সারাদেশ

ডিএমপিতে ২০৯ মামলায় গ্রেফতার ২৩৫৭

ডেস্ক রিপোর্ট: বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বেলাই গ্রামের কৃষক নুর মোহাম্মদের ছেলে নাসির উদ্দিন (২৫)। তিনি কৃষি কাজ করেন। ২২ জুলাই বিকেলে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে ধরে আনে। তার বাবা থানায় খোঁজ নিতে গেলে পুলিশ জানায় বড় ছেলে আব্দুল আলিমকে থানায় হাজির করে দিলে নাসিরকে ছেড়ে দেয়া হবে।

আব্দুল আলিম কিচক ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। তিনি পলাতক থাকায় তাকে থানায় হাজির করতে ব্যর্থ হন বাবা। একারণে ছোট ভাই নাসিরকে আটকের পর পাঠানো হয় বগুড়া সদর থানায়। সেখান থেকে পরদিন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ গেটে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় চালান দেয়া হয় নাসির উদ্দিনকে। তার মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবি আব্দুল বাছেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রউফ বলেন, নাসির উদ্দিনকে আটকের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বিকেলে বগুড়া শহরের গালাপট্টি এলাকায় হোটেলে বসে ভাত খাচ্ছিলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবি মাছুদুল হাসান টুকু। এমন সময় ডিবি পুলিশের ৪ থেকে ৫ জন সদস্য তাকে ঘিরে রাখে। ভাত খাওয়া শেষে ডিবি পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। টুকুর ছোট ভাই  রিবন বলেন , আদালতের কাজ শেষ করে হোটেলে ভাত খেতে বসছিলেন টুকু। ভাতের প্লেট থেকে ধরে নিয়ে যান ডিবি। ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ডিবি অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের মামলায় তদন্তে তার নাম পাওয়া গেছে।

সোনাতলা উপজেলার আগুনিয়ার তাইর গ্রামের বাদল মন্ডল জানান, তার ভাই মনোয়ারুল ইসলাম বিটু (৬৫) দীর্ঘদিন ধরে কিডনী ও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। সোনাতলা উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি ছিলেন অনেক আগে। অসুস্থতার কারনে রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতেই থাকেন। বুধবার রাতে থানা পুলিশ ঘুম থেকে ডেকে তুলে নিয়ে যায় বিটুকে। পরদিন পাঠিয়ে দেয়া হয় বগুড়া সদর থানায়। পরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের একটি মামলায় বৃহস্পতিবার সদর থানায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে অনুসন্ধনে জানাগেছে, প্রতি রাতেই বিভিন্ন থানা পুলিশ বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। যেখানে যাকে পাচ্ছেন ধরে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বগুড়া সদর থানায়।  সদর থানা পুলিশ বিভিন্ন মামলায় তাদেরকে চালান দিচ্ছে। অথচ বগুড়ায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনায় ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগে সরাসরি জড়িতরা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। যারা ধরা পড়ছে তাদের অধিকাংশই শুধুমাত্র বিএনপি জামায়াতের  রাজনীতি করার কারণে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে দাবী করা হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে। আর পুলিশ বলছে যাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের নামে মামলায় না থাকলেও তদন্তে নাম পাওয়া গেছে।

গত ১৬ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় ব্যাপক ভাঙচুর,হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত হয় এবং আহত হন আরও ১২০ জন। আন্দোলনকারীদের বাহিরে ১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ছাত্রদের আন্দোলনে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ বগুড়া সদর থানায় মামলা হয় ১৪ টি। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে ৮ টি। বাকী মামলা গুলো করেন রেলওয়ে ২ টি, আওয়ামী লীগ নেতা ২ টি, পোস্ট অফিস ১ টি এবং মুক্তি যোদ্ধা সংসদ ১ টি। এসব মামলায় বিএনপি- জামায়াত ছাড়াও বিভিন্ন পেশার প্রায় ৩০০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে রেলওয়ে, পোস্ট অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ৮৬ জনকে বলে জানিয়েছেন বগুড়া সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হচ্ছে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা। বাকী গুলো বিএনপি- জামায়াতের হলেও তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে।

বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যড আব্দুল বাছেদ বলেন, আমি বিএনপির রাজনৈতিক মামলা পরিচালনা করে থাকি। গত কয়েকদিনে বিভিন্ন থানা পুলিশ ১১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে বিএনপির নেতাকর্মী রয়েছে ৭২ জন। জামায়াতের ৩০ জন,বাকী ১২ জন সাধারন মানুষ, যারা কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নাই।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত স্নিগ্ধ আকতার বলেন, এজাহার ভুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। এজাহারের বাহিরে যাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে মামলা তদন্তে তাদের নাম পাওয়া গেছে। তবে সাধারন মানুষদেরকে হয়রানী করা হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *