আন্তর্জাতিক

সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনীর পর মীনা কুমারীর কবিতা নিয়ে পোলাক

ডেস্ক রিপোর্ট: স্বপ্নীল প্রোডাকশনস নিয়ে এলো দেশের তরুণ প্রজন্মের অন্যতম সেলিব্রেটেড আবৃত্তিশিল্পী সামিউল ইসলাম পোলাকের নতুন কবিতার সিরিজ ‘আই রীড আই রিসাইট’। গতকালই সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই সিরিজের প্রথম পরিবেশন প্রকাশিত হয়েছে।

তাতে দেখা যাচ্ছে পোশাক বলিউডের ট্রাজেডি কুইন’খ্যাত নায়িকা মীনা কুমারীর লেখা কবিতা পাঠ করছেন। পোলাকের অনবদ্য দক্ষ দক্ষতা, বিষয় বৈচিত্র্য এবং সামগ্রিক উপস্থাপনা একটি নান্দনিক সৃজনে পরিণত করেছে।

বিষয়টি নিয়ে পোলাক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘‘সাহিত্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, সিনেমা, সংগীত এবং চিত্রশিল্প- এসব থেকে আমি অমূল্য শিক্ষা সংগ্রহ করেছি যা আমার বোধকে উচ্চতর করেছে, সম্প্রীতি, শান্তি ও ভালবাসার গভীর উপলব্ধি জাগিয়েছে। ‘আই রিড আই রিসাইট’ হল আমার বেড়ে ওঠা সময়ে শিল্পের সেই সব আলোকিত ব্যক্তিদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা, যারা আমার শৈল্পিক যাত্রাকে জ্ঞানের স্তম্ভ এবং আনন্দের স্রোত হিসাবে কাজ করেছেন।’’

সামিউল ইসলাম পোলাক /  ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম সিরিজে ৬টি পরিবেশনা থাকছে যার মধ্যে একটি পর্ব মুক্তি পেয়েছে। ভারতের কিংবদন্তি অভিনেত্রী মীনা কুমারীর লেখা একটা কবিতা দিয়ে শুরু করেছি। মীনা কুমারী অভিনেত্রীর পাশাপাশি একজন দক্ষ কবি ছিলেন। সে কথা হয়ত অনেকেরই অজানা। ১৯৭২ সালে তার মৃত্যুর পরে তার বেশিরভাগ লেখা ভারতের কিংবদন্তী গীতিকার ও কবি গুলজার তার কবিতা প্রকাশ করেন। তার কন্ঠে ধারণকৃত কবিতা ও গজলগুলির অ্যালবাম প্রকাশ করে সারেগামা। অ্যালবামের সুরকার ছিলেন খৈয়াম। আমার এই কবিতা আবৃত্তিতে সান্তুরের সাথে যোগ করা হয়েছে মীনা কুমারীর সেই দুষ্প্রাপ্য আওয়াজ যা তার বাড়ির ভিনাইল রেকর্ড থেকে সংগৃহিত। সিরিজের প্রথমটিতে আরো থাকছে মাইকেল মধুদন দত্ত, প্রেমেন্দু মিত্র, জয় গোস্বামী, শক্তি চ্যাট্যাপাধ্যায়, শাহির লুধিয়ানভি, মীনা কুমারী, ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ এবং রয় তুর্ক এবং লু হ্যান্ডম্যানের এর কবিতা।’

সামিউল ইসলাম পোলাক /  ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

‘আই রিড আই রিসাইট’ সিরিজে হাত দেওয়ার আগেই আরেকটি অনন্য অর্জন এসেছে পোলাকের ঝুলিতে। অ্যামাজন পাবলিশিং (এপাব)-এর অধিনে ওডিসি গ্লোবাল ফাউন্ডেশন ফর আর্টস এন্ড কালচার প্রকাশ পায় আবৃত্তিশিল্পী সামিউল ইসলাম পোলাকের আত্মজীবনীমূলক কফি টেবিল বুক ‘থার্টি থ্রি সামার’।

পোলাল বলেন, ‘‘আমার তেত্রিশ তম জন্মদিনে হঠাৎ করেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই কালজয়ী কবিতাটি মনে পড়ল, ‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি’’। ভাবলাম আমার অনুভূতিগুলোকে কাগজে লিখে রাখি। পরক্ষণেই মনে হলো একটা আত্মজীবনী লিখি। রবীন্দ্রনাথের অটোবায়োগ্রাফি ‘জীবনস্মৃতি’ গোটাটা পড়ে নিলাম। সেটি পড়ার পর যে বোধের জন্ম হলো, তাকে অবলম্বন করেই একটা সচিত্র বই করি। শুরু হলো অন্বেষণ। বাড়ির পুরানো অ্যালবাম আর আমার পার্সোনাল কম্পিউটার থেকে ছবিগুলো সংগ্রহ করে লিখতে শুরু করলাম। এই বইটি আমার জীবনের নির্বাচিত স্মৃতির একটি সচিত্রভ্রমণ। বইটি মূলত হারানো বসন্তগুলিকে নতুন করে ফিরে দেখা। এখানে আমার বাবা-মা আছেন, দাদী-নানী আছেন, আমার মুমু আছে, স্বপ্নীল আছে, আমার স্কুল আছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আছেন, লতা মঙ্গেশকার আছেন, পাকিজা আছে, আর সবার সাথে মিলেমিশে আছে আমার শিল্পীসত্তা।’

সামিউল ইসলাম পোলাক /  ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

শিল্পী সামিউল ইসলাম পোলাক দুই বাংলার একজন জনপ্রিয় আবৃত্তিশিল্পী। তার জন্ম ফরিদপুর জেলায়। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, ফরিদপুর থেকে আবৃত্তির প্রশিক্ষণ নেন। রবীন্দ্র কাব্য সাহিত্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন শান্তিনিকেতনের শিক্ষয়িত্রী পরমা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে। বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, ব্রজবুলি, হিন্দি ও উর্দুতে কবিতা আবৃত্তি করেন। তার প্রথম কবিতা আবৃত্তির অ্যালবাম ‘ইতি রবীন্দ্রনাথ’ প্রকাশিত হয় ভারতের সুপ্রসিদ্ধ কম্পানি হিন্দুস্থান রেকর্ডস থেকে ২০১৭ সালে। দ্বিতীয় একক সংকলন প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালে ভারতের বিখ্যাত কম্পানী এইচএমভি অধুনা সারেগামা বাংলা থেকে। বাংলাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লার পর পোলাক দ্বিতীয় শিল্পী, যার কাজ প্রকাশিত হয় ভারতের সারেগামা থেকে। দেশে বিদেশে নানান জায়গায় একক আবৃত্তির পাশাপাশি মঞ্চে দ্বৈত পরিবেশনা করেছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা , ইন্দ্রাণী সেন, শামা রহমান, শ্রাবণী সেন, লোপামুদ্রা মিত্র, শ্রেয়া গুহঠাকুরতা, অদিতি মহসিন, জয়তি চক্রবর্তী, ইমন চক্রবর্তী, সৌরেন্দ্র-সৌম্যজিত এবং স্বপ্নীল সজীবের সাথে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ইউনেসকো প্রকাশ করে পোলাকের ভিন্নধর্মী পদ্যচিত্র বিদ্রোহী-দ্য স্পিরিট অফ রেবেল।

পোলাককে সম্মাননা তুলে দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ব্যক্তিত্ব বিবি রাসেল ও ফ্যাশন ডিজাইনার চমন চৌধুরী /  ছবি : শিল্পীর সৌজন্যে

এছাড়া তাকে আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে অভিজ্ঞানপত্র দিয়ে সম্মান প্রদান করেছে ভারতীয় হাই কমিশন, ইউ এস অ্যাম্বাসি, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রী অরবিন্দ ইন্সটিটিউট অব কালচার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্দিরা গান্ধি কালচারাল সেন্টার। বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে স্বর্ণপদক, শ্রেষ্ঠ আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ফেম এওয়ার্ড (বাইফা), জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম সম্মাননা স্মারক, কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল বই মেলা পুরুষ্কার অর্জন করেছেন তিনি।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *