আন্তর্জাতিক

দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘প্রধান শত্রু’ ঘোষণা কিমের, সংঘাতের আশঙ্কা

ডেস্ক রিপোর্ট: বছরের পর বছর ধরে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর অবশেষে সিউলকে  প্রধান শত্রু হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে পিয়ংইয়ং।

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এই সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়াকে তার দেশের ‘প্রধান শত্রু’ ঘোষণা করেছেন। আঞ্চলিক নীতি লঙ্ঘনের জন্য যুদ্ধের হুমকিও দিয়েছেন কিম। সিউলকে প্রধান শত্রু ঘোষণা করা, পুনর্মিলনের জন্য বিভিন্ন সংস্থার আহ্বান বাতিল করা এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে দখল করার হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে পুনর্মিলনের সম্ভাবনাকে একেবারে নস্যাৎ করে দিলেন কিম। 

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) এএফপির বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। 

কিম বলেন, যুদ্ধ শুরু করার কোনো ইচ্ছা ছিল না তার। তবে একটি এড়ানোরও কিছু নেই। দুই কোরিয়ার মধ্যকার ডি ফ্যাক্টো সামুদ্রিক সীমানাকে আর স্বীকৃতি দেবেন না বলে ঘোষণা করেন তিনি। ডি ফ্যাক্টো নীতিটি নর্দার্ন লিমিট লাইন নামে পরিচিত। ইতিমধ্যেই কিমের সামরিক বাহিনী এই এলাকায় লাইভ-ফায়ার আর্টিলারি ড্রিল মঞ্চস্থ করেছে।

কোরিয়া ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র বিশ্লেষক হং মিন বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত একটি বড় পরিবর্তন আনবে। কারণ অতীতে সশস্ত্র সংঘাতের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সিউলের জাতীয় ঐক্য একটি ব্যাক চ্যানেল হিসেবে ছিল, কিন্তু এখন সেটিও নেই। উত্তর কোরিয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে সংঘর্ষ ঠেকাতে যেকোনো আন্ত-কোরীয় ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত কার্যকরও হতে পারে।

হং আরও বলেছিলেন, এ নর্দার্ন লিমিট লাইন না মানার ঘোষণা একটি সামরিক সংঘর্ষে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।কিমের সিউল বিরোধী এই ঘোষণা দুই পক্ষকে মধ্যে একটি দীর্ঘ সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও  ওয়াশিংটন-সিউলের দাবি, পিয়ংইয়ং ও মস্কোর মধ্যকার স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম সাহায্য ও ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময় রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ পরিচালনা এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

সিউল তার অংশে যেকোনও উসকানিতে একাধিক গুণ শক্তিশালী হবে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আন্তঃ-কোরিয়া লেনদেনে বাধা সৃষ্টি হতে পারে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা দক্ষিণ এবং উত্তর কোরিয়া উভয়ের পক্ষে কখনই বুদ্ধিমানের কাজ নয় বলে এতে বলা হয়েছে। উত্তর কোরিয়া যেহেতু আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে, সরকার পরিস্থিতি পরিচালনা করার জন্য তার প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করবে বলে জানায় সিউল।

সাংজি ইউনিভার্সিটির সামরিক অধ্যয়নের অধ্যাপক চোই গি-ইল বলেছেন, দুই কোরিয়া এখন সশস্ত্র সংঘাতে যাওয়ার সর্বোচ্চ আশঙ্কায় রয়েছে। আন্ত-কোরিয়ান পুনর্মিলনের সম্ভাবনা দীর্ঘদিন ধরে ম্লান ছিল, কিন্তু এখন কিম সিউলকে তার এক নম্বর শত্রু হিসাবে ঘোষণায় একেবারেই অসম্ভব হয়ে যাওয়ার পথে। কিম শুধুমাত্র মিলের দরজা বন্ধ করেননি, তিনি দক্ষিণ- উত্তর কোরিয়ান সম্পর্কে তালা ঝুলিয়েছেন, সিআইএ বিশ্লেষক সু কিম যোগ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, পিয়ংইয়ং দীর্ঘদিন ধরে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে এবং কিম তার বহু প্রত্যাশিত সপ্তম পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর জন্য একটি উপযুক্ত মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করছেন।

সিউলের ইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিফ-এরিক ইজলি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার বিষয়ে কিমের নতুন বার্তা শাসনের টিকে থাকার জন্য একটি আদর্শিক সমন্বয় বলে মনে হচ্ছে । পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতি কিমের ফোকাস দেখে এমনটাই বোঝা যাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়া এপ্রিলে একটি সাধারণ নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুত, যেখানে রাষ্ট্রপতি ইউন সুক ইওলের দল দেশটির সংসদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে। এদিকে অভ্যন্তরীণভাবে তথ্যের প্রবাহের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রেখেছে উত্তর কোরিয়া। কিম তার অভ্যন্তরীণ বৈধতার জন্য বহিরাগত হুমকির বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি দ্বিগুণ করছেন বলেও জানান। সংঘাতের দিকেই আগাচ্ছে সিউল ও পিয়ংইয়ং-এমনটাই ভাবছেন তাই বিশ্লেষকরা।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *