সারাদেশ

নতুন রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য: ড. ইফতেখারুজ্জামান

ডেস্ক রিপোর্ট: জনপ্রত্যাশার ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্ভাসিত রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে মাইডাস সেন্টারে টিআইবি আয়োজিত ‘নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন: তরুণদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

গতানুগতিক রাজনৈতিক দল দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনার বাস্তবায়ন হবে না বলে মনে করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। তবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নয়, বরং ব্যক্তিগত জায়গা থেকে তিনি এই মতামত দিচ্ছেন বলে জানান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যে চেতনা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে, সেই চেতনার ধারক হিসেবে নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তির বিকাশের অপরিহার্যতা রয়েছে। এখন এটি কখন হবে, কীভাবে হবে, কারা নেতৃত্ব দেবে সেটি আমাদের দেখার বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে অংশ নিতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, যারা সামনে নির্বাচনে অংশ নেবেন, ক্ষমতায় যাবেন, তারা যদি দলবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি করেন; যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, এ নিয়ে আমাদের অনেক শঙ্কা ও উদ্বেগের কারণ রয়েছে। তা না হলে আপনারা নিজেদের ওই ফ্যাসিবাদের জায়গায় উপস্থাপন করবেন এবং একইভাবে আপনাদের পতন হতে হবে। পাশাপাশি আমরা সিভিল ও মিলিটারি আমলাতন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বলব শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূল আলোচক ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও আরিফ সোহেল, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন ও সদস্য আরিফুল ইসলাম আদীব, গণমাধ্যমকর্মী ও উপস্থাপক ফারাবি হাফিজ, তরুণ কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন, রম্যলেখক ও গণমাধ্যমকর্মী শিমু নাসের প্রমুখ।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যারা ক্ষমতায় যান তাদের জনগণ বিশ্বাস করতে চান না, কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা তাদের ভালো নয়। আমাদেরকেও তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন। এক্ষেত্রে জনগণের দোষ নাই। আন্দোলনের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারাও এমনি করবে কি-না সেটিকেও অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা হচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে প্রশ্ন করার এক ধরনের বিনিময় মূল্য ছিলো। কিন্তু আমাদেরকে প্রশ্ন করায় কোনো বিনিময় মূল্য নেই। আমাদের পক্ষের প্রশ্নের জন্য কেউ প্লট, ফ্ল্যাট বা বিশেষ কোনো সুবিধা পাবেন না। আমাদেরকে প্রশ্ন করবেন এর মধ্য দিয়ে সংশোধন হবো, সংস্কার ত্বরান্বিত হবে। আমাদের পক্ষের মতামতের তুলনায় যারা আমাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছে, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দ্বিগুণ জরুরি। আমাদের প্রতি আস্থা রাখুন।’

আরেক সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেন, সাম্য, মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই আন্দোলন। ১৯৪৭ বা ১৯৭১ এ আমাদের পতাকা পরিবর্তিত হয়েছে, স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। কারণ এর পরবর্তী সকল শাসকের মধ্যেই স্বৈরশাসনের উপাদান ছিল। এ দেশের জনগণ যারা সবসময় শাসকদের মিথ্যা ভাষ্যের বিপক্ষে লড়াই করেছে, তাদের ভাষাকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি। আমরা মনে করি ২০২৪ এর আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিবাদের ভাষা তৈরি হয়েছে, যা ২০১৮ তে সম্ভব হয়নি। জনগণের ভাষায় আমরা কথা বলতে পেরেছি বলেই স্বৈরাচারকে সরিয়ে দিতে পেরেছি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, নতুন বাংলাদেশ তরুণদের মধ্যে অনেক আশা-আকাঙক্ষার জন্ম দিয়েছে। এই নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে গণ-আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। সবসময় বলা হয়েছে জনগণ ক্ষমতার উৎস, কিন্তু বাস্তবে সেটির প্রতিফলন ঘটেনি। রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারে বাংলাদেশের সকল জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রয়োজনে গ্রামীণ পর্যায়ে, গ্রামীণ আবহে ও অঞ্চলে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *