সারাদেশ

রাবি শাখা ছাত্রলীগের চার নেতা বহিষ্কার

ডেস্ক রিপোর্ট: গ্রীষ্মের তাপদাহে তপ্ত প্রকৃতি। প্রখর রোদে প্রকৃতি যখন পুড়ছে, সেই সময়ে আবির রাঙা রঙে সৌরভ ছড়াচ্ছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। কেড়ে নিচ্ছে সূর্যের সবটুকু উত্তাপ।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’ গানটির মতো যেন ভুবন ভুলাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরতে পরতে ফুটেছে এই টুকটুকে লাল কৃষ্ণচূড়া।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েকগুন। ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির অপরূপ রূপে রাঙিয়ে দিতেই যেন পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে লাল কৃষ্ণচূড়ার পসরা সেজেছে। নয়নাভিরাম এসব দৃশ্য দেখে দাবদাহের মাঝে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মনে এনে দিচ্ছে শিল্পের দ্যোতানা। এ যেন সিঁদূর লাল রঙে শিল্পীর রঙ-তুলিতে রাঙানো ক্যানভাস।

বছর জুড়ে সেজে থাকা মতিহারের ৭৫০ একরের এই সবুজ চত্ত্বরে আগুনঝড়া কৃষ্ণচূড়ায় এক নতুন নান্দনিকতা যোগ করেছে। শুধু কি কৃষ্ণচূড়া! এর সঙ্গে আরও ডানা মেলেছে ‘বাংলার চেরি’ খ্যাত বেগুনি জারুল আর ঝরনার ন্যায় হলদে সোনালি আভা ছড়ানো সোনালু। তপ্ত গ্রীষ্মের প্রখর তাপে সকল রুক্ষতা ছাপিয়ে কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর সোনালুতে পুরো ক্যাম্পাস সেজেছে বর্ণিল সাজে। চোখ ধাঁধানো এসব ফুলের বর্ণিল আভায় প্রত্যেকের নয়ন জুড়ায়। এ যেন হলুদ, লাল আর বেগুনি রঙে রাঙানো এক স্বর্গরাজ্য।

সোনালুর দোল লেগে প্রকৃতির প্রাণ দোলে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটের ডান পাশের দুটি গাছে, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পেছনে বৃহদাকার প্রায় ১৫টি গাছে, পূর্বপাড়া মসজিদের সামনে, বধ্যভূমি এলাকার পুকুর পাড়ে, নির্মাণাধীন শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান হলের পশ্চিম পাশে, স্টেশন বাজারে, পরিবহণ মার্কেটে, সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনের প্রবেশ পথে, শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবনের সামনে, উপাচার্য বাসভবনের ভেতরে এবং প্যারিস রোড সংলগ্ন বাইরের প্রাচীরের ধার ঘেষে প্রায় ১১টি গাছে, মন্নুজান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল, বেগম খালেদা জিয়া হল, তাপসী রাবেয়া হল এবং রোকেয়া হলের সামনেসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ফুটে থাকা লাল কৃষ্ণচূড়া তার আশপাশের এলাকাকে রাঙিয়ে তুলেছে।

কৃষ্ণচূড়া ছাড়াও ক্যাম্পাসের জারুল স্ট্রিট খ্যাত প্যারিস রোড থেকে বেগম খালেদা জিয়া হল হয়ে নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হলের রাস্তার দুই ধারে এবং চারুকলা থেকে ফ্লাইওভার পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে শোভা পাচ্ছে বেগুনি জারুলের ঝুমকো। এছাড়া ক্যাম্পাসের জুবেরী মাঠের পশ্চিম পাশে ফুটেছে কিছু সোনালু। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী বা দর্শনার্থীদের যেন হৃদয় কেড়ে নিচ্ছে নয়ন জুড়ানো এসব কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও সোনালু ফুল। সকালে এসকল গাছের নিচে ঝরে পড়া রক্ত লাল, বেগুনি এবং হলুদ পাপড়ি যেন বর্ণিল পুষ্পশয্যা। এসব গাছের নিচে শিক্ষার্থীরা আড্ডা আর খুনসুটিতেও মেতে উঠার পাশাপাশি বাহারি পোশাকে ফ্রেমবন্দিও করছেন নিজেদেরকে।

কৃষ্ণচূড়ার সাথে নিজেদেরও ফ্রেমবন্দি করছেন শিক্ষার্থীরা কৃষ্ণচূড়া, জারুল ও সোনালুর এই বর্ণিল সময়টা উপভোগ করছেন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী পরমা পারমিতা বলেন, ‘বর্তমানে ক্যাম্পাসের বেশিভাগ জায়গায় সবুজের মধ্যে তপ্ত রোদে আগুনের মতো জ্বলছে লাল কৃষ্ণচূড়া। অসম্ভব সুন্দর বেগুনি রঙের থোকা থোকা জারুল ফুলও এসময় ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় দেখি সবুজ পাতা ছাপিয়ে সোনালি রঙের ফুলে সেজেছে সোনালু গাছ। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে কৃষ্ণচূড়া আর জারুল যে রং ছড়িয়েছে তা চোখে না দেখলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে সুন্দরভাবে উপভোগ করছি এই সময়টা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে নূর বলেন, গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে রক্তের মতো টকটকে লাল কৃষ্ণচূড়া আর জারুল ফুল দিয়ে আচ্ছাদিত হয়েছে পুরো ক্যাম্পাস। রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে গেলে মনে হয় এক টুকরো স্বর্গ। এসব দৃশ্য স্বচক্ষে দেখলে, কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। সকালের দিকে মেয়েদের হলের রাস্তাগুলোতে পড়ে থাকা কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি দেখে যেন পুষ্পশয্যা মনে হয়। এককথায়, কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভা আর জারুল ফুলের বেগুনি পাপড়ির নমনীয়তা ক্যাম্পাসকে রাঙিয়ে তুলছে।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এর আদিনিবাস মাদাগাস্কার হলেও ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, পাকিস্তানসহ অনেকে দেশেই এর বিস্তৃতি। কৃষ্ণচূড়া লাল, হলুদ ও সাদা রঙেরও হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে লাল ও হলুদ রঙের ফুল দেখা গেলেও সাদা রঙের কৃষ্ণচূড়া দেখা যায় না। জারুল ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম লেজারস্ট্রোমিয়া স্পেসিওসা। জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুলের সন্ধান মেলে এবং সোনালু ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিয়া ফিস্টুলা; যা ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। এটি অমলতাস নামেও পরিচিত।

গাছজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল, এ যেন প্রকৃতির অলংকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান বলেন, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু, ক্যাসিয়া প্রজাতির বেশকিছু ফুলসহ জারুল এবং রুদ্রপলাশ এ সময়ে ফোটে। গ্রীষ্মকালে এসকল ফুল প্রকৃতিকে শোভামন্ডিত করে। এগুলো উদ্ভিদগুলো মূলত শোভাবর্ধনকারী বা অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট। এসব উদ্ভিদের কাঠের তেমন গুরুত্ব নেই। যেহেতু ফুল সকলেরই ভালো লাগে। ফুল দেখলে সকলেরই মন ভালো হয়ে যায়। তাই এই উদ্ভিদের ফুলগুলো গ্রীষ্মকালে সকলের মন প্রফুল্ল রাখে।

শিক্ষার্থী হিসেবে একটাই চাওয়া, বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা নিয়ে বার বার ক্যাম্পাসের প্রকৃতিকে নতুন করে সাজিয়ে তুলুক রক্তিম কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুল ও সোনালী আভা ছড়ানো সোনালু। প্রখর রোদের তপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়াক নান্দনিক সৌন্দর্য। বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে কঠিন সময়েও কৃষ্ণচূড়া, জারুল আর সোনালুর মতো সুভাস ছড়াক এখানের শিক্ষার্থীরাও।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *