সারাদেশ

সাবমেরিন কেবলে বড় বিনিয়োগে যাচ্ছে ৩ বেসরকারি কোম্পানি, ঝুঁকি কোথায়?

ডেস্ক রিপোর্ট: প্রতি সেকেন্ডে ৪৫ হাজার গিগাবিট ব্যান্ডউইথ সরবরাহের সক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন কেবল বসাতে দেশে প্রথমবারের মতো বেসরকারি পর্যায়ে একটি বড় বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে। বেসরকারি খাতে সাবমেরিন কেবল ব্যবসা যুক্ত হওয়ার ফলে দেশে ইন্টারনেটের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এমন প্রকল্পকে উচ্চ ঝুঁকির বলেও মত দিচ্ছেন অনেকে।

সামিট কমিউনিকেশনস, মেটাকোর সাবকম লিমিটেড ও সিডিনেট এই তিন লাইসেন্সধারী বেসরকারি কোম্পানি একটি কনসোর্শিয়ামের মাধ্যমে এই ব্যবসায় নামছে বলে নিশ্চিত করেছে দায়িত্বশীল সূত্র। প্রতিষ্ঠান তিনটি এরই মধ্যে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ক্যাম্পানার সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে বলেও জানায় সূত্রটি।

সেখানেই ঝুঁকি দেখছেন সাবমেরিন ক্যাবল সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ক্যাম্পানার মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যবসার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত আর্থিকভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পায় নি। আর এই খাতে তাদের যেহেতু সফলতা নেই তাই তাদের সাথে ব্যবসায় যুুক্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, ক্যাম্পানা নামের প্রতিষ্ঠানটি সিঙ্গাপুরে হলেও এই মালিকানা মিয়ানমারের নাগরিকদের হাতে। সে বিষয়টিও উদ্বেগের।

দেশীয় যে তিনটি কোম্পানি এই খাতে বিনিয়োগ করছে তারা সবাই একই কেবল লাইন ব্যবহার করে প্রতিশ্রুত ৪৫ হাজার জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

বিষয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু কোম্পানিগুলো একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে তাই কখনো কোনো অস্বাভাবিকতা কিংবা কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি হলে সব পক্ষ একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে বিবেচনা থেকেও এই উদ্যোগটি ঝুঁকিপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিলো ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এর সভাপতি ইমদাদুল হকের সঙ্গে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, বেসরকারিখাতে বড় বিনিয়োগে সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যবসাটি ঝুঁকিপূর্ণই মনে করা হচ্ছে।

তবে যেহেতু এটি আরো অনেক দেশের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, তাই এতগুলো দেশ একটি ভুল প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেওয়ার কথা নয়, এমনটাই মত দিলেন ইমদাদুল হক।

তিন কোম্পানির এই জোট মূলত বেসরকারি সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বৃদ্ধি ও ইন্টারনেটের দাম কমাতে কাজে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেই সাথে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির একচ্ছত্র আধিপত্য কমাতে সাহায্য করবে।

ক্যাম্পানার সাথে চুক্তি অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর থেকে তিন হাজার কিলোমিটার সাবমেরিন কেবল বাংলাদেশের কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত হবে। ফাইবার স্থাপনের প্রক্রিয়াটি দুটি ধাপে পরিচালিত হবে। ক্যাম্পানা সিঙ্গাপুর ও মিয়ানমারকে সংযুক্তকারী এক হাজার ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সিগমার কেবল সিস্টেমের সঙ্গে সংযোগ সরবরাহ করবে। এজন্য তিনটি কোম্পানির ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হবে এবং তা কোম্পানিগুলো ২৫ বছরের জন্য ব্যবহার করতে পারবে।

দ্বিতীয় ধাপে কক্সবাজার থেকে মিয়ানমারে ফাইবার স্থাপনে সাবমেরিন কেবল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এইচএমএন। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪৫ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে।

দেশে এখন ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের পরিমান ৫ হাজার জিবিপিএস। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) থেকে ২,৭০০ জিবিপিএস আর ২৩০০ জিবিপিএস সরবররাহ করে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি।

২০০৬ সালে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য-পশ্চিম ইউরোপ-৪ (সিমিউই-৪) কনসোর্টিয়ামের সদস্য। এটি ৮০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহে সক্ষম। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সাবমেরিন কেবল কোম্পানি সিমিউই-৫ এ যুক্ত হয়, যার মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় ১,৫০০ জিবিপিএস ব্র্যান্ডউইথ।

রাষ্ট্রায়ত্ব সাবমেরিন কেবল কোম্পানি ২০২৫ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন কেবল সিমিউই-৬ এ যুক্ত হবে, যার মাধ্যমে ১৩,২০০ জিবিপিএস ব্যান্ড সরবরাহে সক্ষম হবে।

সেই সাথে বাড়ানো হচ্ছে প্রথম সাবমেরিন কেবল কোম্পানির সক্ষমতা। এটি ৮০০ থেকে ৪৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা সম্পন্ন হবে। আর এতে খরচ হবে এক হাজার ৫৫ কোটি টাকা।

তৃতীয় সাবমেরিন কেবলটি সিঙ্গাপুর ছাড়াও মিশর, সৌদি আরব, ফ্রান্স ও ভারতের মতো বহু দেশকে সংযুক্ত করবে। ২০২২ সালের রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য থেকে বের হয়ে লাইসেন্স পায় এই তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

নতুন সরকারি ও বেসরকারি সাবমেরিন কেবল স্থাপিত হলে আইটিসি লাইসেন্সের আর যৌক্তিকতা থাকবে না। সেই সাথে আইটিসির জন্য বছরে ব্যয় করা ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাব বলছে, দেশে ২০২৫ সালের মধ্যে ব্যান্ডউইথের চাহিদা বেড়ে হবে ৩৪ হাজার জিবিপিএস।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *