আন্তর্জাতিক

লিচুর ফলনে ধস, হাজার টাকা শ’

ডেস্ক রিপোর্ট: লিচুর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এবার ফলন বিপর্যয় ও অধিক দামের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন মানুষ। তাপপ্রবাহ দীর্ঘমেয়াদী হওয়ার কারণে বেশিরভাগ লিচু বাগানের লিচুর গুটি রোদে পুড়ে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে; ধারণ করেছে কালো রঙ।

গত কয়েক দিনের অতি তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে লিচু বাগানের অধিকাংশ গাছের লিচু ঝরে পড়েছে; যার ফলে এখন লিচুশূন্য হয়ে পড়েছে বাগানগুলো অথচ কিছুদিন আগেও এলাকার লিচু বাগানগুলো লিচুর গুটিতে ভরপুর ছিল।

কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার লিচু উৎপাদনকারী গ্রামের নাম মঙ্গলবাড়িয়া। দেশ এবং বিদেশে এই মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের লিচুর বেশ খ্যাতি রয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, অল্প কিছু গাছে সামান্য পরিমাণ লিচু টিকে আছে। গাছের নিচে অনেকেই লিচু বিক্রি করছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে মানুষ। ১০০ লিচু এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেউ অল্প হলেও নিচ্ছেন আবার কেউ দাম শুনে কিনার আগ্রহ হারিয়েছেন। 

লিচুর গুটি রোদে পুড়ে, শুকিয়ে কালো রং ধারণ করেছে

মনোহরদী থেকে আসা শাহ বকুল বলেন,’ আগ্রহ নিয়ে এসেছিলাম দেখতে কিন্তু হতাশ হলাম। এবার লিচু কম। যাও আছে চড়া দাম। এর চেয়ে এলাকা থেকে লিচু কিনব ভাবছি।’

কাপাসিয়া থেকে আসা রাজিব মাহমুদ বলেন, দাম বেশি তাই ৫০ টি লিচু পাঁচশো টাকা নিয়ে নিলাম। শুধু খেয়ে দেখার জন্য৷ নেওয়ার ইচ্ছে ছিলো কিন্তু সিদ্ধান্ত বদল করতে হলো দামের কারণে৷ 

জানা যায় প্রায় দুইশত বছর পূর্বে সুদূর চীন দেশ থেকে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা সর্বপ্রথম এ জাতের লিচুর চারা নিয়ে এসেছিলেন এই গ্রামের । পরবর্তীতে এ লিচুর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার পর কলম পদ্ধতিতে সংগৃহীত চারা উক্ত গ্রামের ছড়িয়ে পড়ে এবং শুরু হয় লিচুর আবাদ।

মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের এক লিচু চাষী আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব দুইশত লিচু গাছ আছে। এছাড়াও আমি শতাধিক লিচু গাছ কিনে রেখেছিলাম। লিচু গাছগুলোতে মৌসুমের শুরুতে মকুলে ভরপুর ছিল। কিন্তু এবার প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও গত কয়েকদিনের অতি গরমের কারণে লিচু বাগানের অধিকাংশ গাছের লিচু ঝরে পড়েছে। এর ফলে এখন লিচু বাগানের গাছগুলো লিচু শূন্য হয়ে পড়েছে। এর ফলে এখন আমাদের মাথায় হাত পড়েছে।’

তিনি বলেন, প্রতিবছর এই গ্রাম থেকে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হলেও এবার লিচু চাষীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

লিচু আকারেও বেশ ছোট

এ বিষয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর ই আলম জানান, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় ৫ হাজার লিচু গাছ রয়েছে। এই গ্রাম থেকে ৮ থেকে ১০ দশ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হতো তবে এবার প্রাকৃতিক প্রচণ্ড গরমের কারণে অন্যান্য ফসলাদীর ন্যায় লিচু চাষিরা অনেক ক্ষতি সম্মুখীন হয়েছেন। আমরা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এলাকায় লিচু চাষীদের নিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে লিচু চাষের করণীয় বিষয় নিয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করেছি। এছাড়াও ৪ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে লিচু বাগানের খোঁজখবর নেওয়া এবং লিচু চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবার লিচু চাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামার বাড়ি) উপপরিচালক মো. আবদুস সাত্তার বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহ এবং উপযুক্ত সেচ সুবিধার অভাবে এবার মঙ্গল বাড়িয়া জাতের লিচুর ফলনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সেচ সুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে চাষীদের কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *