সারাদেশ

আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন

ডেস্ক রিপোর্ট: আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন গণনা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহেই ঘোষণা হতে পারে নির্বাচনি তফসিল। সেভাবেই সকল কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে আওয়ামী লীগও।

সংবিধান অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন শেষ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। নির্বাচনি রেওয়াজ অনুযায়ী ৫ নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে সার্বিক বিষয়ে অবহিত করার কথাও রয়েছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধ পরিকর। তাই নির্বাচনের আগে দলের মধ্যে থাকা সকল বিভেদ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থাকার নির্দেশনা রয়েছে দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি।

সেই সঙ্গে তৃণমূলে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। বিদ্রোহী ও বহিষ্কৃতদের একে একে ক্ষমা করে নামানো হচ্ছে নির্বাচনী মাঠে।

স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তার মাপকাঠি অনুসারেই এবার দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, আগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যের মধ্যে অনেকেই এবার পাবেন না মনোনয়ন। এমনকি মন্ত্রীদের মধ্যেও অনেকে মনোনয়ন পাবেন না, এমন কথা বেশ জোরের সঙ্গে শোনা যাচ্ছে৷ তবে সেই তালিকায় কাদের নাম রয়েছে, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি এখনো।

তবে তার আগে বিরোধী দলগুলোর কর্মসূচি কঠোরভাবে দমন করতে চায় দলটি। এরইমধ্যে দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন পর্যন্ত কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার লিখিত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, নাশকতা ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে দেশব্যাপী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ কর্মসূচি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

গত ৩০ অক্টোবর সকালে ২৩ -বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক যৌথসভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের জেলা/মহানগর ও উপজেলা/থানা/পৌর শাখাসমূহকে ব্যাপকভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য এ নির্দেশনা প্রদান করেন।

রাজপথ নিজেদের দখলে রেখে শক্তি দেখানো ও বিরোধী দলগুলোর সরকার পতনের আন্দোলন মোকাবিলা করাই এর অন্যতম লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের যুক্তি, নির্বাচন পর্যন্ত সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায় বিরোধী দলগুলো। তাদের আন্দোলন মোকাবিলা করতে রাজপথে থাকার কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রতিদিনই শান্তি সমাবেশ পালন করা হবে।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের ব্যাপক উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে। সেজন্য প্রায় ৬ লাখ কর্মীকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন প্রচারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ ভোটার ও যুবকদের আকৃষ্ট করতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণকে সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসাবে ৩০০ আসনে এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম প্রায় শেষ দিকে। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের মাধ্যমে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া এবং বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবেলায় মাঠে সক্রিয় থাকার সবুজ সংকেত দিয়েছে দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়ে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আমরা জেলা নেতাকর্মীদের বলেছি, ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি করতে। এছাড়া নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কী কী উন্নয়ন করেছেন, সেগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের অপশাসন এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের চিত্রগুলোও তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

দলীয় একটি সূত্র জানায়, এবার নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে, সেই চিন্তা মাথায় রেখে দলের হাই কমান্ড ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদেরকে এমপি পদে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য দলের কেন্দ্র গঠিত একধিক কমিটি স্থানীয় পর্যায়ে বর্তমান এমপি ও নতুন মনোনয়ন প্রার্থীদের বিষয়ে সম্প্রতি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। সে অনুযায়ী তিনি সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার তৈরিতে ইতোমধ্যে তৃণমূল জনগণের মতামত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও নাগরিকদের মতামত নিতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে দলটি। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রণয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন খাত সম্পর্কে ইশতেহারে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং আবারও সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগ কী কী নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে, এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে তাতে।  

ঢাকা মহানগর উত্তরের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বাপ্পি বার্তা২৪.কম কে বলেন, তফসিল ঘোষণা হলেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রার্থিতা বাছাই শুরু করবে।  তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে তখন আর আন্দোলনে কাজ হবে না। তাদের (বিএনপি) আন্দোলন হল নির্বাচনের আগে, তফসিল ঘোষণার আগে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা।  তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে আর কোন কিছুতেই কোন কাজ হবে না। ২৮ তারিখের পরে তারা অলআউট। এরপরে আর তাদের সামর্থ্য নেই। এর বেশি আর তাদের করার ক্ষমতা আছে বলে আমার মনে হয় না।

২৮ অক্টোবরের পরে ডাকা বিএনপির হরতাল অবরোধ ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,  তাদের অবরোধে আর কোন কাজ হবে না। এখন কর্মসূচি দেওয়ার জন্য দিচ্ছে।  তাদের কর্মসূচি থেকে সফলতা পাওয়ার আর কোন রাস্তা দেখি না। তাদের স্বপ্ন, তাদের প্রত্যাশা, তাদের ট্রামকার্ড সব তারা ২৮ তারিখে দিয়ে ফেলেছে। ২৮ তারিখের পরবর্তীতে আর কোন নেই। এর থেকে বড় কিছু করার ক্ষমতা তাদের নেই।  

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *