বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন চালুর প্রতিবাদে ভারতে বিক্ষোভ
ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতে লোকসভা ভোট ঘোষণার আগেই কার্যকর করা হলো বিতর্কিত সিটিজেন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)। ‘মুসলিমবিরোধী’ এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর করা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতারা।
সোমবার (১১ মার্চ) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে সংসদের দু’কক্ষে পাস হওয়ার পরে রাষ্ট্রপতিও সিএএ বিল অনুমোদন দিয়েছিলেন। তবে গত চার বছরে সিএএ কার্যকর করা নিয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। সোমবার (১১ মার্চ) একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সিএএ চালু হওয়ার কথা জানিয়ে দিল দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
আইনে পরিণত হলেও প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে সিএএ-র ধারা-উপধারা যুক্ত হয়নি। ফলে বাস্তবে এই আইন কার্যকরও হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি সই করার ছয় মাসের মধ্যে আইনের নির্দিষ্ট ধারা-উপধারা যুক্ত করতে হয়। অন্যথায় লোকসভা কিংবা রাজ্যসভার নির্দিষ্ট কমিটিগুলির কাছে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ২০২০ সাল থেকে আইন কার্যকর করার সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন জানিয়ে আসছিল। এই বিলম্ব নিয়ে বিরোধী দলগুলোর সমালোচনার মুখোমুখি হন বিজেপি সরকার ।
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর মোদী সরকার সিএএ পাশ করায়। আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত। সংসদের দু’কক্ষে পাস হওয়ার পরে দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও অনুমোদন দিয়েছিলেন সিএএ বিলে। কিন্তু এত দিন ধরে সিএএ কার্যকর করা নিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি।
তবে তৃণমূল নেতৃত্ব বরাবরই সিএএ প্রসঙ্গে দাবি করে আসছেন, যে নাগরিকেরা ভোট দেন, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড আছে, তারাই এ দেশের নাগরিক। তাই তাদের নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিএএ-কে ‘ক্যা ক্যা’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন।তারা বিষয়টিকে ‘উদ্বাস্তু মানুষদের ভাঁওতা দেওয়ার চেষ্টা’ বলে কটাক্ষ করে।
সরকার ঘোষণা করেছে, হিন্দু, পার্সি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টানরা যারা মুসলিমপ্রধান আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ২০১৪ সালের আগে হিন্দু-সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে পালিয়ে এসেছে, তারা নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য হবে।
মুসলিম সম্প্রদায়কে নাগরিকত্বের সুযোগের বাইরে রাখায় বেশ কয়েকটি মানবাধিকার গোষ্ঠী আইনটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ বলে ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্গে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
তবে মুসলিম গোষ্ঠীগুলো বলছে, প্রস্তাবিত ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি)-এর সঙ্গে সমন্বিতভাবে সিএএ আইন ভারতের ২০ কোটি মুসলিমের সাথে বৈষম্য করতে পারে। মুসলিমদের আশঙ্কা, সরকার কিছু সীমান্তবর্তী রাজ্যে কাগজপত্র ছাড়াই মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারে।
কিন্তু মোদি সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, এটি মুসলিমবিরোধী নয়। সেই সঙ্গে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে নিপীড়নের সম্মুখীন সংখ্যালঘুদের সহায়তার জন্য আইনটি প্রয়োজন বলে জানানো হয়।
সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।