স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে দেশে ফিরলেন ওবায়দুল কাদের
ডেস্ক রিপোর্ট: মাদরাসা শিক্ষার্থী হাফিজুর। বাড়ি ভোলার লালমোহন উপজেলায়। ঈদ উপলক্ষে ছুটি আরও তিন দিন আগে হলেও বাসায় ছাত্র পড়ানোর শেষ দিন ছিল আজ। বিকেলে টিউশন শেষ করে তড়িঘড়ি করে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে আসার সময় বৃষ্টিতে ভিজে একাকার সে। ঈদের ছুটিতে নাড়ির টানে ঘরেফেরা হাফিজুরের অনুভুতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক বছর পর বাড়ি যাচ্ছি। মোবাইলে ভিডিও কলে মাকে দেখে মন ভরে না। ঈদের ছুটিতে মাকে দেখতে পাওয়ার আনন্দের কাছে বৃষ্টিতে ভিজার দু:খ অনেকটাই ফিকে।
তিনদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। সন্ধ্যার দিকে রাজধানীতে বৃষ্টি হলেও তা কোন বাধা হতে পারেনি ঘরমুখো মানুষের কাছে। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সন্ধ্যায় দেশের প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ-টার্মিনালে চোখে পড়েছে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। আপনজনের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার জন্য বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ছুটছেন গন্তব্যের দিকে।
ঘরমুখো এসব মানুষ বলছেন, পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির কাছে বৃষ্টি কিছুই না। বাড়িতে সুন্দরভাবে পৌঁছানোই মূল উদ্দেশ্য।
বৃষ্টির পানি মাথায় নিয়ে লঞ্চে ওঠেন পোশাক শ্রমিক সবুজ। বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায়। পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে। হাত ভর্তি চারটি ব্যাগ। ঈদে কেমন কেনাকাটা হলো জানতে চাইলে সবুজ বলেন, ঈদের বেতন ঠিকঠাক পেয়েছি। বেতন পেয়েই সাধ্যের মধ্যেই পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করেছি। এখন এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে সহিহ সালামত বাড়ি যেতে পারলেই বাঁচি।
ঈদযাত্রায় বাধা হতে পারেনি বৃষ্টি, সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের নৌপথে বাড়ি পৌঁছে দিতে বাড়ানো হয়েছে দৈনিক চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যা। ফলে, অনেকটা স্বস্তি নিয়েই যাত্রীরা নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন বলে জানিয়েছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। এদিকে যাত্রীদেরকে সাবধানে লঞ্চে উঠার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
শুক্রবার থেকে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় যাত্রীর চাপ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, সব রুটেই কমবেশি লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানোয় কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন যাত্রীরা। তবে কেবিনের পাশাপাশি ডেকের মধ্যেও যাত্রীর চাপ বেশি রয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আজহায় নাড়ির টানে বাড়ি ফিরে যাওয়া ঘরমুখো মানুষের অগ্নিকাণ্ড ও দুর্ঘটনা সংক্রান্ত নিরাপত্তায় প্রস্তুত আছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ঢাকা ও এর আশপাশে ৮টি পয়েন্টে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে রাখা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ টহল ইউনিট।
১০ জুন থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এসব অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কাজ চলমান থাকবে আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এসব অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু থাকবে।
ঈদে বাড়ি যাওয়ার পথে এবং ঈদ উদযাপন শেষে বাড়ি থেকে ফেরত আসার পথে অনাকাঙ্ক্ষিত যে কোনো পরিস্থিতি বা দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় দ্রুত বা তাৎক্ষণিক সাড়া প্রদানের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ফায়ার সার্ভিস।
যেসব স্থানে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে: সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌটহল, মুন্সিগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল, মাওয়া ফেরি ঘাট, পাটুরিয়া ফেরি ঘাট, আরিচা লঞ্চ/ফেরি ঘাট, নারায়ণগঞ্জের হাজিগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাট, নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল ও বন্দর ঘাট। এসব স্থানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবলসহ সাজ-সরঞ্জাম যেমন রেসকিউ বোট, ডুবুরি ইউনিট, বয়া, ফায়ার পাম্প, সেফটি ভেস্ট, থ্রোইং ব্যাগ, লাইফ জ্যাকেট, মেগা ফোন, ফোল্ডিং স্ট্রেচার, ফাস্ট এইড বক্স, রেইন কোট, উদ্ধার সরঞ্জাম ইত্যাদি মজুদ রাখা আছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রয়োজন অনুযায়ী জনবল ও সরঞ্জামের সংখ্যা কম-বেশি আছে।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।