সারাদেশ

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির মৃত্যু

ডেস্ক রিপোর্ট: সাতক্ষীরা বাজারে ওঠেছে শীতকালীন সবজি, শীতের সবজি বাজারে এলেও দামের কোনো তারতম্য ঘটেনি। পর্যাপ্ত সবজি উঠলেও দাম কমেছে না বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। দাম না কমায় ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। দাম বেশি থাকায় সাধারণ মানুষ অস্বস্তিতে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। দাম বৃদ্ধির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি প্রতিনিয়ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।  

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজারের কাঁচাবাজার ঘুরে এবং ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত সপ্তাহের তুলনায় দামই বেড়েছে কিছু সবজির। বাজারে গত সপ্তাহে ফুলকপির দাম ছিল কেজি প্রতি ৩৫ টাকা। তবে বর্তমান দাম প্রতি কেজি ৪০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম গত সপ্তাহেও ৫০  টাকা ছিল। বর্তমানেও দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহে শিমের দাম ছিল ৩০ টাকা। প্রতি কেজি শিমের বর্তমান দাম ৪০ টাকা।

অন্যদিকে ওলকপির দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ওলকপির দাম ছিল ২৫  টাকা। তবে বর্তমানে প্রতি পিস ওলকপি ২০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রতি পিস বাঁধাকপির দাম ৩০ টাকা থাকলেও এ সপ্তাহে ২৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। লালশাকের আঁটি ছিল ৫ টাকা যার বর্তমান দামও ৫ টাকা রয়ে গেছে। কলা ৩০ টাকা হালি থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় আলুর দাম কমলেও এই সপ্তাহে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি মেটে আলুর দাম ছিল ৪০ টাকা যার বর্তমান দাম ৫০ টাকা।

তবে বরবটি, পালংশাক, ঢেড়স,  নতুন আলু এবং কাঁচা ঝাল ও টমোটোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ সপ্তাহেও বরবটি ১৫ টাকা, পালংশাক ৭ টাকা, ঢেড়স ৩০ টাকা, নতুন আলু ৫০ টাকা, কাঁচা ঝাল ৬০ টাকা ও টমোটো ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতারা বলছেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা থাকলেও কোনো তদারকি চোখে পড়ে না কখনও। এখন শীতের সবজি বাজারে উঠেছে তবুও চড়া দাম, এটা অস্বাভাবিক। দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষরা খুবই বিপাকে পড়েছে। এই উর্ধ্বগতির বাজারে লোকাল সিন্ডিকেট করে একধরনের অসাধু সিন্ডিকেট দাম বাড়াচ্ছে। সঠিক মনিটরিং যদি থাকত নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হত না। অসংখ্যক সাধারণ নিম্ন আয়ের মানুষ এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে গিয়েও বেঁচে থাকার তাগিদে খাবার কিনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা দিয়ে। সঠিক বাজার মনিটরের অভাবে এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চলছে মানুষরুপী জানোয়াররা। ভোক্তা অধিকার তৎপরতা বাড়ালে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।’

এদিকে সাধারণ মানুষের মাংসের চাহিদা পূরণের একমাত্র সম্বল ব্রয়লার ও সোনালী মুরগি তবে সেটার ও আকাশ ছোয়া দাম। সাতক্ষীরা বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়,   ব্রয়লার গত সপ্তাহে  কেজি প্রতি ২১০ টাকা  বর্তমান  ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । সোনালী গত সপ্তাহে ৩৩০ টাকা বর্তমান  ৩৩০  টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ অনেক জায়গায়  গরুর মাংস কেজি প্রতি ৬০০ টাকা বিক্রি হলে সাতক্ষীরা বাজারে ৭০০ টাকা খাসির মাংস ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

মাছ, সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে মাছের দাম কিছুটা কমলে মাঝে মাঝে আবারও বেড়েছে। তেলাপিয়া গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ১০০ টাকা ছিল, বর্তমান দাম ৮০ টাকা। নাইলেটিকা গত সপ্তাহে ছিল ১১০ টাকা প্রতি কেজি, বর্তমান দাম ১২০ টাকা। কই গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ২২০ টাকা ছিল যার বর্তমান ২৫০ টাকা। রুই এর দাম কেজি প্রতি ২৩০ টাকা থেকে কিছুটা কমে বর্তমানে ২১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি কেজি পাঙ্গাসের দাম গত সপ্তাহে ১৭০ টাকা ছিল, বর্তমান ১৫০ টাকা। সিলভার গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ১২০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে, বর্তমান দাম ১২০ টাকা। পুটি গত সপ্তাহে ১৬০ টাকা ছিল, বর্তমান দাম ১৮০ টাকা। পারশের দাম গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা থাকলেও বর্তমান দাম কিছুটা কমে ৪০০ টাকা হয়েছে। ভেটকি প্রতি কেজি ৬০০ টাকা ছিল, বর্তমান দাম ৬৫০ টাকা। ভাঙ্গানের দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৭০ টাকা, বর্তমান দাম ৬০০ টাকা। পায়রা প্রতি কেজি ৫০০ টাকা এবং ছাটি  ৬০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে টেংরা ৩০০ টাকা, পাবদা ২৫০ টাকা, বতল ২০০ টাকা, হরিনা চিংড়ী ৫০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মুদি বাজারে দাম কিছুটা অস্থিতিশীল থাকলেও কিছু কিছু সময় দাম বেড়েছে আবার কমেছে। সে তুলনায় মুদি বাজারে গত সপ্তাহে সর্বনিম্ন ৫৮ টাকা করে বিক্রি হয়েছে আটাশ চাল, বর্তমান দাম ৫৮ টাকা। সর্বোচ্চ দাম ৫৯ টাকা করে বিক্রি হয়েছে মিনিকেট চাল, যার বর্তমান দাম ৬২ টাকা। গত সপ্তাহে কেজি প্রতি মসুর ডাল (মোটা) ১১৫ টাকা ছিল, বর্তমান দাম ১০৫ টাকা এবং মসুর ডাল (চিকন) ছিল ১৪৫ টাকা যার বর্তমান দাম ১৪০ টাকা। বুটের ডাল ছিল ৬০ টাকা যার বর্তমান দাম ৬৮ টাকা, মুগ ডাল (চিকন) ছিল কেজি প্রতি ১৪৫ টাকা, বর্তমান ১৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল গত সপ্তাহে  কেজি প্রতি  ১৭২ টাকা করে বিক্রি হয়েছে, বর্তমান ১৬৬ টাকা। নরমাল সয়াবিন তেল কেজি প্রতি ১৪৫ টাকা ছিল যা বর্তমানে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরিষার তেল কেজি প্রতি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দামেই।  

মসলা জাতীয় খাদ্যর দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। পেঁয়াজ গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ৭৫  টাকা ছিল, বর্তমান ৯০ টাকা। দেশি রসুন কেজি প্রতি ছিল ১৪০ টাকা, বর্তমান ১৪৫ টাকা। চায়না রসুন কেজি প্রতি ছিল ১৩০ টাকা, বর্তমান দাম ১৩০ টাকা। আদার দাম গত সপ্তাহে ছিল ১৭৫ টাকা, বর্তমান দাম ১৯০ টাকা। শুকনা ঝাল গত সপ্তাহে ছিল কেজি প্রতি ৪৬০ টাকা, বর্তমানে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা বলেন, ‘শীতকালীন সবজি বাজারে আসছে তবে আমরা বেশি দামে ক্রয় করছি বলে বেশি দামে বিক্রি করছি। গত বছর উঠার পর পরই দাম অনেক কম ছিলো। আমরা ও তো লাভ করবো আমাদের ও তো ছেলে মেয়ে আছে তাই যে দামে কিনছি একটু লাভ করে সেটা বিক্রি করছি। তবে বেশি দামে বিক্রি করে আমাদের লাভটা কি শুধু শুধু ক্রেতার সাথে বাকবিতণ্ডা আর ভালো লাগে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।’

বাজার করতে আসা লামিয়া বলেন, ‘সবকিছুরই দাম বাড়ছে। আমরা কিছুই কিনতে পারছি না। সবকিছুর দাম বাড়ল, আমাদের আয় তো বাড়েনি। শীতের মৌসুমে অনেক শাক সবজি বাজারে আসে তবে দাম যেন আগুন।  সব কিছু কেনাকাটার বাইরে একদম। অনেক জিনিস প্রয়োজন থাকার পরও কিনতে পারি না।’

ক্রেতা ইদ্রিস আলী জানান, ‘দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছে। এই উর্ধ্বগতির বাজারে লোকাল সিন্ডিকেট করে একধরনের অসাধু ব্যবসায়ী সবজির দাম বাড়াচ্ছে। এই অসাধু সিন্ডিকেট জানে নিম্ন আয়ের মানুষ গরুর মাংস, খাসির মাংস ক্রয় করার ক্ষমতা নেই। তারা অবশ্যই ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির মাংসের দিকে ঝুঁকবে। এজন্য এই অসাধু লোকাল সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির মাংসের দাম বৃদ্ধি করেছে। সঠিক মনিটরিং যদি থাকত নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *