সারাদেশ

রক্ষক যখন ভক্ষক!

ডেস্ক রিপোর্ট: স্বপন কুমার দেবনাথ, সাউদার্ন গ্রুপের স্বত্বাধিকারী। বছর খানেক আগে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার দক্ষিণ কাশদাহ গ্রামে নির্মাণ করেন দৃষ্টিনন্দন একটি বাংলোবাড়ি। বাড়িটি দেখভালের দায়িত্ব দেন জাহাঙ্গীর নামের স্থানীয় এক যুবককে। কিন্তু রক্ষক জাহাঙ্গীর ভক্ষক হয়ে বাংলোবাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়ে প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেন বলে অভিযোগ বাড়ি মালিকের।

গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই জাহাঙ্গীর স্থানীয় প্রায় অর্ধশত যুবকদের সঙ্গে নিয়ে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয় বাংলোবাড়িটি। এসময় লুটপাটও চালায় হামলাকারীরা।

এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন স্বপন কুমার দেবনাথ। মামলায় ৩০/৪০ জনকে অজ্ঞানামা আসামি করা হয়। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর ছাড়া বাকি প্রায় আসামিরা জামিনে মুক্ত রয়েছে।

স্বপন কুমারের বাংলোবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই বাংলোবাড়িটি এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত। বাড়িটির বিভিন্ন জায়গায় থাকা দামি ফার্নিচারগুলো পুড়ে ছাই হয়ে পড়ে আছে এখনো। ওই বাড়িটিতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় হতবাক গ্রামের বাসিন্দারা। রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সমালোচনাও করছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সদস্য ও স্থানীয় শিবালয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাল হোসেনের মামাতো ভাই জাহাঙ্গীর। বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও জাহাঙ্গীরের কোনো পদ-পদবীর বিষয়ে জানা যায়নি। এছাড়া ওই বাংলোবাড়িটিতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের কারণ বলতে পারেনি বাড়িটির মালিক এবং স্থানীয়রাও।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলোবাড়িটির মালিক স্বপন কুমার দেবনাথ বলেন, ইছামতি নদীর তীরে দৃষ্টিনন্দন ওই বাড়িটি নির্মাণ করার পর থেকেই বাড়িটি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাহাঙ্গীরকে। মাস শেষে তাকে সম্মানিও দেওয়া হতো। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সেই জাহাঙ্গীরই দলবল নিয়ে এসে ওই বাড়িটিতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। যা অত্যান্ত কষ্টকর।

রাজনীতি বিষয়ে জানতে চাইলে স্বপন কুমার বলেন, তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। তার কোনো রাজনৌতিক পরিচয় নেই। রাজনীতির সঙ্গে তিনি সম্পৃক্তও নন। কাশদাহ এলাকার সাধারণ মানুষদেরকে প্রচুর সাহায্য-সহযোগিতা করতেন তিনি। গ্রামের কারো সঙ্গে তার কোনো শত্রুতাও নেই। গ্রামের লোকজনও তাকে খুব পছন্দ করেন। তারপরও এমন কাণ্ডে হতবাক তিনি। এ ঘটনায় তিনি ন্যায় বিচার পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সত্যেন কান্ত পন্ডিত ভজন বলেন, ছাত্রজনতার আন্দোলনের পর উত্তেজিত কিছু জনতা বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম করেছে। তবে জেলা বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এসব অপকর্ম রোধে জেলা বিএনপি নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করলে শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) রঞ্জিত সাহা বলেন, বাংলোবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামিরা আদালত থেকে জামিনে নিয়েছে। তবে জাহাঙ্গীর এখনো কারাগারে রয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বাকি আসামিদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান চলমান রয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ বলেন, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ১০টি থানা ও একটি বিজ্ঞ আদালতে দায়ের হয়েছে। এসব মামলাগুলো গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অবশ্যই বিচার প্রার্থীরা এসব ঘটনায় ন্যায় বিচার পাবেন।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *