সারাদেশ

৬ আন্তর্জাতিক সংস্থার বিবৃতি প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

ডেস্ক রিপোর্ট: গত কয়েক দিনের তীব্র শীতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্ন-আয়ের মানুষেরা। অর্থের সংস্থান করতে তীব্র শীত উপেক্ষা করে নামতে হচ্ছে কাজে। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি রোববারও অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, দেশে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য গত দু–তিন দিনে কমে বাতাসের গতিবেগ বাড়ার সঙ্গে ওপরের ঠান্ডা বাতাস ভূমির দিকে নেমে আসায় শীতের অনুভূতি তীব্র হয়েছে।

তীব্র শীতের কারণে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরে সহ উত্তরের জেলা গুলোতে বেশি সমস্যায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। এই অঞ্চলে উত্তরের হিমেল বায়ু সক্রিয় হওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এছাড়াও ১৭ অথবা ১৮ জানুয়ারির দিকে বৃষ্টিপাত হতে পারে।

তীব্র ঠান্ডার কারণে এ অঞ্চলে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। ঘন কুয়াশার সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের ঠান্ডা বাতাসে অসুস্থ হয়ে পড়ছে সব প্রাণী।

উত্তরের জনপদ রংপুরে গত ৬ দিনে শীতজনিত রোগে ১৬টি শিশু মারা গেছে। এদিকে গরম কাপড় না থাকায় প্রচণ্ড শীতে কষ্ট পাচ্ছে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ।

রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা জেলায় এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

জানা যায়, গত ৬ দিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোল্ড ডায়রিয়া আর নিমোউনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে প্রায় তিন শতাধিক শিশু। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলোতে বেড খালি না থাকায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ফ্লোরেও।

ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতে অধিকাংশ যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতে ছিন্নমুল এবং কর্মজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। গরম কাপড়ের অভাবে অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও শীতের প্রভাব পড়েছে। শীতের এই তীব্রতা আরও ৪/৫ থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে বরিশাল আবহাওয়া অফিস। তাদের দেওয়া তথ্যে রয়েছে শৈত্যপ্রবাহেরও শঙ্কা।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানান, বরিশালে এখনো শৈত্যপ্রবাহ হয়নি। আকাশ মেঘলা ও উত্তর দিক থেকে ধেয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এখন শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও এর আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ৮/১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। ৬/৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি ও ৬ ডিগ্রির হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

শনিবার এ মৌসুমে বরিশালে এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি ৭ সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে, ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুর শহরে গতকাল দুপুরে কথা হয় ইজিবাইকচালক রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তায় লোকজন কম বের হচ্ছেন। আয় কমে গেছে। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ইজিবাইক চালিয়ে তাঁর আয় হয়েছে মাত্র ৮৫ টাকা। অন্যান্য সময়ে কম করে হলেও এই সময়ে ২০০ টাকা হতো।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়াসহ রংপুর বিভাগের বেশ কিছু অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি আজও অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে কোনো একটি অঞ্চলের তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসা। তবে ওই তাপমাত্রা দু-তিন দিন স্থায়ী হতে হয়। একইভাবে তাপমাত্রা ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ।

মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়া অঞ্চলগুলোর মধ্যে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নওগাঁর বদলগাছীতে। সেখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৯ ডিগ্রি, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি, চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি ও কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, দেশে ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়াসহ আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বিরাজ করতে পারে। এরপর আগামী বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তখন আকাশে মেঘ থাকার পাশাপাশি বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। মেঘ কেটে গেলে আবার দেশের কিছু এলাকায় শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *