সারাদেশ

ওয়ানডে বিশ্বকাপের বছরে টি-টোয়েন্টি ও টেস্টে বাংলাদেশের হাসি

ডেস্ক রিপোর্ট: পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ছিল ৪১ রানে ৩ উইকেট। নিউজিল্যান্ডও বেশিদুর যেতে পারলো না, ৩৫ রানে ৩ উইকেট। হিসেব তো সমানে সমান! বরং বলা যায় এই সময়ের লড়াইয়ে বাংলাদেশই ছিল এগিয়ে। পাওয়ার প্লে’র পরের ওভারে মার্ক চ্যাপম্যান রান আউট হয়ে ফিরলে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের চেহারা দাড়ায় ৩৮ রানে ৪ উইকেট! ১১০ রান তাড়া করতে নেমে শুরুর সাত ওভারেই ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। পুঁজি সামান্য হলেও বোলাররা দক্ষতার সঙ্গে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন দলকে। ৪৯ রানে ৫ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডকে হারানোর বিশ^াস ফিরে পায় বাংলাদেশ। কিন্তু সমস্যা যে বাঁধালো স্কোরবোর্ডের মামুলি পুঁজিটা! ১১০ রানের সামান্য সঞ্চয় নিয়ে বড়কিছু করা যায় না। বাংলাদেশও পারলো না। আর তাই জবাবি ইনিংসের শুরুর লড়াইয়ে এগিয়ে থাকলেও ম্যাচ জিততে পারলো না। জিতলো নিউজিল্যান্ডই। বছরের শেষদিনের বৃষ্টি এবং অলরাউন্ডার জিমি নিশাম ও অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারের ব্যাটিং জুটি নিউজিল্যান্ডকে জয় এনে দিল। বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচটা নিউজিল্যান্ড জিতলো ১৭ রানে। তিন ম্যাচের টি- টোয়েন্টি সিরিজের সমাপ্তি সমতায়।

সিরিজের প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ জিতেছিল ৫ উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচ ‘জিতে’ বৃষ্টি। শেষটায় জিতে সিরিজের হিসেব বরাবর করে দিল স্বাগতিকরা। এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের মাটি থেকে টি- টোয়েন্টি সিরিজে ড্র নিয়ে ফিরতে পারলো বাংলাদেশ। এই কৃতিত্বও কোনো অংশে কম নয়।

পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিংটা হলো একেবারে যেনতেন। ১১০ রানের স্কোরটাই জানান দিচ্ছে ব্যাটিং ব্যর্থতার বড়চিত্র। কিন্তু এই সামান্য যোগাড় নিয়েও বোলাররা শুরু থেকেই যেভাবে ঝাঁপালেন, জেতার জন্য জেদি চেষ্টা চালালেন সেটাই প্রশংসনীয়। ৫০ রানে নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেট তুলে নিয়ে স্পিনার মাহেদি হাসান ও পেসার শরিফুল ইসলাম লম্বা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখলেন।

বাংলাদেশের শুরুর বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ভেঙ্গেচুরে একাকার। মাহেদি তার প্রথম তিন ওভারে ১১ রানে ২ উইকেট তুলে নেন। শরিফুলের স্পেলটা আরো চমৎকার। তার প্রথম তিন ওভারের স্পেলটা এমন, ৩-০-১৩-২। যাতে ডটবল ১৩! ওপেনার ফিন অ্যালেন ছাড়া এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের শুরুর চার ব্যাটসম্যানের সবাই সিঙ্গেল ডিজিটে আউট!

একপাশ থেকে ক্রমশ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের ভরসা হয়েছিলেন অ্যালেন। দলের শুরুর ৫০ রানের মধ্যে তার একারই সংগ্রহ ৩৮। বিপদজনক হয়ে উঠা অ্যালেনকে ফেরান শরিফুল তার বিউটি বলে। ভেতরে আসা বলে শটস খেলতে গিয়ে বোল্ড হন অ্যালেন। ৩১ বলে ৩৮ রান করা অ্যালেনকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশ এই ম্যাচে নাটকীয় কিছু করার অর্ধেক কাজ সেরে ফেলে। স্কোরবোর্ডে মাত্র ১১০ রানের যোগাড় নিয়েও যে লড়াই করা যায় দলের বোলাররা তারই প্রমাণ রাখেন এই ম্যাচে।

৪৯ রানে ৫ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন অলরাউন্ডার জিমি নিশাম ও অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে তাদের ৩৭ বলে অপরাজিত ৪৬ রানের জুটি এবং বছরের শেষদিনের বৃষ্টি নিউজিল্যান্ডের জয়টা সহজ করে দিল। নিউজিল্যান্ড ইনিংসের ১৪.৪ ওভারের সময় ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি নামে। নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ৯৫। বৃষ্টিতে ম্যাচের বাকিটা আর হলো না। বৃষ্টি আইনে সেসময় এগিয়ে থাকায় ১৭ রানে ম্যাচ জিতলো নিউজিল্যান্ড।

মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সকালে টসে হেরে ব্যাটিং ব্যর্থতায় বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় মাত্র ১১০ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৭ রানে আসে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে। ম্যাচের কোনো সময় বাংলাদেশ কোনো জুটিতেই রান বড় করতে পারেনি। শুরুতে বাংলাদেশের ইনিংসকে নড়িয়ে দেন নিউজিল্যান্ডের তিন পেসার। মাঝে স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ফিনিসারের কাজ সারেন। ৪ ওভারে তার বোলিং স্পেল ১৬ রানে ৪ উইকেট! পুরো ২০ ওভারও খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৯.২ ওভারে গুটিয়ে যায় মাত্র ১১০ রানে।

ম্যাচ জিততে ১২০ বলে চাই ১১০ রান। সহজ টার্গেট। তবে নিউজিল্যান্ডের এই সহজ কাজটাও বাংলাদেশ কঠিন করে তুলে। স্কোরবোর্ডে ৫০ রান জমা করতেই দলের অর্ধেকসারির ব্যাটসম্যান আউট! দলের এই বিপদের সময় ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়েন জিমি নিশাম ও অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার। বোলিংয়েও দুর্দান্ত পারফরমেন্স দেখানো নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ব্যাট হাতেও লড়লেন। ফিরলেন দলকে জিতিয়ে।

ম্যাচে ভুলের যা কিছু করেছে বাংলাদেশ তার সবটুকুই শুধু ব্যাটিংয়ে। ম্যাচ শেষে সেই আক্ষেপই করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত-‘ স্কোরবোর্ডে সঞ্চয়টা যদি বড় হতো..”।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১১০/১০ (১৯.২ ওভারে, সৌম্য সরকার ৪, রনি তালুকদার ১০, নাজমুল হোসেন শান্ত ১৭, তাওহীদ হৃদয় ১৬, আফিফ ১৪, শামীম পাটোয়ারি ৯, মাহেদি ৪, রিশাদ ১০, শরিফুল ৪, তানভীর ৮, মুস্তাফিজুর ৩, অতিরিক্ত ১১, সাউদি ২/২৫, মিল্ন ২/২৩, শিয়ার্স ২/২৮, স্যান্টনার ৪/১৬)।
নিউজিল্যান্ড ৯৫/৫ (১৪.৪ ওভারে, অ্যালেন ৩৮, সেইফোর্ট ১, মিচেল ১, ফিলিপস ১, চ্যাপম্যান ১, জিমি নিশাম ২৮*, স্যান্টনার ১৮*, মাহেদি ২/১৮, শরিফুল ২/১৭)।
ফল: বৃষ্টি আইনে নিউজিল্যান্ড ১৭ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মিচেল স্যান্টনার। সিরিজ ১-১ ড্র।
সিরিজসেরা: শরিফুল ইসলাম।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *