সারাদেশ

ট্রেনে পায়ের আঙুল কাটা পড়েছে আনু মুহাম্মদের

ডেস্ক রিপোর্ট: সার্টিফিকেট বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী শেহেলা পারভীনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) রাতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ জানান।

তিনি বলেন, কারিগরি বোর্ডের সার্টিফিকেট বাণিজ্য মামলার প্রধান আসামি এ টি এম শামসুজ্জামান এবং সহযোগী আসামি সানজিদা আক্তার ওরফে কলি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই জবানবন্দির ভিত্তিতে শেহেলা পারভীনকে শনিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবিতে আনা হয়।

ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে শেহেলার বিরুদ্ধে গ্রেফতার এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে টাকা-পয়সা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। একই মামলায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামান, সাবেক কর্মচারী ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের সনদ তৈরির নিজস্ব কারখানায় নিয়োজিত কম্পিউটারম্যান ফয়সাল হোসেন, গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার ওরফে কলি, হিলফুল ফুজুল নামের কারিগরি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল সরদার গোলাম মোস্তফা ও যাত্রাবাড়ীর ঢাকা পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মাকসুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন রিমান্ডে আছেন।

১ এপ্রিল যেভাবে অভিযান শুরু-

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) জানান, গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম ১ এপ্রিল ভোররাত থেকে নজরদারিতে রেখে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুরের দক্ষিণ ও মধ্য পীরেরবাগ এবং আগারগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগী ফয়সাল হোসেনকে গ্রেফতার করে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারের সময় কাছাকাছি দুটি বাসায় তাদের হেফাজত থেকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, তৈরি করা শতাধিক সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিসি মশিউর রহমান আরও বলেন, এ সকল কম্পিউটার প্রিন্টার ল্যাপটপ দিয়ে গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি আসল সার্টিফিকেট, মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

এছাড়া সরকারি ওয়েবসাইটে, সরকারি পাসওয়ার্ড, অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্র করা সার্টিফিকেটগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলোকে সার্চ করলে সার্টিফিকেটগুলো সঠিক বলে প্রমাণিত হবে।

তিনি আরও জানান, একেএম শামসুজ্জামানের বাড়ি দিনাজপুরে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগদান করেছেন ২০০৯ সালে। বর্তমানে তার পদ সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার বিভিন্ন থানার আনাচে-কানাচে অবস্থিত কারিগরি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করা হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর, সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি, সেগুলোকে নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড দেওয়া, ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করা, কম্পিউটার সিস্টেম কোড সংরক্ষণ গোপনীয়তা বজায় রাখাসহ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সকল প্রকার ডিজিটালাইজেশন এবং কম্পিউটারাইজেশন মূল দায়িত্ব তার কাঁধে রয়েছে।

লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, সিস্টেম অ্যানালিস্ট হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি বছর কত হাজার পরীক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে, কতজন ফর্ম ফিলআপ করে রোল নম্বর পেয়েছে, কতজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি আবার কতজন কৃতকার্য ও অকৃতকার্য হয়েছে তার সব তথ্যই তার কাছে থাকতো। এ বিশাল তথ্যভাণ্ডার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্তৃপক্ষ, সিস্টেম কোড ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রতি সপ্তাহ প্রতিমাস এবং বছরে শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগীরা লাখ লাখ টাকার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বাণিজ্য করেছে।

গ্রেফতার শামসুজ্জামান অফিসের কিছু লোক এবং বাইরের বিভিন্ন বিভাগের কিছু দালালকে দিয়ে মার্কশিট ও সার্টিফিকেট তৈরির এই বাণিজ্য করে আসছে। দালালরা কখনো কখনো ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতো যে, তারা অরজিনাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট দিবে- যা অনলাইনে ভেরিফাইড হবে।

ডিবির এ কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালেও মার্কশিট ও সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামানকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বহাল হয়ে তিনি এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার সার্টিফিকেট-মার্কশিট বিক্রি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *