সারাদেশ

ঈদ-বৈশাখের ছুটিতে সিলেটে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের আশা

ডেস্ক রিপোর্ট: পবিত্র ঈদুল ফিতর ও বাঙালির ঐত্যিবাহী উৎসব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে টানা ৫ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। এক সঙ্গে দুটি উৎসব হওয়ার ফলে বাড়তি আনন্দ বিরাজ করছে সবার মাঝে। টানা ৫দিন ছুটি থাকায় কয়েক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটে পারে। পর্যটকদের বরণে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে ৬০-৬৫ শতাংশ হোটেল মোটেল কক্ষ বুকিং হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সিলেটে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ও সেবা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ হলো সিলেট। বিশ্বজুড়ে সুনাম ছড়িয়ে আছে সিলেটের চা। উঁচু-নিচু টিলা ও টিলাঘেরা সমতলে সবুজের চাষাবাদ। শুধু সবুজ আর সবুজ। যান্ত্রিক নগরীর কোলাহল থেকে অদূরে রাস্তার দু-পাশে সারি সারি গাছের বাগান। প্রকৃতির সকল সৌন্দর্যের সম্মিলন যেন এখানে। শুধু সারি সারি চা-বাগান নয়। ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের পাদদেশে সবজু বিস্তৃত পাহাড়, সেই পাহাড়ের গায়ে মেঘের আভা, ভয়ে আসা নদী ও ঝর্ণাধারার নির্গত স্বচ্ছ জলারাশি দেখতে কিংবা পাথরের রাজ্য ও জ্বলা টিলায় পানির মধ্যে আগুন দেখতে ঘটতে পারে পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম।

সিলেটে এসে ঘুরতে পারেন- হজরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.) এর মাজার, জাফলং, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, রাতারগুল, লালাখাল, শ্রীপুর, পান্তুমাই, মায়াবতি ঝরনা, জৈন্তিয়া রাজবাড়ী, ডিবির হাওর, বিছানাকান্দি, লোভাছড়া, চেরাপুঞ্জি, জকিগঞ্জে তিন নদীর মোহনা, একাধিক চা বাগান।

এছাড়া মহানগরীর মধ্যে রয়েছে দেখার মতো রয়েছে অনেক পর্যটন স্পট। ঘুরে দেখা যাবে খুব অল্প খরচে। এরমধ্যে ক্বিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি, চাঁদনীঘাটের সিঁড়ি, জিতু মিয়ার বাড়ি, বঙ্গবীর ওসমানী জাদুঘর, মিউজিয়াম অব রাজাস, মালিনী ছড়া চা-বাগান, লাক্কাতুড়া চা-বাগান, সিলেট ইকোপার্ক, ওসমানী শিশু পার্ক, জননেত্রী শেখ হাসিনা খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, শাহী ঈদগাহ, রাজা গৌর গোবিন্দের টিলা প্রভৃতি।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন-ইতোমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।পর্যটকরা স্পটগুলোতে এসে যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হয় এবং অতিরিক্ত ভাড়া যাতে কেউ নিতে না পারে তার জন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে।

জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের অফিসার ইনর্চাজ রতন শেখ বলেন, প্রতিবছরে জাফলংয়ে ব্যাপক পর্যটক আসেন। এবছরও তার ব্যতিক্রম হবে না।যেহেতু এক সঙ্গে ঈদ ফিতর ও পহেলা বৈশাখীর ছুটি রয়েছে।

তিনি বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য
পোশাকধারী ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য ছাড়াও সাদা পোশাকে তৎপরতা থাকবে। ঘুরতে এসে যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয় নিশ্চিত করা হবে। কেউ হয়রানির শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো.রফিকুল ইসলাম বলেন, যারা বিভিন্ন স্থান থেকে আসবেন তাদেরকে বলবো পিকআপ ভ্যান বা পণ্যবাহী গাড়িতে কেউ ভ্রমণ না করেন।বিশেষ করে উচ্চ আওয়াজে গান-বাজনা না করেন।কারণ এতে পথচারীদের সমস্যার পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এবিষয়টি এড়ানো উচিত। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘটা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আমাদের জেলা ট্রাফিক পুলিশ কাজ করবে।

কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবীরা সার্বক্ষণিক সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র এলাকায় তৎপর থাকবেন। এছাড়া নৌকা ভাড়া যাতে বেশি না নেওয়া হয় তার জন্যও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ইতোমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পর্যটকরা স্পটগুলোতে এসে যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন তার জন্য আমরা সবাই সতর্ক রয়েছি। সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো বর্ষা মৌসুমে দেখতে বেশি সুন্দর। বষা মৌসুমে বৃষ্টি হলে পর্যটনস্থলগুলো সৌন্দর্য মেলে ধরে। এ বছর আমরা বৃষ্টির দেখা পেয়েছি। আশা করছি কিছু পর্যটক হবে। তবে যেভাবে আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা সেভাবে হোটেল মোটেল বুকিং হয়নি।

তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবছর পর্যটকের উপস্থিতি কম হবে। অন্যান্য বছরগুলোতে এ সময়ে ৭০-৮০ শতাংশ হোটেল মোটেল কক্ষ বুকিং হয়ে যেতো।কিন্তু এবছর বুকিং হয়েছে ৬৫ শতাংশ।

কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, বাজারে যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।টাকা বাঁচাতে পারলে ঘুরতে আসবে।মোট কথা অভাব-অনটন থাকার কারণে এবছর পর্যটকের উপস্থিত কম হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, পর্যটকরা যাতে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ট্যুরিস্ট পুলিশকে তৎপরতা বৃদ্ধি করতে এবং প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্য এক বৈঠকে বলা হয়েছে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *