সারাদেশ

বাংলাদেশে আশ্রয় নিল ৬৮ মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী

ডেস্ক রিপোর্ট: শীতের পড়ন্ত বিকেল। ঘড়ির কাঁটা তখন চারটা ছুঁইছুঁই। সূর্যটা ধীরে ধীরে হেলে যাচ্ছে অস্তপাড়ের দিকে। বিশাল এক দিঘীর চারপাশের হাজার হাজার মানুষ। দিঘীর এক পাশে লাল, নীল, সাদা ও হলুদসহ নানা রঙের সাজানো পাঁচটি সাম্পান ভাসমান। শুধু কী সাম্পান! আছেন মাঝিমাল্লারাও। সবার অপেক্ষা হুইসেলের। এরই মধ্যে হঠাৎ হুইসেল বেজে ওঠে। শুরু হয় সাম্পান বাইচ। বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ‘হেইওরে, হেইওরে’ ডাকে ঘামঝরানো দাঁড় বেয়ে চলেছেন মাঝিমাল্লারা। লক্ষ্য আগেভাগে দিঘীর দক্ষিণ পাড় ঘুরে উত্তর পাড় ছোঁয়া। 

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর অদূরে ফৌজদারহাট ডিসি পার্কে প্রথমবারের মত আয়োজিত চট্টগ্রামের ঐহিত্যবাহী সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

বিকেল তিনটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও একঘণ্টা দেরিতে চারটায় শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা। এতে পাঁচটি দল অংশ নেয়। পার্কের দিঘীর উত্তর পাড় থেকে শুরু করে দক্ষিণ পাড় ঘুরে পুনরায় উত্তর পাড় ছোঁয়ার চেষ্টা। এক ঘণ্টারও কম সময়ে ঘামঝড়ানো দাঁড় বেয়ে পাঁচটি সাম্পানের প্রত্যেকটিতে ছিলেন ছয়জন করে মাঝিমাল্লা নিয়ে শেষ হয় এই সাম্পান বাইচ। 

সাম্পান বললেই চট্টগ্রামের মানুষের চোখে ভাসে কর্ণফুলী নদী আর শেফালী ঘোষের গান ‘‘মন হাচারা মাঝি তোর সাম্পানত চত্তামন….’’, ‘‘ওরে সাম্পানওয়ালা তুই আমারে করলি দিওয়ানা…’’। এমন হওয়ারই কথা চট্টগ্রামের সঙ্গে এই সাম্পানের আছে একটা অন্তর্নিহিত সম্পর্ক। এখানকার কর্ণফুলি নদীর বুক চিরে এখনো চলছে সাম্পান। তবে যান্ত্রিক নৌকা ও স্প্রীডবোটের দাপটে এখন সেই সাম্পান অনেকটা বিলুপ্তের পথে।

ঐতিহ্যের বাহন সাম্পানকে নতুন প্রজম্মের কাছে পরিচিতি করে তুলে ধরতে এবার ডিসি পার্কের এমন আয়োজন করা হয়েছে সাম্পার বাইচের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। 

এতে প্রথমস্থান অর্জন করে অভয় মিত্র ঘাট সাম্পান সমিতি, দ্বিতীয় হয় ইছানগর বাংলা বাজার ঘাট সাম্পান সমিতি, তৃতীয় স্থান পায় চরপাথর ঘাটা ব্রীজঘাট সাম্পান চালক কল্যাণ সমিতি। এছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ইছানগর সদর ঘাট সাম্পান টেম্পু মালিক সমিতি এবং কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাছি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন দল।

বিজয়ী দলে সদস্য মো. দিদার বলেন, কর্ণফুলী নদীতে ২০০০ সালে সাম্পান বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। মাঝে দিয়ে কয়েকবছর বছর বাদ গেছে। এদিকে নতুন করে ডিসি পার্কে জেলা প্রশাসন এরকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। আমরা অনেক আনন্দিত। আমরা চাই এই খেলা আগামীতে আরও আয়োজন করা হোক। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানুক। 

একই দলের সুভাষ দাশ বলেন, আমরা আনন্দিত। জেলা প্রশাসক আমাদের সহযোগিতা করতে আমরা প্রতিবছর এরকম বাইচ খেলতে পারি।

সাম্পান বাইচে আসা সাম্পান মালিক নেতারা ঘাট রক্ষার দাবি তুলেন। সাম্পান সমিতির সভাপতি মো. আবুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, তারা বলেন, বড় বড় কোটিপতি-শিল্পপতিরা আমাদের ঘাট গুলো দখল করে নিচ্ছে। আমাদের মাঝিরা অনেক কষ্টে আছে। এভাবে চললে নদী থেকে সাম্পান উঠে যাবে। আমাদের চট্টগ্রামের ঐতিহ্য সাম্পান। সবাই আমাদের ঘাট ডাক দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা চায় যার ঘাট তাদের দেওয়া হোক। সিটি করপোরেশন একটি বোট দিয়ে লাইভঘাট দিক।

ফুল উৎসব দেখতে এসে সাম্পান বাইচ দেখা পায় আগত দর্শনার্থীরা। এসময় তারা চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার আহবান জানান। আবার অনেকে প্রথমবারের মত সরাসরি সাম্পান খেলা দেখতে পেরে আনন্দে উচ্ছ্বসিত। ডিসি পার্কে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ নির্বিশেষে সর্ব স্তরের মানুষ এ বাইচ উপভোগ করতে উপস্থিত হয়ে মেতে ওঠে আনন্দ-উল্লাসে।

নগরীর আগ্রাবাদ থেকে বন্ধুদের নিয়ে ডিসি পার্ক এসেছেন সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রাজ্জাক। ফুলে উৎসব দেখতে এসে সঙ্গে দেখলেন সাম্পান বাইচ। জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঘুরতে এসে দেখি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান বাইচ চলছে। দেখে অনেক ভাল লেগেছে। এই খেলাটি ধরে রাখা উচিত।’

একই কথা বলছেন কর্ণফুলী থেকে আসা দর্শনার্থী ডা. মোহাম্মদ রাজন। তিনি বলেন, সাম্পান বাইচ খুবই পুরোনো একটা ঐতিহ্যবাহী খেলা। এটি অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে। জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ এমন ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার জন্য। এরকম খেলা বার বার হোক এটাই কামনা করি।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহম্মাদ ফখরুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডিসি পার্কে আমাদের মাসব্যাপী ফুল উৎসব চলছে। সেই ফুল উৎসবের পাশাপাশি আজকে আমরা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান বাইচ আয়োজন করেছি। এই চট্টগ্রামের একসময়ে সাম্পান বাইচ হত। এখন সেটি অনেক কমে গেছে। আমরা আশা করছি এখন থেকে চট্টগ্রামের ডিসি পার্কে প্রতিবছর সাম্পান বাইচ হবে। আমরা গতবছর কর্ণফুলী নদীতেও সাম্পান বাইচের আয়োজন করেছিলাম।

তিনি আরও বলেন, পাশাপাশি আমরা হাজার বছরের নৌকা জাদুঘর করতে যাচ্ছি। যেখানে বাংলার বিভিন্ন ধরনের যেসব নৌকার রয়েছে, সেখান থেকে পুরোনো ১৫ টি নৌকা প্রদর্শনীতে রেখেছি। আমরা আশা করছি সামনে চট্টগ্রামে বাংলার নৌকা জাদুঘর নামে যে মিউজিয়ামটি করতে যাচ্ছি যেখানে চট্টগ্রামের শতাধিক নৌকা স্থান পাবে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের ডিসি পার্কে চলছে মাসব্যাপী ফুল উৎসব। দেশ বিদেশের ১২৭ প্রজাতির ফুলের লক্ষাধিক গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের ফুল উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে বই মেলা পিঠা উৎসব, ঘুড়ি উৎসবসহ থাকছে নানা অনুষ্ঠান। প্রতিদিই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে ডিসি পার্ন

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *