আন্তর্জাতিক

কি হবে ১০ ডিসেম্বর?

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আবারও সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর এই দফায় সমাবেশটি হতে যাচ্ছে আগামী ১০ ডিসেম্বর। মাঝে দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্তই ছিল। তবে অক্টোবরের সমাবেশের পর থেকেই দেশে সংঘাতময় রাজনীতি নতুন করে শুরু হয়। বিএনপির ওই মহাসমাবেশ শেষ পর্যন্ত ভন্ডুল হয়ে যায়। মূলত এরপর থেকেই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এরপর অব্যাহতভাবে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চলছে।

তবে এবার বিএনপি কিছুটা ভিন্নধর্মী কর্মসূচি দিয়েছে। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। দলটির এবারের সমাবেশ কিছুটা ভিন্নধর্মী। বিগত মহাসমাবেশটি রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে পালন করেছে বিএনপি। এবারের সমাবেশটি হবে অরাজনৈতিক ব্যানারে। ‘মায়ের ডাক’ এর ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে মূলত দলটির যে-সব নেতাকর্মী গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। দলের বিভিন্ন পদে যে-সব নেতারা রয়েছেন তাদের কোনো ধরনের উপস্থিতি থাকবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও সবমিলিয়ে ১০ হাজারের মতো মানুষ ওই সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচিটি আয়োজন করা হচ্ছে। প্রেসক্লাব এলাকায় যেহেতু দেশের সবগুলো মিডিয়া দিনভর উপস্থিত থাকে, তাই এটি ঘিরে সব মিডিয়ার আলাদা দৃষ্টি থাকবে।

গুম-খুনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অতীতেও অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়েছে, এবারও ওইসব গণমাধ্যম গুরুত্বসহকারেই সংবাদ প্রকাশ করবে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক পরিসরে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তাই নতুন করে এই সমাবেশটি তাদের বাড়তি নজর কাড়বে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অব্যাহত কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও যখন সরকারের টনক নড়ছে না, তখন এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে সরকারের ওপর একটি বাড়তি চাপ তৈরির কৌশল থেকেই কর্মসূচিটি দেওয়া হয়েছে।

অক্টোবরের সমাবেশের পর সারাদেশে বিএনপির ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যরা এই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন। এতে অংশ নেওয়া সদস্যরা সরকারের নির্যাতনের চিত্র ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে তুলে ধরবে। সমাবেশ থেকে বিগত ১৫ বছরে সরকারের হাতে গ্রেফতার, নির্যাতন বিশেষ করে গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যরা কথা বলবেন।

কৌশলগত কারণেই বিএনপির পক্ষ থেকে এ ধরনের একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে সরকার তা ভন্ডুল করে দেবে বিএনপির নেতাকর্মীদের পুনরায় গ্রেফতার করতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে দলটি মনে করছে -এ ধরনের কর্মসূচি দেশে-বিদেশের গণমাধ্যমের কাছে আরো বেশি হৃদয়স্পর্শী হবে। বিএনপি যে সরকারের চরম রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার সেই বিষয়টিও এই সমাবেশের মাধ্যমে তুলে ধরা সম্ভব হবে।

সরকার ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কর্মসূচিকে সহিংস ও জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি করছে বলে গণমানুষের কাছে এই নেতিবাচক দিক তুলে ধরছে। এই নেতিবাচক কৌশলের বিপরীতে মানবাধিকারের বিষয়টি যে অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই -সেই বিষয়টি বিএনপির নীতি-নির্ধারকেরা মাথায় রেখেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির এই আয়োজনটি রাজনৈতিক ব্যানারে না হলেও এ নিয়ে সরকারি দল নড়েচড়ে বসেছে। এর প্রমাণও এরই মধ্যে দেখা গিয়েছে। ইতিমধ্যে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করতে অনুমতি চেয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বিকেল ৩টায় এই সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এখনো অনুমতির বিষয়ে কিছু না জানালেও চিঠিটিও কমিশনের কার্যালয় গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।

তারা বলছেন, সরকার এবার মহাসমাবেশ যেভাবে ভন্ডুল করেছে, অরাজনৈতিক ব্যানারের কর্মসূচিটি সেভাবে পণ্ড করতে পারবে না। তাই সরকারের ওপর দেশে-বিদেশে চাপ তৈরির জন্য এই সমাবেশ যথেষ্ট কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *