টিকেট কাটতেই সারাদিন, ডাক্তার দেখাব কখন
ডেস্ক রিপোর্ট: শাহীন আলম। রাজধানীর উত্তরা এয়ারপোর্ট এলাকার বাসিন্দা। অনেকদিন যাবত তার বোন থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন। তাই বোনকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন চিকিৎসা নিতে।
শহরের জ্যাম ঠেলে উত্তরা থেকে শাহবাগ আসতে সময় লাগে অনেক। তাই ভোরেই বোনকে নিয়ে পৌঁছে গেছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
এতো সকালে এসেও দেখেন টিকেট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন। নিজেও দাঁড়িয়ে যান একটি লাইনে। সকাল আটটার দিকে টিকেট কাউন্টারে আসেন দায়িত্বরত ব্যক্তি। শুরু হয় টিকেট দেওয়া। এক ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষার পর দেখা মিলে সোনার হরিণের! টিকেট হাতে পান শাহীন আলম।
এরপর ডাক্তার দেখানোর পালা। আবারও একই অবস্থা। সেখানেও এক থেকে দেড়, দুই ঘণ্টার অপেক্ষা। অবশেষে ডাক্তারের সাক্ষাৎ শেষে যখন কিছু টেস্টের পরামর্শ দেন চিকিৎসক, তখন আবারও সিরিয়াল। এবার টিকেট কেটে নির্ধারিত ফি ব্যাংকে (বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের নির্ধারিত বুথে) দাঁড়িয়ে জমা দেয়ার অপেক্ষা। সেখানের চলে যায় আরও দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এ যেন চিকিৎসা নিতে এসে এক মহা যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়া।
সারাদিন টিকেটের সিরিয়াল শেষ করতে করতে সকাল গড়িয়ে দুপুর। ইতোমধ্যে দুপুরের খাবারের সময় শেষ হয়েছে। তবুও শেষ হয় না সিরিয়াল ধরার পালা।
শাহীন আলমকে এবার টেস্টের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা শেষে ধরতে হবে প্যাথলজি বিভাগের সিরিয়াল।
এদিকে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, টিকেট কাটার জন্য নারী-পুরুষ আলাদা মোট তিনটি কাউন্টার, টাকা জমা নেয়ার জন্য চারটি কাউন্টার, রোগীর ব্লাড স্যাম্পল কালেকশন করার জন্য রয়েছে পাঁচটি কাউন্টার। এসব কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সিরিয়াল ধরে। এভাবে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে রোগীর কখনো কখনো নির্দিষ্ট সময়ে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়।
এর মধ্যেই স্টাফ পরিচয়ে একের পর এক সিরিয়াল ভঙ্গ করেন অনেকেই। রোগীদের অভিযোগ, এদের জন্য সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পরে ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও বঞ্চিত হন কাঙ্খিত সেবা থেকে।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ডা: হাফিজুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, প্রতিদিন আমরা ৮-৯ হাজার রোগীকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছি। প্রতিদিন হাসপাতালের আউটডোরে একজন চিকিৎসক অন্তত ১৫০-২২০ জনের অধিক রোগীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে কাউন্টার থেকে টিকেট কাটা বা টাকা জমা দেয়ার যে লম্বা লাইন তা সমাধানে আমার অনলাইনে পেমেন্ট দেয়ার উপর জোর দিচ্ছি। যখন অটোমেশন পদ্ধতি চালু হবে, তখন কিছুটা হলেও চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষের সমস্যা লাঘব হবে আশা করি।
‘এছাড়াও কেউ যদি স্টাফ পরিচয়ে অসাধু উপায় অবলম্বন করে, তাহলে হাতেনাতে ধরতে পারলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি, ভবিষ্যতেও করবো।’
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।