সারাদেশ

একসঙ্গে সুখে আছেন মালাইকা-অর্জুন

ডেস্ক রিপোর্ট: কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন মেধাবী অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী ও লেখক আশনা হাবিব ভাবনা। দেশে ফিরে আবারও কাজে ডুব দিয়েছেন এই তারকা। কেমন ছিল কানের অভিজ্ঞতা তা নিয়ে কথা বলেছেন বার্তা২৪.কমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসিদ রণ

কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত কি হুট করেই নেওয়া?

একদমই না। অনেক আগে থেকেই কান চলচ্চিত্র উৎসবে যেতে চাইতাম। শুধু কান নয়, বিশ্ব সিনেমার আরও যে সব প্রসিদ্ধ আয়োজন রয়েছে সব জায়গায় যেতে চাই। এতে একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমার অভিজ্ঞতার ভান্ডার পূর্ণ হবে। তবে সব সময় তো আর সুযোগ সুবিধা হয়ে ওঠে না। তাছাড়া সারাজীবন আমি বাবা মা কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণ করেছি। একা ট্রাভেল করতে পারবো কি না এ নিয়েও এক ধরণের শঙ্কা ছিল মনে। অবশেষে এবারই সাহসটা করলাম।

আশনা হাবিব ভাবনা / ছবি : ইএন নাঈম কানের অভিজ্ঞতা ছোট্ট করে বলতে বললে কি বলবেন?

এতো বিশাল পরিসরে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়ে আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞ। কান উৎসবে সারা পৃথিবী থেকে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা চলে আসেন। পরিচালক-প্রযোজক থেকে শুরু করে লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, প্রোডাকশনের লোক সবার এক মিলনমেলাতে রূপ নেয় উৎসব প্রাঙ্গণ। সেখানে যতোটা পারা যায় তাদের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করেছি। এবারই প্রথম একা বিদেশে গিয়েছি। আমি চেয়েওছিলাম যে সম্পূর্ণ একা গিয়ে দেখব কতোখানি পারি, এটা নিজেকে নিজে জানারও একটা চেষ্টা ছিল। এ রকম একা ফেস্টিভ্যালে তিন চারটে স্যুটকেস নিয়ে ট্রাভেল করা খুবই কষ্টকর। চলচ্চিত্র উৎসব না হলে এই একা যাওয়াটা এতোটা উপভোগ্য হতো না। পুরোটা জার্নি আমি নিজের বুদ্ধমত্তা নিয়ে সফলতার সঙ্গে শেষ করে দেশে ফিরেছি।

আশনা হাবিব ভাবনা / ছবি : ইএন নাঈম কানে যাওয়ার পক্রিয়াটা কেমন ছিল?

মনস্থির করার পরই আবেদন করেছি যে আমি কানে অংশ নিতে আগ্রহী। তারা আমার ডকুমেন্টস দেখে মনে করেছে আমি সেখানে যাওয়ার যোগ্যতা রাখি। এরপর তারা আমাকে আমন্ত্রনপত্র পাঠিয়েছে। আমি ভিসার জন্য ফ্রেন্স অ্যাম্বাসিতে আবেদন করি। ভিসাও পেয়ে যাই, ব্যাস এভাবেই হয়েছে পুরোটা বিষয়। কানে কোন সিনেমা নিয়ে না গেলেও সেখান থেকে সিনেমা নিয়ে এসেছি (কানে গিয়েই ভাবনা যুক্ত হয়েছেন একটি মালেশিয়াভিত্তিক মাল্টি ল্যাঙ্গুয়েজ সিনেমায়)!

আশনা হাবিব ভাবনা / ছবি : ইএন নাঈম কানের দিনগুলো কিভাবে কেটেছে?

কানে গিয়ে ঘুরবো ফিরবো, খাবো দাবো, ছবি তুলবো আর বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে গিয়ে কাজের জন্য নেটওয়ার্কিং করবো এটা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমি চেয়েছিলাম প্রতিদিন সিনেমা দেখতে। পছন্দের সিনেমাগুলো দেখতে আমাকে অনেক কষ্টও করতে হয়েছে। দেখা যাচ্ছে একটি ছবির শো সকাল আট টা থেকে। তার জন্য আমাকে ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে সারা দিনের জন্য একবারেই রেডি হয়ে উৎসবে যেতে হতো। এমনও হয়েছে, আমি খাওয়ার সময় পর্যন্ত পাইনি। দেখা গেল সিনেমা শেষ করে, আনুষাঙ্গিক কাজ সেরে বিকেলে গিয়ে খেয়েছি। কানে গিয়ে প্রথম দেখেছিলাম কাল্ট ক্ল্যাসিক ‘নেপোলিয়ান’ সিনেমাটি। সেটি ছিল সাড়ে সাত ঘণ্টার ছবি। অতোটা সময় আমাকে হলেই থাকতে হয়েছে। সেখানে তো খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আশনা হাবিব ভাবনা / ছবি : ইএন নাঈম কানে গিয়ে সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার গল্পটা শুনতে চাই…

একটি ছবির প্রিমিয়ার দেখতে গিয়েই পরিচয় হয় জাফর ফিরোজ ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি বাংলাদেশি হলেও দীর্ঘদিন ধরে মালেশিয়াতেই থাকেন। তিনি আমাকে জানালেন, একটি কয়েক বছর ধরে একটি সিনেমা করার পরিকল্পনা করছেন যার প্রধান চরিত্রের জন্য একজন বাংলাদেশি অভিনেত্রী দরকার। তিনি শুরু থেকেই আমার কথা ভেবেছেন। এজন্য আমার ফেসবুকে টেক্সটও করেছিলেন। কিন্তু সেটি আমার চোখে পড়েনি। তিনি আমাকে নিয়েই কাজটি করতে চেয়েছিলেন। এজন্য আমার রিপ্লাই না পেয়েও তিনি অন্য কারও সঙ্গে ছবিটি নিয়ে কথা বলেননি। ভেবেছিলেন দেশে এসে আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবেন। যেহেতু আমাকে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পেয়েই গিয়েছেন তাই সেখানেই সিনেমাটির কথা বলেন এবং গল্পটি শোনাতে চান। আমি শুনে রীতিমতো গল্পটির প্রেমে পড়ে যাই। এরপর ছবিটির এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসারের সঙ্গে আমার মিটিং হয়। সেখানেই আমাকে তারা চূড়ান্ত করেন। ‘জেনোবিয়া’ নামের ছবিটি চারটি ভাষায় নির্মিত হবে। বাংলাদেশ আর মালেশিয়া ছাড়াও চীন আর জাপানেও ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের। ছবির শুটিং হবে মালেশিয়াতেই। যেখানে একা যেতেই ভয় পাচ্ছিলাম সেখানে কান থেকে ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ফিরব সেটা ভাবনারও বাইরে ছিল।

কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেশি বেনারশি শাড়ি কেটে তৈরী করা গাউনে ভাবনা কানে আপনার পোশাকের প্রশংসা হয়েছে। এ নিয়ে কি বলবেন?

আমি তো সব সময়ই নিজেকে সুন্দরভাবে প্রেজেন্ট করতে চাই। যে ধরনের পরিবেশে যাই সেটি বুঝে নিজেকে উপস্থাপন করি। কানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। যেহেতু এতো চমৎকার একটি আয়োজনে যাচ্ছি, সেহেতু নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করবো সেটা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাকে অনেকেই দারুণভাবে সহযোগীতা করেছেন বলেই অল্প সময়ে আমি ঠিকঠাকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে কানে যেতে পেরেছি। আমি এবং আমার সঙ্গে যে ছয় জন ডিজাইনার কাজ করেছেন- সবাই চেয়েছি নিজের দেশের ঐতিহ্যকে কানের মঞ্চে রিপ্রেজেন্ট করতে। এজন্যই দেখবেন আমি জামদানি, রিকশা প্রেইন্টের ব্লাউজ, কাক, বেনারসি শাড়ি কেটে গাউন কিংবা মায়ের বিয়ের কাতান শাড়ি পড়েছি।

সঞ্জয়লীলা বানশালীর ‘হীরামণ্ডি’ ওয়েব সিরিজের তাজদার চরিত্রে অভিনয় করে ভারতের ন্যাশনাল ক্রাশে পরিনত হওয়া ত্বাহা’র সঙ্গে কানের সৈকতে ভাবনা

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *