আন্তর্জাতিক

হরতালে ফাঁকা ঢাকা

ডেস্ক রিপোর্ট: বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সমমনা দলগুলোর ডাকা সমাবেশ ও হরতালে দীর্ঘদিন পর উত্তপ্ত হয়েছে রাজনীতির মাঠ।

রোববার (২৯ অক্টোবর) দেশজুড়ে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের রাজপথে দেখা যায়নি। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী। এদিন সকাল থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস রাজধানীর তিন স্থানে বাসে আগুন দেওয়ার খবর পেয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন হতাহতের ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শেকড় পরিবহনের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। সকাল সাড়ে ১০টায় মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারের পাশে পরীস্থান পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। তখন মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট পুলিশের নিরাপত্তায় আগুন নেভায়। একই সময়ে তাঁতিবাজার মোড়ে বিহঙ্গ পরিবহন নামের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট পুলিশের নিরাপত্তায় আগুন নেভায়।

বাস মালিকরা বলছে, রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম। আট ভাগের একভাগ মানুষ বের হচ্ছে। বাস চালকরা রাস্তায় বের হতে ভয় পাচ্ছে। তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে বাস চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আজমেরী পরিবহনের মালিক জাফর মিয়া বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হয়েছে বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য। কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে।

শাহবাগগামী যাত্রী মাসুম শিকদার বলেন, কয়েক জায়গায় বাসে আগুন দেওয়ার খবর শুনে ভয় লাগছে। বাসের বদলে তাই বাইক আর রিকশাই নিরাপদ। কিন্তু বাইক আর রিকশা চালকরা ভাড়া কয়েকগুন বেশি চাচ্ছে।

ঢাকার রাস্তায় গাড়ি না থাকায় দুর্ভোগে যাত্রী সাধারণ

হরতালের প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয়। গ্রাহক নেই অন্যান্য দিনের মতো। বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন শাখায় সামনের দরজা বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। তবে ব্যাংকে তেমন গ্রাহক না থাকায় অধিকাংশ সেবা কাউন্টারের কর্মকর্তাকে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়।

দুপুর ২টা পর্যন্ত দূরপাল্লার কোনো বাস গাবতলী থেকে ছেড়ে যায়নি। কাউন্টার মালিকেরা জানান, যাত্রী সংকটের কারণে আজ একটি বাসও ছাড়তে পারে নি। তবে জরুরি প্রয়োজনে কিছু যাত্রীকে বাস ছাড়ার বিষয়ে খোঁজ নিতে দেখা গেছে।

সকাল থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন। দুপুর ২টায় শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এই শান্তি সমাবেশের আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হরতালে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে সজাগ অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর রোবাস্ট প্যাট্রোল ও গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সার্বিক নিরাপত্তায় রাজধানীতে ৮৭টি ও রাজধানীর বাইরে ১৫৯টিসহ সারাদেশে ২৪৬টি টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছে র‌্যাব।

দুপুরে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে। তারা হাসপাতালের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। এভাবে এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যাতে সেবিকা ও হাসপাতালকর্মীরা আহত হয়েছেন। এখন গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনী যেভাবে হামলা চালাচ্ছে, বিএনপির বর্বরোচিত হামলা সেই ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়।

বিএনপির উগ্র কর্মীদের আক্রমণ থেকে হাসপাতালও রেহাই পায়নি মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, বিএনপি প্রচার চালিয়েছিল তাদের সমাবেশে দশ লাখ লোক নিয়ে আসবে। আমাদের পুলিশ কমিশনার বলেছিলেন, এমনিতেই ঢাকা শহরে যানজট, তারপর দশ লাখ লোক নিয়ে আসবেন, আপনারা কোথায় কী করতে চান, মাঠে যান। তারা মাঠে না গিয়ে নিজেদের দলীয় অফিসের সামনে সমাবেশ করেছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *