সারাদেশ

প্লাস্টিকের বোতলের পানি পরিহারের নির্দেশ ঢাকা উত্তর সিটির

ডেস্ক রিপোর্ট: পড়ন্ত বিকেলে ঘরের চালের উপর সাদা ধোয়ার কুণ্ডলী আর বিবিখানা, জামাই আদর, ডিম সুন্দরী, ক্ষ্যাতাপুরী, ক্ষীর পাটিসাপটা, নারকেল গুড়ের পুলি পিঠা, ভাপা, দুধ চিতই পিঠার ঘ্রাণে মন উতলা হয়ে উঠল। পাগল-মনে আশপাশ তাকাতেই দেখা মিলল ছোট এক গ্রামের। যে গ্রামের ৩০টি ঘরের প্রতিটির আঙিনায় তৈরি হচ্ছে গ্রামীণ দাদি-নানিদের হাতে বানানো পিঠা। 

গ্রামীণ পরিবেশে খড়ের পালায় পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ তুলছেন ছবি  নাতি-পুতি আর বাড়ির ছোট বড় সবাই যেন এক সাথে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে পিঠা খেতে। সাথে বাড়ির বড়রাও অপেক্ষায় কখন হাতে আসবে মুরব্বিদের বানানো বাহারি সব পিঠা। সাজিয়ে রাখা পিঠার পসরা মন কাড়ছে সকলের।

গ্রামীণ পরিবেশে খড়ের পালায় পাশে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ ব্যস্ত ছবি তুলতে, অনেকেই বসে শুনছে গ্রাম বাংলার গান। কেউ তো আত্মীয় সেজে প্রিয়জনে হাত ধরে চষে বেড়াচ্ছেন এক আঙিনা থেকে আরেক আঙিনা। 

গ্রামীণ দাদি-নানিদের হাতে বানানো পিঠা নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের  তবে এটা গ্রাম নয়, এ দৃশ্য ইট-পাথরের শহরের জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির। জাতীয় পিঠা উৎসব ঘিরে এমন গ্রামীণ চিত্রই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেখানে। খড় দিয়ে বানানো হয়েছে ৩০টি ঘর। আর এসব ঘরেই ঠাঁই হয়েছে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার বাহারি পিঠার। কোনো কোনো দোকানে পাওয়া যাচ্ছে হাঁসের মাংস। চালের আঠার সাদা রুটির সাথে ঝোলে চুপিয়ে তৃপ্তির স্বাদ নিচ্ছেন অনেকেই। 

৫০ থেকে ১০০ টাকায় মিলছে এসব পিঠা  ভাপা, তৈল  ও পাটিসাপটার পাশাপাশি ডাল পিঠা, নকশি পিঠা, মাল পিঠা, নারিকেল পিঠাতেই মজেছেন সেখানে আশা দর্শনার্থীরা। ৫০ থেকে ১০০ টাকায় গ্রামীণ এসব পিঠা উঠছে ইট-পাথরের শহরের মানুষদের হাতে। দশ দিন ব্যাপী এ মেলায় সন্ধ্যা হলেই বেজে উঠে গ্রাম বাংলার গান, ভাওয়াইয়া গানের তালে গ্রামীণ নৃত্য এক অন্য অনুভূতি দিচ্ছে ব্যস্ত নগরের বাসিন্দাদের। 

হরেক রকমের পিঠাতে মজেছেন দর্শনার্থীরা  অস্থায়ী সরাইখানা, গ্রামের বাড়ির আদলে উঠান ও গরুর খামারের পাশে ঢেঁকি ঘর কী নেই সেখানে!  পিঠেপুলির সাথে ব্যতিক্রম এমন উৎসবে নিজেদের মত করেই মেতেছে সকলে।

সেগুনবাগিচা এলাকার তৃপ্তি ঘোষ এসেছেন মেলায়। ঢাকাতেই বেড়ে উঠায় গ্রামে যাওয়া হয়নি তার। তৃপ্তি ঘোষ বলেন, বাবা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় আমার জন্মের আগেই ঢাকায় সেটেল। তাই ছোট থেকেই গ্রামের দৃশ্য আমার পিছু টানে। তবে ইট-পাথরের শহরে এমন দৃশ্য দেখে আমি অবাক হওয়ার পাশাপাশি আবেগাপ্লুত হয়েছি। 

খড় দিয়ে বানানো হয়েছে ৩০টি গ্রামীণ ঘর  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনামিকা বলেন,  সারাদিন গাড়ির হর্ন ও যানজটের শহরের এমন একটি উৎসব সত্যি ক্লান্তি দূর করার মত। ধন্যবাদ জানাই শিল্পকলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে।

খন্দকার মাহামুদ হাসান নামের এক দর্শনার্থী বলেন, গ্রামের নির্মল বাতাসের একটা টান সব সময় আমাদের টানে। কিন্তু এখানে বাতাস না পেলেও ছোটবেলার পিঠেপুলি যে খেতে পারছি; এটাতেই আমি মনে করি আমরা ভাগ্যবান। 

সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় গ্রাম বাংলার গান আর গ্রামীণ নৃত্য  এদিকে দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে সান্ধ্যজলসার। বিভিন্ন উৎসবে ঠিক যেমন দিনের আলো ফুরাতে গ্রামের ঘরে হ্যারিকেনের মিট-মিট আলোর সামনে বসে গীত আর ভাওয়াইয়া গানের আসর জমে। আধুনিকতার এই যুগে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যগুলো এভাবেই স্থান পাক নগর থেকে শহরে। গ্রাম নয়,  শহরের প্রতিটি বাড়ির ছাদ হোক গ্রামীণ আদলের এমন প্রত্যাশাই আমাদের। 

আর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আর পিঠেপুলিকে ফেরাতেই এমন ব্যতিক্রম আয়োজন প্রতিবছর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিল্প কলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি।

তিনি বলেন, আমরা গ্রামীণ পর্যায় থেকে পিঠাশিল্পীদের তুলে আনার চেষ্টা করছি। দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই এই পিঠা উৎসব হচ্ছে। পরিবারের ছোটদের জন্য ঘরে ঘরে আমাদের মায়েরা যত্ন করে যে পিঠা তৈরি করেন সেই আদি পিঠাগুলোকেই বাঁচিয়ে রাখতে চাই।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *