সারাদেশ

২০২৪ সালে ‘স্মার্ট বন্দর’ হবে চট্টগ্রাম বন্দর

ডেস্ক রিপোর্ট: ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ‘স্মার্ট বন্দর’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করব। ইউরোপসহ উন্নত দেশের বন্দর যেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেভাবে ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দর স্মার্ট বন্দর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। তার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। সৌদিরা চলে এসেছে, আমরাও আমাদের কার্যক্রম শুরু করেছি।’

রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘বিদেশি বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিলিয়ন ডলার এখানে বিনিয়োগ করছে। প্রতিবছর যেভাবে আমাদের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমদানি রপ্তানির এ বছরের যে পরিসংখ্যান, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের খুবই উজ্জ্বল একটা সম্ভাবনা দেখছি। সার্বিকভাবে এই বাণিজ্য ও ধারাবাহিকতা এবং বিদেশি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ খুব অচিরেই বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটাবে।’

পিপিপির আওতায় বিনিয়োগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে বিনিয়োগ করে তারা টার্মিনাল তৈরি করবে৷ তৈরির পর একটা নির্দিষ্ট সময় তারা পরিচালনা করবে। তারপর আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে।’

রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘বাংলাদেশ সার্বিক বাণিজ্য, আমদানি রপ্তানি এবং এর ধারাবাহিকতা, বিশেষ করে কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের যে বিষয়টা…। প্রতি বছর ৮ থেকে ৯ শতাংশ যে বৃদ্ধি, সেটার জন্য সারাবিশ্ব এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে খুব আগ্রহী, বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে। বে-টার্মিনালকে উদ্দেশ্যে করে ব্যাপক আগ্রহ আমরা লক্ষ্য করছি৷ অনেক দেশ, অনেক বিদেশি বড় বড় প্রতিষ্ঠান আমাদের অফার দিচ্ছে যে বে টার্মিনাল হলে তারা বিনিয়োগ করতে চান। ইতোমধ্যে পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে আমাদের একটা বোঝাপড়া হয়েছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা ইতোমধ্যেই পিপিপি প্রকল্প আকারে হাতে নিয়েছি, কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। পাশাপাশি আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে যে মাল্টিপারোস টার্মিনালটি করার কথা, আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ থেকে আমরা ১ বিলিয়ন ডলারের একটা প্রস্তাব পেয়েছি। বিশ্ব ব্যাংক আমাদের এখানে বিনিয়োগ করার জন্য যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা আশা করছি ২০২৪ সালের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে বে টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব। পিএসএ সিঙ্গাপুর, ডিপি ওয়ার্ল্ড, আবুধাবি পোর্ট গ্রুপ, চট্টগ্রাম বন্দর এবং বিশ্বব্যাংক মিলে প্রায় সাড়ে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার এখানে (চট্টগ্রাম বন্দরে) আগামী বছর বিনিয়োগ হবে।’

‘ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বে টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যান অনুমোদন করে দিয়েছেন, সেটার ডিজাইন, ডেসটিনেশন এবং টেন্ডার ডকুমেন্টস আমরা প্রস্তুত করছি। পাশাপাশি আমাদের বন্ধু পিএসএ সিঙ্গাপুর, ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং আবুধাবি পোর্ট গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য পিপিপির আওতায় কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে।’

বৈশ্বিক অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায়ও কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দর রেকর্ড করতে যাচ্ছে জানিয়ে রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বর্ষপুঞ্জি শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পূর্বেই ৩ মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্লাবে প্রবেশ করেছে। চলতি ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর ৩০ লক্ষ ৪ হাজার ৫০৫ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। আশা করা যায় বছর শেষে চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় ৩.১ মিলিয়ন টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হবে, যা গত বছরের প্রায় সমান। তদুপরি চলতি ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর ১১ কোটি ৮৩ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫৭৬ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে, যা ৩১ ডিসেম্বর অর্থাৎ বছর শেষে প্রায় ১২ কোটি মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে। ফলে তা পূর্বের কার্গো হ্যান্ডলিং এর রেকর্ড অতিক্রম করবে।’

‘৩ দশমিক ১ মিলিয়ন যে কার্গো এবং ১২ কোটি মেট্রিকটন কার্গো, এর পুরোটাই বাংলাদেশের পণ্য। তৃতীয় কোনো দেশের পণ্য আমরা হ্যান্ডেলিং করিনি। বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি। এটাই দেশীয় বাণিজ্যের স্থিতিশীলতা প্রমাণ করে। বৈশ্বিক অর্থনীতি খারাপ হলেও আমাদের বাণিজ্য ভালো রয়েছে।’

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বন্দরের নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) উদ্বোধন করেছেন। এই টার্মিনালটি পরিচালনায় সৌদি আরব ভিত্তিক বেসরকারি গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিআইয়ের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের। আগামী দুই মাসের মধ্যেই এই টার্মিনালের কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষে আমরা অনেক মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সম্প্রতি সৌদি আরব ভিত্তিক বেসরকারি গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিআইয়ের সঙ্গে আমরা একটা চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। ইতোমধ্যেই তারা সেই টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী ২ মাসের মধ্যেই এই টার্মিনাল দিয়ে পণ্য উঠানামা করবে, সর্বোচ্চ ২ মাসের মধ্যেই টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশনে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম বন্দরের অধীন মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন করেছেন। সেখানে প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের জন্য তিনি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। সেই টার্মিনালের টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, আগামী দুমাসের মধ্যেই আমরা সেটার অনুমোদন পেয়ে যাব। আশা করা যায় ২০২৪ সালের মার্চ-এপ্রিলের দিকে প্রভৃতি নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর দেশের জিডিপিতে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ করবে। বে টার্মিনাল তারচেয়েও বেশি বেশি যোগ করবে। সবকিছু মিলিয়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি যোগ করবে। আমরা কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে এখন ৩ মিলিয়নের ক্লাবে আছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করবে। এখন তো চট্টগ্রাম বন্দর একাই ৩ দশমিক ১ মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করছপ, বে টার্মিনাল হয়ে গেলে চট্টগ্রাম বন্দরে এককভাবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয় ১১ থেকে ১২ মিলিয়ন টিইইউএস হবে। পাশাপাশি পায়রা এবং মংলা সমুদ্র বন্দর মিলে সব মিলিয়ে ১৬ মিলিয়ন টিইইউএস কনটেইনার পার হবে। ২০৩০ এর মধ্যে প্রায় ১৭ মিলিয়ন টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে সক্ষমতা বাংলাদেশের হবে।’

‘ডেনমার্কের একটি প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস, তারাও একটা টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রস্তাবটি পিপিপির আওতায় রাখা হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী বছরের জুন-জুলাই অথবা আগস্ট সেপ্টেম্বরের দিকে এপিএম টার্মিনালস তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।’

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘২০২৪ সালে বিশ্বব্যাংকসহ দেশি-বিদেশি অন্তত ৫ টি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বন্দরে ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এসব বিনিয়োগের আওতায় বে-টার্মিনাল নির্মাণসহ বন্দর কর্তৃপক্ষের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে সক্ষম হবে বাংলাদেশ। যার প্রত্যক্ষ প্রভাবে শক্তিশালী হবে দেশের অর্থনীতি।’

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *