আন্তর্জাতিক

সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের অভিযান শুরু

ডেস্ক রিপোর্ট: চীনের মধ্যস্থতার যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরেই সশস্ত্র বিদ্রোহী তিন গোষ্ঠীর জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

রাখাইন প্রদেশের রামরি দ্বীপে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আস্তানায় বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বোমা এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে মিয়ানমারের বিমানবাহিনী। পাশাপাশি, ওই দ্বীপে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে গোলাবর্ষণ করেছে বলেও সরকারি সূত্রের জানিয়েছে রয়টার্স।

প্রসঙ্গত, বাদাবন এবং কুমিরসহ নানা বন্যপ্রাণীতে ভরা ওই দ্বীপের উপকূলে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ার জন্য চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের।

তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী-তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), আরাকান আর্মি (এএ) এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) নতুন জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ সে দেশের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত অটল থাকায় চলতি সপ্তাহেই চীনের মধ্যস্থতায় আয়োজিত শান্তি বৈঠক ভেস্তে গিয়েছিল।

গত নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী জোটের শুরু করা অভিযানের নাম রাখা হয়েছে ‘অপারেশন ১০২৭।’

ওই অভিযানের জেরে ইতিমধ্যেই সে দেশের প্রায় অর্ধেক বিদ্রোহীদের দখলে চলে গেছে। উত্তর, পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম মায়ানমারের শান, চিন আর সাগিয়াং প্রদেশ রয়েছে এই তালিকায়।

তিন সশস্ত্র সংগঠনের জোটের পাশাপাশি বিদ্রোহী গোষ্ঠী চিন ন্যাশনাল আর্মি (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স (কেএলডিএফ), পিপলস ডিফেন্স ফোর্সও (পিডিএফ) শামিল হয়েছে সরকার বিরোধী যুদ্ধে।

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট জান্তা বিরোধী রাজনৈতিক দল শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

দেশটিতে গৃহযুদ্ধের জেরে ঘরছাড়া হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ, যার মধ্যে কয়েক হাজার আশ্রয় নিয়েছেন উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মিজোরামে।

এই পরিস্থিতিতে ডিসেম্বরের গোড়ায় চিনা পিপল্‌স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) কয়েক জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যুদ্ধবিরতির জন্য সক্রিয় হন। মিয়ানমারের সরকারি টিভি চ্যানেল গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমারে সে কথা জানিয়েছিলেন সামরিক সরকারের মুখপাত্র জ মিন তুন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেজিংয়ের ওই উদ্যোগ বিফল হয়েছে বলে গত সোমবার জানিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি)।

তাদের রিপোর্ট বলছে, ব্রাদারহুড অ্যালায়ান্স এবং আরও দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী মিলে জান্তা সেনার উপর হামলা চালাতে ‘ব্রিগেড ৬১১’ নামে একটি বাহিনী গঠন করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জনজাতিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ওই বাহিনী। তারাই এই মুহূর্তে রয়েছে লড়াইয়ের প্রথম সারিতে।

রাখাইনের রামরি দ্বীপ সামরিক কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সেখানে বন্দর তৈরি করলে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেজিংয়ের প্রভাব আরও বাড়বে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *