সারাদেশ

বিএনপির মিছিলে বাধা: পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, আটক ৩

ডেস্ক রিপোর্ট: জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী গ্যাং ‘কবজি কাটা গ্রুপ’র অন্যতম মূলহোতা টাকলা হায়াতসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। 

বুধবার (৩ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর মোহাম্মাদপুররের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। 

র‍্যাব জানায়, নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। গাড়ির হেলপার-ড্রাইভার, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা ইত্যাদি পেশার আড়ালে তারা মূলত মোহাম্মদপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতো।  

গ্রেফতাররা হলেন- ‘কবজি কাটা গ্রুপ’র অন্যতম মূলহোতা মো. হায়াত ওরফে টাকলা হায়াত (৪০), মো. সাগর (১৯), মো. ইসমাইল হোসেন (১৯) ও মো. সুমন (৪৫)। র‌্যাব-২ অপর একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বুদ্ধিজীবি কবরস্থান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অপর একটি সন্ত্রাসী গ্যাং ‘বিরিয়ানী সুমন গ্রুপ’র মূলহোতা মো. সুমন ওরফে বিরিয়ানী সুমন (২৮), মো. বাদল (২৬), মো. আকাশ (১৯), মো. রাব্বি (২৮) ও মো. রাসেল (৩৮)। 

বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। 

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য কর্তৃক ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়। এ সকল সন্ত্রাসীদের হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী ও মামলা রুজু হয়। বিভিন্ন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়। অতি সম্প্রতি মোহাম্মদপুর ও তার আশেপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র‌্যাব। ফলশ্রুতিতে র‌্যাবের টহল ও গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়। 

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার চারজন ‘কব্জি কাটা গ্রুপ’ এবং পাঁচজন ‘বিরিয়ানী সুমন গ্রুপ’র সদস্য। তাদের দুটি গ্রুপে প্রায় ৩০-৩৫ জন সদস্য রয়েছে। কব্জি টাকা গ্রুপটি সন্ত্রাসী আনোয়ার ও টাকলা হায়াতের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়। এছাড়াও তারা ‘আনোয়ার সিন্ডিকেট’ নামেও পরিচিত। এই গ্রুপের সদস্যরা আগে ‘আনোয়ার গ্রুপ’ নামে অন্তর্ভুক্ত ছিল। নিজেদের মধ্যে অন্তকোন্দলের কারণে তারা ২-৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়। বিরিয়ানি সুমন গ্রুপটি গেৃফতার সুমন ওরফে বিরিয়ানী সুমনের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে। 

গ্রেফতাররা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোর করে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। গ্রেফতাররা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ এলাকাগুলো মাদক কারবারির সঙ্গেও জড়িত ছিল। 

টাকলা হায়াত সন্ত্রাসী আনোয়ারের অন্যতম প্রধান সহযোগী-

গ্রেফতার হায়াত ওরফে টাকলা হায়াত সন্ত্রাসী আনোয়ারের অন্যতম প্রধান সহযোগী। আগে সে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদকের ব্যবসা করত। টাকলা হায়াত আনোয়ারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে মোহাম্মদপুর ও তার আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি ও অপহরণসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিল। সন্ত্রাসী আনোয়ারের অবর্তমানে সে গ্যাংটি পরিচালনা করে এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান দেয়। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় কারাভোগও করেছে সে। 

গ্রেফতার সাগর, ইসমাইল ও সুমন তারা কব্জি কাটা গ্রুপের সদস্য। তারা টাকলা হায়াতের নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক কারবারিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে এবং এ সকল মামলায় কারাভোগ করেছে। 

গ্রেফতার মো. সুমন ওরফে বিরিয়ানী সুমন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক কারবারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করা জন্য ১৫-২০ জনের ‘বিরিয়ানী সুমন গ্রুপ’র নামে একটি সন্ত্রাসী গ্যাং তৈরি করে। সে এই সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় মাদক কারবারি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে। 

বিরিয়ানী সুমনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, ছিনতাই ও মারামারি সংক্রান্ত ১২টির বেশি মামলা রয়েছে। এ সকল মামলায় একাধিকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করে। 

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা মোহাম্মাদপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য গ্রেফতাররা পরিকল্পনা করছিল। এ উদ্দেশ্যে তারা এলাকায় ধারালো অস্ত্রসহ শো-ডাউন, বিভিন্ন স্থানে জনসাধারণকে ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার পরিকল্পনা করছিল। এছাড়াও তারা রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে পেশিশিক্ত প্রদর্শনের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় যেত। মূলত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে পেশি শক্তি প্রদর্শন ও সহিংসতা করার পরিকল্পনা করছিল।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *