সারাদেশ

আট বিভাগে আটটি মসজিদ নির্মাণ করতে চায় সৌদি

ডেস্ক রিপোর্ট: আট বিভাগে আটটি মসজিদ নির্মাণ করতে চায় সৌদি

সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আলদুহাইলান গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের আটটি বিভাগে আটটি মসজিদ ও ইসলামি ভাষা ইন্সস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসা ইউসুফ ইসা আলদুহাইলান গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন।

সৌদি রাষ্ট্রদূতের আগ্রহের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় একটি ইন্সস্টিটিউট স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ সময় সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী দিনে পবিত্র হজ ও ওমরার প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, সৌদি আরব ও বাংলাদেশ ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতা বাড়াতে পারে।

রাষ্ট্রদূত অন্যান্য পেশাদারদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা কর্মী নেওয়ার ব্যাপারে তার দেশের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশবাসীর আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে এগিয়ে নিতে সৌদি আরবের কাছে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ সৌদি আরব এবং দেশটির জনগণের মঙ্গল কামনা করেন। কারণ, তারা পবিত্র মক্কা ও মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ মো. জিয়াউদ্দিন এবং মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

সান্তাহারে এশিয়ার সবচেয়ে ছোট মসজিদ!

বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুটি প্রাচীন ও ছোট মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহারে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুটি প্রাচীন ও ছোট মসজিদ। ইতিহাসের এই নিদর্শন দুটি আজ অনেকটাই পরিত্যক্ত। সেখান থেকে আর মোয়াজ্জিনের আজান শোনা যায় না। মসজিদ দুটিতে সর্বশেষ নামাজ পড়া হয়েছে প্রায় দেড়শ বছর আগে। ধারণা করা হয়, ১৭৭০ থেকে ১৭৯০ সালের মধ্যে মসজিদ দুটি নির্মিত হয়েছিল।

স্থানীয়দের মতে, উপজেলার সান্তাহার পৌর এলাকার তারাপুর ও মালশন গ্রামের এ দুটি স্থাপনা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ।

মসজিদে সামান্য উঁচু একটি গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজের ওপর আছে একটি মিনার। দেড় ফুট পুরুত্বের দেয়ালে ব্যবহৃত ইটগুলো আকারে খুব ছোট। তবে মসজিদের দরজায় দুটি সুন্দর খিলান আছে। আছে মিম্বর এবং মেহরাবও। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি স্থাপনাটি এতটাই পুরনো যে, প্রথমে দেখে এটি মসজিদ মনে হয় না।

জমিদারি প্রথার সময় আদমদীঘির এ অঞ্চল বিভিন্ন জমিদারের শাসনাধীন ছিল। সে সময় নাটোরের রাণী ভবানীর জমিদারি ছিল প্রায় ১২ হাজার ৯৯৯ বর্গমাইলজুড়ে, যার মধ্যে আদমদীঘির বিভিন্ন এলাকা অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাণী ভবানীর বাবার বাড়িও আদমদীঘির ছাতিয়ান গ্রামে।

কথিত আছে, তারাপুর গ্রামে তারাবানু নামে একজন মুসলিম নারী বাস করতেন। হিন্দু প্রধান এলাকা হওয়ার কারণে ওই নারীর ইবাদত-বন্দেগিতে অসুবিধা হত। তিনি একটি মসজিদ নির্মাণের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় সমাজপতিরা তাতে রাজি হননি। পরে রাণী ভবানীর কাছে আবেদন করা হয়। রাণী ভবানী তখন ছাতিয়ান গ্রামে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তার উদ্যোগেই পরে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়।

ক্ষুদ্র এই মসজিদটি প্রস্থে ৯ ফুট, উচ্চতা মিনারসহ ১২ ফুট। মিনারটির ঘের ২৭ ফুট। মসজিদটির মেহরাব এতই ক্ষুদ্র যা ভেতরে না গেলে চোখে পড়ে না। এর মেহরাবের উচ্চতা সাড়ে তিন ফুট, প্রস্থ দেড় ফুট। এছাড়া দরজার উচ্চতা সাড়ে ছয় ফুট এবং প্রস্থ আড়াই ফুট। সর্বোচ্চ তিনজন মানুষ এ মসজিদে নামাজ পড়তে পারবেন।

মসজিদের এই স্থানটির বর্তমান মালিক ষাটোর্ধ্ব জয়েনুল উদ্দিন প্রামানিক বলেন, আমার বাবা-দাদাও বলতে পারেননি এই মসজিদ কত পুরনো। তবে ধারণা করা হয় মসজিদটির বয়স ৩০০ বছর পেরিয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মসজিদটির সামান্য সংস্কার করেছি। সরকারের এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

অপরদিকে তারাপুরের এই মসজিদের মতো আরেকটি মসজিদ রয়েছে পাশের মালশন গ্রামে। এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা তারাপুর গ্রামের মসজিদের চেয়ে একটু বড়। তবে নির্মাণশৈলী একই ধরনের। এই মসজিদটি সম্পর্কেও সঠিক ইতিহাস জানা যায় না। এখানে একসঙ্গে পাঁচজন মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন।

এই মসজিদের স্থানটির বর্তমান মালিক আমজাদ হোসেন (৭০) বলেন, আমি দাদার কাছে শুনেছি এই মসজিদটির বয়স প্রায় ৩০০ বছরের বেশি। মসজিদের অবস্থা খুব জরাজীর্ণ।

এদিকে মসজিদ দুটি কত আগে তৈরি হয়েছিল, কে তৈরি করেছিলেন, কেন এত ছোট ছিল এসব বিষয়ে জানা না গেলেও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে এর গুরুত্ব অনেক। কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বিভাগ এখানে কোনো নজর দেয়নি। তবে ভ্রমণপিপাসুরা প্রতিদিন মসজিদ দুটি দেখতে যান।

বগুড়া আঞ্চলিক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা জানিয়েছেন, ‘আমি তারাপুরের মসজিদে গিয়েছিলাম। খুবই ছোট একটি মসজিদ। একটা মসজিদের যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, তা সেখানে নেই। ছোট ওই ঘরকে মানুষ কেন মসজিদ বলছে- এর পক্ষে লিখিত কোনো তথ্য পাইনি। ওখানে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে, তা অনেক পরের ইট এবং ঘরটি জোড়াতালি দেওয়া। আর মালশনের মসজিদের বিষয়ে জানতাম না। এটি পরিদর্শন করা হয়নি। আমাদের লোক সরজমিনে গিয়ে মসজিদটি পরিদর্শন করবে।’

;

মক্কায় বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু নামাজের স্থান

মক্কার জাবালে ওমর টাওয়ারে বিশ্বের উঁচুতম নামাজের স্থান, ছবি : সংগৃহীত

সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে খুলে দেওয়া হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু নামাজের স্থান। স্কাই মুসাল্লা হিসেবে খ্যাত ঝুলন্ত এই মসজিদ তথা অভিনব নামাজের স্থান নির্মাণের মধ্য দিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছে দেশটি। কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু নামাজের মসজিদ এটি তথা বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত কোনো নামাজের স্থান। এটি শুধুমাত্র একটি স্থাপত্যশৈলীর কীর্তি নয়, পাশাপাশি আধুনিক স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন।

গালফ নিউজ জানিয়েছে, পবিত্র কাবার পাশে জাবাল ওমরে অবস্থিত এই সুউচ্চ মসজিদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৫৮৪ ফুট উঁচুতে এর অবস্থান। যার উচ্চতা ৫৩ তলা বিল্ডিংয়ের সমান। যে কারণে মসজিদটি থেকে কাবা শরিফসহ ও মক্কা নগরীর নানা দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া মক্কার অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা তথা পবিত্র কাবা, মক্কা মিউজিয়াম, মসজিদে জিন, জান্নাতুল মুয়াল্লা কবরস্থান, হোটেল আবরাজ আল বাইতসহ অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

এখান থেকে মুসল্লিরা পবিত্র কাবা শরিফের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃশ্য সরাসরি দেখতে পাবেন। পাশাপাশি নামাজের সময় ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেমের সমন্বয় করা হবে কাবার সঙ্গে। মসজিদটির আয়তন ৫৫০ বর্গমিটার। এখানে ৫২০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

মসজিদ থেকে দেখা যায় পবিত্র কাবা সৌদি আরবের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান মক্কা রিয়েল এস্টেট কোম্পানির অধীনে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছে। কাবার পাশেই অবস্থিত দুটি জোড়া টাওয়ারের মধ্যে ঝুলন্ত ব্রিজে স্থাপন করে তার ওপর নির্মিত হয়েছে এই মসজিদ। এই টাওয়ারের নাম জাবাল ওমর টাওয়ার।

সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং বিশেষভাবে ডিজাইন করা যন্ত্রাংশ দিয়ে এই ব্রিজটি প্রথমে মাটি থেকে ১ হাজার ২৩ ফুট উঁচুতে তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এটি ১ হাজার ৫৮৪ ফুট উঁচুতে নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করা হয়। স্টিলের তৈরি ব্রিজটির ওজন ৬৫০ টন। এটির মাধ্যমে জাবালে ওমর টাওয়ারের দুটি ভবনের ৩৬, ৩৭ এবং ৩৮ তলাকে একসঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

স্থানটির দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন আরবি ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে আঁকা আল্লাহর গুণবাচক নাম। নামাজের এ স্থানটি মুসল্লিদের কাছে খুবই প্রিয়। বিশেষত পর্যটক, হজ ও ওমরাযাত্রীরা এখানে এসে ভিন্নরকম ধর্মীয় অভিজ্ঞতা লাভ করেন। কারণ ফজরের নামাজে এখান থেকে মক্কা নগরীর সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। তা ছাড়া সূর্যাস্তের সময় পবিত্র মসজিদুল হারাম প্রাঙ্গণের দৃশ্য অবলোকন করা যায়।

সিইও খালিদ আল-আমুদি বলেন, ‘বিস্ময়কর স্কাই মুসাল্লা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অর্জন করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। এ স্থানটি হজ ও ওমরাযাত্রীদের মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি তৈরি করবে। মক্কা শহরে আগত পর্যটক ও মুসল্লিদের জন্য স্কাই মুসাল্লা একটি অনন্য দর্শনীয় স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

মসজিদের ভেতরের দৃশ্য ইমার হসপিটালিটি গ্রুপের হসপিটালিটি সেক্টরের পরিচালক মার্ক কিরবি জানান, ‘মুসাল্লার উদ্বোধন আমাদের গ্রুপের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। আত্মিক প্রশান্তিদায়ক এ স্থানে মুসল্লিদের অভ্যর্থনা জানাতে আমরা উন্মুখ হয়ে আছি। মক্কা নগরীর আল-উনওয়ান জাবাল ওমর হোটেলটি চালু হওয়ার পর থেকে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে।’

আল-উনওয়ান জাবালে ওমর হোটেল মক্কার শুবাইকা নামক এলাকায় অবস্থিত। ২০২৪ সালের প্রথম দিকে হোটেলটি চালু হয়। তা মক্কার জাবালে ওমর এলাকার সবচেয়ে উঁচু ভবন ও সর্ববৃহৎ রিসোর্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে আছে রেস্তোরাঁ, বিলাসবহুল আবাসনসহ নানা রকম অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

;

যে দেশে ধর্মত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

মৌরিতানিয়ার জাতীয় পতাকা, ছবি : সংগৃহীত

মৌরিতানিয়া, আফ্রিকার ১১তম বৃহত্তম এবং বিশ্বের ২৮তম বৃহত্তম দেশ। প্রশাসনিক নাম মৌরিতানিয়া ইসলামিক প্রজাতন্ত্র। দেশটি আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। এর আয়তন এক লাখ ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এটি সেনেগাল এবং পশ্চিম সাহারা, মালি এবং আলজেরিয়ার মধ্যে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সীমানায় অবস্থিত। মৌরিতানিয়া নামটি প্রাচীন ‘বারবার’ মৌরি উপজাতি এবং তাদের রাজ্য মৌরেতানিয়া থেকে এসেছে।

মৌরিতানিয়ায় মোট জনসংখ্যার পরিমাণ পাঁচ লাখের কাছাকাছি। দেশটির প্রায় শত ভাগ লোকই মুসলমান। মৌরিতানিয়ার সংবিধান দেশটিকে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে এবং ইসলামকে নাগরিক ও রাষ্ট্রের একমাত্র ধর্ম হিসাবে মনোনীত করে। মৌরিতানিয়ার মুসলমানরা ধর্মভীরু। দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। মৌরিতানিয়া সাংবিধানিকভাবে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র। এদেশের মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। এদেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার মান এবং কর্মসংস্থান হতে বঞ্চিত হলেও তারা ভীষণ রকম ধর্মপরায়ণ।

মৌরিতানিয়ার রাজধানী নোয়াকচটকে অবস্থিত মদিনা আল মোনাওয়ারা মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত মৌরিতানিয়ার আইনি ব্যবস্থা ফরাসি নাগরিক আইন এবং শরিয়া আইনের মিশ্রণ। ইসলাম ও ধর্মের বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি বিশেষভাবে কঠোর। সেখানে কিছু অপরাধের জন্য শরিয়া আইনের প্রয়োগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এদেশের আইন ধর্মত্যাগকে নিষিদ্ধ করে এবং এটিকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করে। মৌরিতানিয়ায় পাবলিক স্কুল এবং প্রাইভেট সেকেন্ডারি স্কুলে প্রতি সপ্তাহে চার ঘন্টা ইসলামিক শিক্ষা প্রদান করতে হয়।

এখানকার জীবনাচারের সঙ্গে আরব ইসলামি ঐতিহ্য ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। মানুষ কথা বলে আরবিতে। চলনে বলনেও তারা পুরোপুরি আরব। মৌরিতানিয়া পশ্চিম আফ্রিকার একটি উন্নয়নশীল মুসলিম দেশ। আরব দুনিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত মৌরিতানিয়ার রাষ্ট্রীয় ভাষা আরবি। ভাষা ও সমাজ-সংস্কৃতিতে আরবদের মতো হলেও আরবদের সঙ্গে তাদের তেমন কোনো সখ্যতা নেই।

মৌরিতানিয়ায় শিক্ষাবর্ষ অক্টোবরে শুরু হয় এবং জুনে শেষ হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশের বয়স ৬ বছর। দেশটিতে প্রচুর মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব ও ইসলামি সংস্কৃতি কেন্দ্র রয়েছে। ধর্মের প্রতি সাধারণ মানুষের রয়েছে প্রবল ঝোঁক।

মৌরিতানিয়া খনিজ, হাইড্রোকার্বন এবং মৎস্য সম্পদের উল্লেখযোগ্য মজুদসহ একটি সম্পদ সমৃদ্ধ দেশ হলেও সঠিক ব্যাবস্থাপনার অভাবে মৌরিতানিয়ার অর্থনীতি এখনও মূলত কৃষি ও পশুসম্পদের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির হাজার হাজার বছর আগের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে এবং সেখানে রয়েছে বেশ কিছু সুসংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থান। যেমন- চিনগুয়েটি শহর, যা তার প্রাচীন গ্রন্থাগার এবং মসজিদের জন্য পরিচিত। মৌরিতানীয়রা মালেকি মাজহাব অনুসরণ করে। দেশটি ২৮ নভেম্বর ১৯৬০ সালে ফ্রান্স উপনিবেশিকতা থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছে।

মুসলিম বণিকদের সঙ্গে বাণিজ্যবহর ও ধর্ম প্রচারকদের মাধ্যমে অষ্টম শতাব্দীতে এই অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে। মৌরিতানিয়ায় রয়েছে মনোমুগ্ধকর সব প্রাকৃতিক দৃশ্য, যা প্রথম দেখাতেই দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কাড়ে। মৌরিতানিয়া শতভাগ মুসলমানদের দেশ। দারিদ্রপীড়িত হলেও তারা আঁকড়ে ধরে আছে সঠিক ইসলামকে।

২০২৩ সালে মৌরিতানিয়ার রাজধানী নোয়াকচটকে মুসলিম বিশ্বের সাংস্কৃতিক রাজধানী নির্বাচন করা হয়। এ শহরে রয়েছে ঐতিহাসিক কিছু মসজিদ। এর অন্যতম হলো- জামে মদিনা আল মোনাওয়ারা। যা স্থানীয়ভাবে সৌদি মসজিদ নামে প্রসিদ্ধ। এটি সৌদি আরবের অর্থায়নে নির্মিত। দেশটিতে প্রচুর মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব ও ইসলামি সংস্কৃতি কেন্দ্র রয়েছে। চলে দাওয়াতে তাবলিগের কাজও।

;

ইন্দোনেশিয়ার নতুন রাজধানীতে প্রথম মসজিদের নির্মাণ শুরু

ইন্দোনেশিয়ার নতুন রাজধানীতে নির্মিত প্রথম মসজিদের নক্শা, ছবি : সংগৃহীত

পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত এই দেশটি প্রায় ৫ হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দেশটির বর্তমান রাজধানী জাকার্তা থেকে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বোর্নিও দ্বীপে তৈরি হচ্ছে নতুন রাজধানী নুসানতারা।

দ্বীপটি জঙ্গল আচ্ছাদিত হলেও দেশের কল্যাণে এখানে আধুনিক শহর গড়ে তোলা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার নবনির্মীয়মাণ সেই রাজধানীতে প্রথম মসজিদ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ মসজিদে ৬১ হাজার ৩৯২ জন একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন।

গত বুধবার ৬২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মসজিদ কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। এ সময় তিনি বৃহত্তম ডাক পরিষেবা সংস্থা পোস ইন্দোনেশিয়া শাখা এবং রাষ্ট্রীয় রেডিওর স্টুডিও ভবনও উদ্বোধন করেন তিনি।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী ইয়াকুত খলিল কোমাস, গণপূর্তমন্ত্রী বাসুকি হাদিমুলজোনো, আইকেএন কর্তৃপক্ষের প্রধান বামবাং সুসান্তোসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জোকো উইদোদো বলেন, ‘বৃহৎ এই মসজিদ নির্মাণে প্রায় ৯৪০ বিলিয়ন রুপিয়া (৬২ মিলিয়ন ডলার) ব্যয় হবে। ২০১৪ সালের মধ্যে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, মসজিদটি ইন্দোনেশিয়ার বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করবে এবং ধর্মীয় অনুশাসন পালনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আশা করি, মসজিদটি বিশ্বের অন্য মসজিদের জন্য অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠবে।’

মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করছেন প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যে নুসানতারার নির্মাণ কাজ প্রায় ২০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মেগাপ্রকল্পের শহরটির নির্মাণকাজ ২০৪৫ সালে সম্পন্ন হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

জানা গেছে, মসজিদ ছাড়াও নতুন রাজধানীতে গির্জা ও ক্যাথিড্রালের পাশাপাশি বৌদ্ধ, হিন্দু ও চায়নিজদের জন্য উপাসনালয় স্থাপন করা হবে। ইন্দোনেশিয়ার নুসানতারার রাজপ্রাসাদ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনার নকশা করেন দেশটির বিখ্যাত ভিজ্যুয়াল শিল্পী নিওমান নুয়ার্তা।

২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো নতুন রাজধানী শহর উদ্বোধন করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত মেয়াদে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো উদ্বোধন করছেন তিনি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশটির ২০ কোটিরও বেশি মানুষ অংশ নেবে।

;

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *