সারাদেশ

উত্তরের পথে দূরপাল্লার পরিবহন বেশি, যাত্রী কম

ডেস্ক রিপোর্ট: টাঙ্গাইলের বাসাইলে একসপ্তাহ ধরে দিন-রাত চলছে লোডশেডিং। দাবদাহের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সাধারণ জনগণ। সেচ কাজেও ব্যাঘাত হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে ধানের জমি। এতে শঙ্কায় রয়েছেন বাসাইলের কৃষকরা। এমন লোডশেডিং চলতে থাকলে সোনালি ফসল ধান ঘরে তুলতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

বীরেন সরকার নামে এক কৃষক বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা জমিতে পানি দিতে পারছি না। ২৪ ঘণ্টায় ৫ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। এমন ভাবে চলতে থাকলে আমাদের জমিতে ধান হবে না। 

কৃষক দয়াল সরকার বলেন, আমাদের জমি ফেটে গেছে। বিঘাতে ৪০ মণ ধান হয়, জমিতে ঠিক মতো পানি না দিতে পারলে ১০ মণ ধানও পাবো না।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর বাসাইলে ১১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে।

সেচ পাম্পের মালিক পরেশ সরকার বলেন, জমির মালিকরা আমাদের মারতে আসেন। জমিতে পানি চারভাগের এক ভাগ জমিতে যায় না, তখনই বিদ্যুৎ চলে যায়। আমরা কিভাবে ধান বাঁচাবো। বিদ্যুৎ যাই আর আসে।

সেচ পাম্পের মালিক আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের ধানের জমিতে যে সমস্যা হচ্ছে, প্রতিদিন ১০-১২ বার বিদ্যুৎ যাই আর আসে। ১০ মিনিট হয় আসে আবার চলে যাই। আমাদের জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে পানি দিতে দুইদিন সময় লাগে। যাদের মাঠে ১৫-২০ বিঘা জমি আছে তারা কিভাবে কৃষকের মাঠ বাঁচাবে। পল্লী বিদ্যুৎতের লোকদের কিছু বললে তারা কিছু বলছে না। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের যারা আছেন তারা যদি আমাদের সমস্যা গুলো দেখেন তাহলে আমরা এই সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবো। জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে, সেচ দিতে না পারলে আমাদের সোনার ফসল ঘরে তুলতে পারবো না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহজাহান আলী বলেন, ধান গাছ সেচ নির্ধারক খাদ্য, যা সেচের অভাবে ধান গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎতের অভাবে কৃষক ঠিক মতো সেচ না দিতে পারলে ধানের ফলনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

বাসাইল জোনাল অফিসের ডিজিএম অঞ্জন কুমার সরকার জানান, বিদ্যুতের উৎপাদন কম। আমরা যা বরাদ্দ পাচ্ছি, সেটা অনেক কম। যেখানে বাসাইলে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন, আর আমরা পাচ্ছি ৭ মেগাওয়াট। আমরা বিদ্যুৎ বিতরণ করি। জেনারেশন করে সরকারের আরেকটি জেনারেশন ডিপার্টমেন্ট। জেনারেশন হচ্ছে না, জেনারেশন কম হচ্ছে,বরাদ্দ কম। তার মধ্যে ২২ মেগাওয়াটের মধ্যে ৭ মেগাওয়াট পাচ্ছি। বরাদ্দ যেটা হয় সেটাও আবার পিডিবি পায় ৫৮ শতাংশ আর আমরা পাই ৪২ শতাংশ। কলকারখানা বন্ধ হলে ঈদের আগে বিদ্যুতের অবস্থা ভালো হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন,বাসাইলের প্রায় জমি ইরিগেশনের আওতাধীন। আমি প্রতিদিন কৃষকের মাঝে ঘুরি, প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রামে ঘুরেছি। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আমি কৃষকের জমি দেখেছি।অনেক জমির মাটি ফেটে যাচ্ছে পানি না দেওয়ার কারণে। বর্তমান ৭ দিনে বিদ্যুতের এতো খারাপ অবস্থা বাসাইলে। গ্রাম পর্যায়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩-৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আমরা কষ্টে থাকতে পারি, কৃষকরা বাস করতে পারে সাময়িক কষ্টের জন্য। কিন্তু ধান ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষ খাবে কি? খাদ্য পাবে কোথায়? আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ডিজিএম,এজিএম ও জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলেছি।সকলে আশাস্ত করেছেন দুই-একদিনের মধ্যে বিদ্যুতের পরিবর্তন হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট সেখানে আছে ১২ হাজার মেগাওয়াট। সেখানে বাসাইলে তিন-চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না। সেখানে যদি বিদ্যুৎ সঠিক ব্যবহার হয় ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাবে। কেন পাচ্ছি না, যারা জেনারেশন করে তারা যদি এক কেন্দ্রিক করে কৃষককে মারে শহরের মানুষকে বাঁচাবে এটা তো হয় না। প্রয়োজন মতে এই ১৫ দিন শহরে বিদ্যুৎ কমিয়ে দিয়ে হলেও কৃষককে বিদ্যুৎ দিতে হবে। আমার ধান বাঁচাতে হবে, মানুষ বাঁচাতে হবে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। দেশ বাঁচলে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সুধীর হবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন এই সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। এই সময়ে ১৫ দিনের ঘাটতিতে যদি কৃষক মরে যায়, ধানের উৎপাদন না হয়, অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যারা বিদ্যুৎ জেনারেশন করেন, যারা বিদ্যুতের ব্যবহার করেন তাদের কাছে অনুরোধ করব যে আমার বাসাইলে কৃষক বাঁচানোর জন্য ফসলি জমি বাঁচানোর জন্য বিদ্যুতের যে সমস্যা রয়েছে তা দূর করা। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করছি। আর যদি বিদ্যুৎ দুই-একদিনের মধ্যে ঠিক না হয় তাহলে কৃষক রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে, সেক্ষেত্রে আমরাও তাদের পাশে থাকতে বাধ্য হবো। কারণ বাসাইলের মানুষকে বাঁচাতে হবে, মাটিকে বাঁচাতে হবে, ফসলকে বাঁচাতে হবে।

সংবাদটি প্রথম প্রকাশিত হয় বার্তা ২৪-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *