সারাদেশ

লাফার্জহোলসিম সিমেন্টে গ্যাস সরবরাহ চুক্তি আর নবায়ন নয়

ডেস্ক রিপোর্ট: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থীদের তোরজোড় চলছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৮ আসনে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। তবে এবারের সংরক্ষিত আসনগুলোতে নতুনদের জন্য বর্তমানদের অনেককেই জায়গা ছেড়ে দিতে হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

এবারের নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে ২২৩টি আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে ৬২টি আসনে আর বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জয়ী হয়েছে। জাসদ, ওয়ার্কাস পার্টি ও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন। আসন পাওয়ার ভিত্তিতে প্রতি ৬ আসনের বিপরীতে একটি সংরক্ষিত আসন পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টির মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ৩৮ টি আসন, স্বতন্ত্ররা ১০টি ও জাতীয় পার্টি ২টি আসন। তবে স্বতন্ত্ররা তাদের ১০ আসনের দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়ায় দলটি একাই ৪৮টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিবে।

আগামী সপ্তাহের শুরুতেই সংরক্ষিত আসনের জন্য তফসিল ঘোষণা করবে ইলেকশন কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যেই সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। সে হিসেবে আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে। সাধারণ নির্বাচনের মতো সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনেও কমিশনকে সকল কাজ সম্পন্ন করতে হবে। যদিও এক্ষেত্রে ভোটার শুধুমাত্র সংসদ সদস্যরা।

জানা গেছে, সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নের জন্য বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রেও নানা কারণে যোগ্যদের নামও সুপারিশ থেকে বাদ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাই সেই সুপারিশ কতটা কাজে আসবে তা নিয়েও রয়েছে অনেকের সন্দেহ।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সংরক্ষিত আসনে এবার গুরুত্ব পাবেন নতুনরা। এর সঙ্গে দলের ত্যাগী ও জোটের কারণে মনোনয় বঞ্চিতরাও এগিয়ে থাকবেন মনোনয়ন পাওয়ায়। এ ছাড়াও সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে যারা সফল এমন বেশ কয়েকজনও রয়েছেন সে তালিকায়।

আবার যেহেতু শরীক ১৪ দল মাত্র ২টি আসনে জয়ী হয়েছে সেক্ষেত্রে তাদের মধ্য থেকেও ২/৩ জন মনোনয়ন পাবেন সংরক্ষিত আসনে।

সূত্রটি আরও জানায়, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংরক্ষিত নারী আসনে কাদের মনোনয়ন দেয়া সে ব্যাপারে কাজ করছেন। তফসিল ঘোষণা হলেই মনোনয়ন বিক্রি শুরু করবে দলটি। এরপরেই দলীয় মনোনয়ন বোর্ড বসে চূড়ান্ত করবে প্রার্থীদের।

গত সপ্তাহের শেষ দিকে (২৫ জানুয়ারি) মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে সংরক্ষিত আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়ে ২৫/৩০ জন বক্তব্য রাখেন।

এ সময় সংরক্ষিত আসনের এক সংসদ সদস্য বক্তব্য রাখতে গেলে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো তোমাকে গতবার এমপি বানিয়েছি। আবার দাঁড়িয়েছ কেন? বসো বসো।’

পরের দিন (২৬ জানুয়ারি) ধানমন্ডির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের করা এক বৈঠকে ঝিনাইদহের সংরক্ষিত সংসদ সদস্য খালেদা খানম দলের সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তুমি কি রানিং (বর্তমান সংসদ সদস্য)? রানিং থাকলে অন্যদের সুযোগ দাও। আমি যতটুকু জানি রিপিট (পুনরায়) হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তুমি অযথা টেনশন করিও না।

আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেত্রীরাই পাচ্ছেন অগ্রাধিকার

এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেত্রীরাই অগ্রাধিকার পাবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাদের মধ্যে এগিয়ে আছেন দলের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। তিনি মনোনয়ন পেলেও জোটের হিসাবে প্রত্যাহার করতে হয় মনোনয়নপত্র। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদিকা রোকেয়া সুলতানা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা ও হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াও রয়েছেন আলোচনায়।

১৪ দলের শরীকদের মধ্যেও দেওয়া হবে মনোনয়ন

এবারের নির্বাচনে ১৪ দল থেকে মাত্র ৬ জনকে ছাড় দিয়ে প্রার্থী প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ। তাদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও জাতীয় পার্টি (জেপি) মাত্র এই তিনটি দল আসন ছাড় পায়। এর মধ্যে মাত্র ২টি আসনে জয়ী হতে পারেন তারা। যা দিয়ে সংরক্ষিত আসনে কোন ভাগ পাবেন না তারা। ফলে আওয়ামী লীগের কোটায় ৩-৪ জনকে শরীকদের মধ্য থেকে মমনোনয়ন দিতে পারে দলটি।

তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। কারণ জৈষ্ঠ্য এই রাজনীতিবিদ টেকনোক্র্যাট কোটায় একবার মন্ত্রী হলেও কখনো সংসদ সদস্য হতে পারেননি। এ ছাড়াও ১৪ দলের অন্যতম শরীক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হকও রয়েছেন সে তালিকায়। তিনি গত সংসদের শেষ দিকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। আবার দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারও আছেন আলোচনায়। তবে তাদের দুজনের মধ্যে যে কোনও একজনই পেতে পারেন মনোনয়ন। জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ভোটে হেরে যাওয়ায় তার স্ত্রী বা পরিবারের অন্য কেউ মনোনয়ন পেতে পারেন।

মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনেরও কেউ কেউ

সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকেও এবার দেেয়া হতে পারে মনোনয়ন। তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শমী কায়সার, তারিন জাহান ও তানভীন সুইটির নাম জোড়েশোরেই শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়াও সংরক্ষিত নারী আসনে নানা শ্রেণি-পেশার সম্মিলন থাকবে বলে জানা যাচ্ছে।

এদিকে, দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি দুয়েকটি আসন শরিকদের ছাড় দেওয়া হতে পারে বলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদকে একটি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে একটি করে আসন ছাড়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। অন্য দলগুলোর মধ্যে ন্যাপের সম্ভাবনা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে এখনও তেমন কোনও আলোচনা শুরু হয়নি।

সংরক্ষিত আসনে কাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে তা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পরীক্ষিত ত্যাগীদের গুরুত্ব দিবো। যারা দুঃসময়ের পরীক্ষিত বন্ধু, তাদের ব্যাপারটা অগ্রাধিকার দিবো।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বার্তা২৪.কম কে বলেন, ‘যারা দুঃসময়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত তাদের আমরা এবার গুরুত্ব দিবো। নতুন বা পুরাতন যায় হউক এনিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যথাসময়ে জানিয়ে দিবেন।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *