদমুক্ত ঋণ আছে, তা খুবই সীমিত। বলা যায় এক শতাংশ। ইমাম-মুয়াজ্জিন আল্লাহর ইবাদতের কারণে অন্য পেশায় যেতেও পারে না। তাদের পরিশ্রম বেশি কিন্তু সে তুলনায় উপযুক্ত সম্মানী সমাজ থেকেও দেওয়া হয় না, রাষ্ট্র থেকেও দেওয়া হয় না। শহরের দেড়শ মসজিদে হয়ত মোটামুটি সম্মানী দেওয়া হয়। তবে এ জেলার গ্রামের দুই হাজারের বেশি মসজিদের সম্মানী খুবই কম। এখন গ্রাম পর্যায়ের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র থাকার কারণে বেশি টাকাও দিতে পারে না। টাকার কারণে গ্রাম পর্যায়ের অনেক মসজিদে একইজনকে দিয়ে ইমাম ও মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করা হয়। তাই সরকারি কোনো সুবিধা থাকলে ভালো হত। আমরা সরকারের কাছে অনেকবার দাবি তুলে ধরেছি। কিন্তু ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য তেমন কিছু করা হয়নি।

এ ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশন রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আনিসুজ্জামান সিকদার  বলেন, বিষয়টি নিয়ে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। কিছুদিন আগে এক লাখ ইমাম সম্মেলন থেকেও দাবি জানানো হয়েছে। তাছাড়া অনেক ইমাম ‘মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ এর আওতায় আছেন, তাদের সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। তাছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট করা হয়েছে, সেখান থেকে বছরে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার জনকে ৪-৫ হাজার করে সাহায্য দেওয়া হয়। ৩৬ মাসে শোধ করার শর্তে সুদমুক্ত একটি ঋণ কার্যক্রম আছে। প্রথমে ১৫ হাজার টাকা, পরে সেই টাকা শোধ করলে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অনেককে ২৫ হাজার টাকাও দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, এই দেশে প্রায় ৪ লাখ মসজিদ। এসব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের দাবি হলো তাদের ভাতা দেওয়া হোক। পাশের দেশের পশ্চিমবঙ্গে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা দেওয়া হয়। আমরাও সরকারের কাছে বিভিন্নভাবে আবেদন জানাচ্ছি যে, তাদের জন্য ন্যূনতম হলেও কিছু ভাতা ব্যবস্থা করা যায় কি না।

চম্পক কুমার।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় ডেইলি জয়পুরহাট-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *